কাটোয়া কলেজে ছাত্র পরিষদ ও রানিগঞ্জ গার্লস কলেজে এসএফআই ছাত্র সংসদে ক্ষমতা ধরে রাখল। জেলার বাকি ২৮টি কলেজে ছাত্র সংসদের ক্ষমতা টিএমসিপি-র হাতে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মনোনয়ন-পর্বের পরেই। কিন্তু যে দুই কলেজে ভোট হল, দু’জায়গাতেই হার হল টিএমসিপি-র। রানিগঞ্জ গার্লস কলেজে হারের কারণ প্রসঙ্গে সংগঠনের জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। কাটোয়া কলেজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “সমস্ত আসনের ফল হাতে আসার পরে আমরা বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখব।” |
রানিগঞ্জ গার্লস কলেজে এর আগেও ছাত্র সংসদ ছিল এসএফআইয়ের দখলে। এ বার সেখানে ২৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে কেউ প্রার্থী দিতে পারেনি। ৬টিতে টিএমসিপি এবং ৫টিতে এসএফআই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। এ দিন বাকি ১২টি আসনের মধ্যে এসএফআই ৮টি এবং টিএমসিপি ৩টিতে জেতে। একটি আসনে ‘টাই’ হয়। এই আসনটিতে বুধবার ফের ভোট হবে বলে জানা গিয়েছে। এই কলেজে জয়ের পরে এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সুব্রত সিদ্ধান্তের দাবি, “এর থেকে প্রমাণ হল, অবাধ ভোট হলে টিএমসিপি-র হার নিশ্চিত। সন্ত্রাস করে ছয় প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য না করলে আমাদের আসন আরও বাড়ত।” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অশোকবাবুর পাল্টা দাবি, “আমরা এই কলেজের জন্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগের অনুরোধ করেছিলাম। তা না হওয়ায় এমন ফল হল।” |
|
|
ভোট চলাকালীন কাটোয়ায় হাজির
তৃণমূল
জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ। |
রানিগঞ্জ গার্লস কলেজে তখন
চলছে ভোটগণনা। —নিজস্ব চিত্র। |
|
কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও পক্ষপাতের কথা মানেননি।
খনি-শিল্পাঞ্চলের অন্যত্র তাদের ছাত্র সংগঠন কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলেও এই কলেজের জয়ে খুশি সিপিএম। দলের রানিগঞ্জ জোনাল সম্পাদক রুনু দত্তের দাবি, “রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা যে মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে তা এই গার্লস কলেজের ভোটে প্রমাণ হল। অবাধ ভোট হলেই তৃণমূল এবং টিএমসিপি হারবে।” রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির পাল্টা বক্তব্য, “২০১১ সাল পর্যন্ত এই কলেজে ভোটই হত না। কলেজ ভোটের ফল দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না। তবে এ বার ভোট হওয়ায় এটুকু প্রমাণ হল, এখন রাজ্যে গণতন্ত্র রয়েছে।”
কাটোয়া কলেজের ভোট উপলক্ষে এ দিন এলাকায় হাজির ছিলেন তৃণমূলের বেশ কিছু বিধায়ক। কলেজ থেকে কিছুটা দূরে পুরসভা মোড়ে একটি টুলে বসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ধমানের (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ। টিএমসিপি-র শিবিরে ছিলেন পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ও কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। এ ছাড়াও পূর্বস্থলী, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের তৃণমূলের প্রচুর নেতা-কর্মীকে সকাল থেকে কলেজ চত্বরে থাকতে দেখা যায়। ফল বেরনোর আগে স্বপনবাবু বলে যান, “আমি কাটোয়ায় পশু হাসপাতাল দেখতে যাব। সেখানে যাওয়ার আগে কলেজ ভোট নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এ বার আমাদের ফল বেশ ভাল হবে।”
এই প্রথম কাটোয়া কলেজের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল টিএমসিপি। গত বার তারা ২৮টি আসনে লড়েছিল। এ দিন বিকেলে ফল বেরোলে দেখা যায়, ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে জিতে ছাত্র পরিষদ ৩১ বারের মত কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করেছে। বিকম তৃতীয় বর্ষের একটি আসনে ‘টাই’ হয়েছে। ফল প্রকাশের পরে স্বপনবাবুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “সভায় ব্যস্ত আছি। পরে ফোন করুন।” টিএমসিপি-র এক নেতার আক্ষেপ, “এ বার এখানে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছিলাম। গাড়ি করে গ্রামীণ কাটোয়া, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম থেকে ভোটারদের এনেছিলাম। ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারাও সকলে আমাদের ভোট দেয়নি।”
কাটোয়া কলেজ ভোট প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি-র মধ্যে বারবার গোলমাল হয়েছে। তার জেরে ক্লাসও বন্ধ ছিল কিছুদিন। কলেজের সংঘর্ষ ঠেকাতে সিসিটিভি বসাতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। কলেজ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন ভোট পড়ে ৪৭.১৪ শতাংশ। ভোটকে কেন্দ্র করে এক জন এএসপি, পাঁচ জন করে ডিএসপি ও ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসার-সহ ২০০ জন পুলিশকর্মী ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল। জয়ের পরে কাটোয়া মহকুমা ছাত্র পরিষদের নেতা শেখ সোলেমান বলেন, “সারা বছর ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার জন্য তাঁদের আশীর্বাদ পেয়েছি।” |
কাটোয়া কলেজে ছাত্র পরিষদের বিজয়োৎসব। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা জেলায়
ভোট ছিল দু’টি কলেজে। মঙ্গলবার সেই দুই কলেজেই পরাজিত হল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। |
এ দিন আসানসোল মহিলা কলেজে দু’টি আসনে টিএমসিপি-র সঙ্গে ডিএসও-র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এই কলেজে বাকি ৬৬টি আসনের সব ক’টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি। রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ ও আসানসোল মহিলা কলেজ তো বটেই, খনি-শিল্পাঞ্চলের যে সব কলেজে ভোট হয়নি, সেখানেও এ দিন পুলিশি প্রহরা দেখা গিয়েছে। নানা কলেজে প্রার্থী না দিতে পারার কারণ হিসেবে ‘সন্ত্রাস’কেই দায়ী করেছে এসএফআই। সংগঠনের জেলা কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর দে অভিযোগ করেন, টিএমসিপি-র বহিরাগতদের বাধায় তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেননি। কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা অনেক কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। অভিযোগ উড়িয়ে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অশোকবাবু বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা কেউ ওদের সঙ্গে নেই। তাই এতগুলি কলেজে প্রার্থী দিতে পারেনি ওরা।” |