বেশি নেশা আর রোজগারের ঝোঁকে যোগ মাদক পাচারে
বেসরকারি এক সংস্থার অফিসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন বছর আঠাশের কবিরুল ইসলাম। এক বন্ধুর সাহাচর্যে এসে মাদক নেওয়া শুরু করেন। রোজগারের সমস্ত টাকাই খরচ করতে থাকেন মাদকে। ফিরতেন না বাড়িতেও। দুই সন্তানকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁর স্ত্রী। আস্তে আস্তে শরীর খারাপ হতে শুরু করে ওই যুবকের। এখন একেবারে শয্যাশায়ী।
স্কুলে পড়ার সময়ে কয়েক জন সঙ্গী জুটেছিল রাহুল রায়ের। তাদের হাত ধরেই মাদকের নেশা করা শুরু। খরচ জোগাতে বাড়ি থেকে মা-দিদির গয়না চুরি। কখনও আবার মোবাইল বা কম্পিউটারের নানা জিনিস বিক্রি করে দিতে থাকে সে। শেষে বাড়ি থেকে কোনও জিনিস চুরি বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গীদের সঙ্গে বাইরেই ছোটখাট চুরি করতে থাকে। মাদকের প্রভাবে শরীর খারাপ হতে থাকে। শেষে বাড়ির লোকজন তাঁকে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসার জন্য এক সময়ে বেঙ্গালুরুও নিয়ে যেতে হয়। এখন বছর চব্বিশের ওই যুবক চিকিৎসাধীন।
খনি-শিল্পাঞ্চলে এ ভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার তালিকা বেশ দীর্ঘ। কোথা থেকে, কী ভাবে আসে এই সব মাদকদ্রব্য, জানা যায় এক সময়ে আসক্ত হয়ে পড়া কয়েক জনের সঙ্গে কথা বললেই। বছরখানেক আগে এ-জোনের হর্ষবর্ধন এলাকায় একটি ফাঁকা আবাসনে মাদক নেওয়ার সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জনা তিনেক। পালিয়ে যায় এক জন। পুলিশ ধৃতদের থেকে জেনেছে, প্রথম দিকে মাদক নিতে শুরু করা অনেকে পরে টাকা রোজগার ও বেশি নেশা করার ঝোঁকে পাচারের কাজেও জড়িয়ে পড়ে।
এক সময়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদক দ্রব্য তাঁরা নিয়ে আসতেন দুর্গাপুর, বর্ধমান বা কখনও কখনও পানাগড় স্টেশন এলাকা থেকে। রাহুলের দাবি, মুর্শিদাবাদ থেকে কুরবান নামে এক ব্যক্তি বর্ধমান স্টেশন চত্বরে এক মহিলার কাছে পৌঁছে দেয় মাদকদ্রব্য। কাটোয়া থেকেও কুমার নামে এক জন এই মহিলার কাছে মাদক সরবরাহ করে থাকে। এই মহিলা আবার জলট্যাঙ্কের আশপাশে তা পৌঁছয়। বর্ধমান থেকে দুর্গাপুরে মাদক নিয়ে আসে শহরের রঘুনাথপুর এলাকার এক যুবক। তার মাধ্যমেই তা শহরে ছড়িয়ে পড়ে বলে অতীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া কয়েক জনের কাছে জানা গিয়েছে। নানা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মাদকদ্রব্য নয়, কাফ সিরাপ বা ঘুমের ওষুধ খেয়েও অনেকে নেশা করে। এক পানের দোকানদার জানান, শহরে অনেকে চকোলেট কেনেন শুধু সেটির ভিতরের মোড়কটি দিয়ে নেশা করতে সুবিধা হয় বলে।
দুর্গাপুরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মহেশ কুমার জানান, গত এক বছরে তিনি প্রায় ৩৫ জন এ রকম মাদকাসক্তের চিকিৎসা করেছেন। এখনও কয়েক জনের চিকিৎসা করছেন। তিনি বলেন, “যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন তাঁদের সকলেরই বয়স প্রায় ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অনেকে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আসেন, তবে বেশির ভাগই আসেন বন্ধুদের সঙ্গে।” পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “আমাদের কাছে যা খবর রয়েছে, দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে যে মাদকদ্রব্য আসে তা পরিমাণে সামান্য। ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারও হয় না। বছরখানেক আগে আসানসোল স্টেশনের কাছে এক ব্যক্তির কাছে বেশ কিছু মাদক ধরা হয়েছিল। দুর্গাপুর কোকওভেন থানা এলাকায় একটা নেশামুক্ত ক্লিনিক করার পরিকল্পনা করেছি। শীঘ্রই তা চালু করা হবে।”
এই নেশায় আসক্ত হয়ে জীবনের মূল্যবান অনেকটা সময় নষ্ট করার খেদ কাজ করে রাহুল, কবিরুলদের মধ্যেও। তাঁরা বলেন, “বদ সঙ্গে পড়ে ওই পরিস্থিতির মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। পরিবার ও বন্ধুদের সাহায্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগছে।”

(মাদকাসক্তদের নাম পরিবর্তিত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.