বল খেলার সময়ে একটি ছুঁচলো রডের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল বছর ছয়েকের ছেলেটি। তার গলা এ ফোঁড়-ও ফোঁড় হয়ে যায়। গুরুতর জখম হয় শ্বাসনালী। জটিল অস্ত্রোপচার করে বালকটির শ্বাসনালীর ক্ষত সারালেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। যেখানে পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সামান্য অসুখে কলকাতায় রেফার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা হাসপাতালগুলির চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে, সেখানে এমন নজিরের প্রশংসা করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। |
হাসপাতালে রাজকুমার মুর্মু। ছবি: শৈলেন সরকার। |
মঙ্গলবার আসানসোল হাসপাতালে বসে পুরুলিয়ার কাশীপুর লাগোয়া কাপিষ্ঠা গ্রামের বাসিন্দা সুমাই মুর্মু জানান, তাঁর ছেলে, প্রথম শ্রেণির ছাত্র রাজকুমার এ দিন সকালে বাড়ির পাশের উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। সেখানে একটি রড ছিল। খেলতে খেলতে সে ওই রডের উপরে পড়ে। তার গলা ভেদ করে যায় রডটি। বাড়ির লোকেরা সেটি টেনে বের করে প্রথমে রাজকুমারকে নিয়ে যান গ্রামের হারমাড্ডি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা দেখেশুনে জানান, তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। সুমাই মুর্মু বলেন, “এ কথা শুনে আমি অথৈ জলে পড়েছিলাম। অনেকে বললেন, কলকাতা নিয়ে না গেলে ছেলে বাঁচবে না। কিন্তু সে সাধ্য আমার নেই। বহু কষ্টে আসানসোল হাসপাতালে আসি। এখানের ডাক্তারবাবুরা ছেলেকে নতুন জীবন দিলেন।”
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক পরীক্ষা করার পরেই শল্য চিকিৎসক সৈকত বসু জানান, বালকটির শ্বাসনালী গুরুতর জখম হয়েছে। অস্ত্রোপচার না করলে তাকে বাঁচানো মুশকিল। ওই পরিবার অন্য কোথাও যেতে পারবে না জেনে এখানেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়। হাসপাতালের সুপার নিখিল দাসের দাবি, “আমাদের হাসপাতালের পরিকাঠামো মহানগরের হাসপাতালগুলির তুলনায় নগণ্য। তা সত্ত্বেও ছেলেটির অস্ত্রোপচার করে তার শ্বাসনালির ক্ষত সারিয়ে চিকিৎসকেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”
অস্ত্রোপচারের পরে হাঁফ ছেড়েছেন রাজকুমারের মা সুখি মুর্মু। তিনি জানান, গ্রামের হাসপাতালে কিছু করা যাবে না শুনে ছেলের বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলির ইএনটি চিকিৎসকেরা জানান, এমন অস্ত্রোপচার কলকাতায় হামেশাই হয়। আর তার বেশির ভাগই আসেন জেলা থেকে রেফার করার পরে। জেলার চিকিৎসকেরা এমন চ্যালেঞ্জ নিলে কলকাতায় উপচে পড়া রোগীর ভিড় অনেকটাই কমানো যাবে বলে তাঁদের আশা। |