|
|
|
|
যতই ঘুড়ি ওড়াও লাটাই তো আমার হাতে |
গত সপ্তাহে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে দশ বছর পূর্ণ করলেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কিন্তু লাটাই কি এখনও তাঁরই হাতে? কথা বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় |
বাঙালির ড্রয়িংরুম থেকে ডান্স ফ্লোর এখন যার রকিং সুরে ভরপুর সেই জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কপালে লাল টিপ পরা... কেন? লাল টিপটা মা সরস্বতীকে স্মরণ করেই। আমি রকস্টার। রোজ পরি। স্টেজে কিন্তু আমার গানের যে চরিত্র, তার মধ্যে ঢুকে যাই। স্টেজের আমি আর স্টেজের বাইরের আমি দু’টো আলাদা মানুষ।
বৌয়ের হাতে আপনার মোবাইল। সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বৌকে সঙ্গে নিয়ে! আপনার বৌ কি আপনার পি.আর? আমার বৌ চন্দ্রাণী ছাড়া আমি আর অন্য কিছু ভাবতে পারি না।
ছাত্র পড়িয়ে আমার জন্যে, আমার গানের জন্যে যে সময় বার করতে পারে, এটাই অনেক। ওর উৎসাহ ছাড়া আমি এত দূর আসতে পারতাম না।
কিন্তু এমন বৌ-পাগল হলে মহিলা ফ্যানেদের মধ্যে আপনার জনপ্রিয়তা তো কমে যাবে?
দেখুন, কোনও সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আলাপ হলেও তার নামই মনে রাখতে পারি না। চন্দ্রাণীও এ নিয়ে আমায় বকাবকি করে বলে আমার প্রেম হবে না। আসলে আমি খুব ভুলে যাই।
ভুলো মন বলেই কি প্রীতমের সঙ্গে যে বিরোধ ছিল সেটা ভুলে ওর কম্পোজিশন ভাল লাগলে ওকে এসএমএস করে জানান? দেখুন, প্রীতমের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। আমরা কোনও দিনই ভাবিনি একসঙ্গে কাজ করব। আমার কোনও কম্পোজিশন শুনে ভাল লাগলে ও-ও আমাকে জানায়।
কিন্তু ‘আর রাজকুমার’ ছবিতে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তুরুপের তাস মিকা সিংহ-কে দিয়ে প্রীতম যখন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গানের আদলেই ‘শাড়ি কে ফল সা’-র মতো ফ্লেভার, আর একই বিট দিয়ে গান গাওয়ালেন, আপনার খারাপ লাগেনি? নাহ্, খারাপ কেন লাগবে? মানুষের তো ভাল লেগেছে... |
|
কিন্তু আমি তো আপনার কথা জানতে চাইছি.. দেখুন, প্রীতম ছবিতে সিক্স-এইটছন্দ ব্যবহার করেছে ছবির চাহিদাঅনুযায়ী।
সেটা করতে হয়েছে। গানটা যদিও পুরোটা শুনিনি আমি, তবে একটা কথা বলা যায়। একই প্যাটার্ন প্রীতম না-ও ব্যবহার করতে পারত। সঙ্গীত পরিচালকের মৌলিকত্ব থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু প্রীতম যেমন মিকাকে দিয়ে গাওয়ালেন, তেমনই আপনিও তো অরিজিৎ সিংহ-কে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের লবি থেকে হাইজ্যাক করলেন। তাই না? আমি কোনও ধরনের লবি-বাজিতে বিশ্বাস করি না। ছবির খাতিরে যার যাকে ইচ্ছে হবে গাওয়াবে। আর শুধু তো অরিজিৎ নয়। যারা হয়তো সরাসরি গানের জগতে ছিলই না, আমি তাদেরও ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে এসেছি।
যেমন? কয়েকটা নাম বলুন... মুম্বইতে মোহিত চহ্বাণ, মিকা সিংহ, বেণী দয়াল। আসল কথা হল কোন গানে কাকে ব্যবহার করব? গানটার জন্ম কে দেবে? সেই কারণেই ‘মন মাঝি রে’ অরিজিৎ-কে দিয়ে গাওয়ালাম।
কিন্তু অরিজিৎ সিংহকে দিয়ে রক গান কেন গাওয়ালেন না? ওঁর কণ্ঠে হিন্দি ‘বস’য়ে তো ‘হর কিসিকো নেহি মিলতা’ সুপার হিট! অরিজিৎ খুবই ট্যালেন্টেড। তবে ওকে দিয়ে আমি সফ্ট গান গাওয়াতেই এখন পছন্দ করছি। একই অ্যালবামের গান ‘ও মধু’ বেণী দয়ালকে দিয়েছিলাম। আর ‘কী করে তোকে বলব’ ওকে দিয়ে গাইয়েছিলাম। দু’টোই তো সুপার হিট! পরে অন্য কোনও প্যাটার্নের গান নিশ্চয়ই গাওয়াব।
আইটেম সং-য়ের মধ্যে ‘শরারা শরারা’-র পরে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আর কোনও হিট গান নেই কেন? আইটেম সং বলে আলাদা করে আমি কিছু ভাবি না। সবই ডান্স নাম্বার। মেয়ে নাচলেই সেটা আইটেম নাম্বার, আর ছেলে টি-শার্ট খুলে নাচলে সেটা আইটেম নয়?
‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ’, ‘পাগলু ডান্স’-ও তাই আমার ডান্স নাম্বার। তবে জিৎ-য়ের ‘বচ্চন’ ছবিতে শুভশ্রীর লিপে একটা দারুণ ডান্স নাম্বার আসছে। ‘যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার হাতে’...
কিন্তু নিউ এজ বাংলা ছবিতে গানের লাটাইটা আপনার হাতে নেই কেন? সৃজিত বা কমলেশ্বর তো আপনাকে ডাকেন না? আমি তো চাই ওঁরা আমায় ডাকুন। বোধহয় পিআরটা ঠিক করে উঠতে পারছি না। কিন্তু ‘একলা আকাশ’-এ আমি অন্য রকম কাজ করেছি। আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘বাপি বাড়ি যা’-তে আমায় দারুণ সুযোগ দিয়েছিলেন। আমিই তো জোর করে অর্পিতাকে দিয়ে গাইয়েছি।
কিন্তু এখনও তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নায়কের লিপে আপনার গান নেই। আফসোস হয় না? আফসোস হয় প্রসেনজিতের লিপে আমার গান নেই। তবে আমি আশাবাদী। সৃজিত থেকে বুম্বাদা ওঁদের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই।
দেব-এর লিপে আপনার একের পর এক হিট গান। দেবের জায়গায় অন্য কোনও নায়ক এলেও কি এতটা জনপ্রিয়তা পেতেন? আসলে কিছু কিছু জিনিস ক্লিক করে যায়। দেব আর আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে শুধু তো দেব নয়। জিৎ, সোহম সকলের সঙ্গেই আমার গান জনপ্রিয় হয়েছে।
কিন্তু বুদ্ধিজীবী বাঙালিরা কী করে বলেন মনে হয় আপনার? তাঁরা কি আপনার গান শোনেন? অবশ্যই। কলকাতার পশ এলাকায় অনুষ্ঠান করে দেখেছি লোকে ‘ভজ গৌরাঙ্গ’ শুনতে চাইছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমী বাঙালির রিংটোনেও আমার গান বাজছে।
রাঘব চট্টোপাধ্যায় একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালিদের দিয়ে বাংলা গান না গাইয়ে মুম্বইয়ের আর্টিস্টদের দিয়ে যে কেন গাওয়ান? আমি রাঘবকে দিয়েও কাজ করিয়েছি। তবে গানের মেলোডি আমার কাছে সবার আগে। কুনাল গাঞ্জাওয়ালাকে দিয়ে যখন ‘যেদিন দেখা হয়েছিল’ গাওয়ালাম, তখন ওর গলার আবেগটাকে কাজে লাগালাম যেটা অন্য কোনও বাঙালি গায়কের মধ্যে তখন আমি পাইনি। গানের ক্ষেত্রে ভাষাটা কোনও ফ্যাক্টর নয়।
ভাষা না হলেও এখন গানের ক্ষেত্রে তো সফ্টওয়্যার একটা বড় ফ্যাক্টর। বিশেষ করে বেসুরো গায়কদের ক্ষেত্রে? নয়তো সোনু নিগমের চেয়ে আতিফ আসলাম-এর বাজার ভাল কী করে হয়? এখন গান মানে গান নয়, রিংটোন। মুহূর্তের গান। কেবল বিট দিয়ে, সফ্টওয়্যারের সাহায্যে কিছু গান হিট হয়েও যাচ্ছে। তবে সেগুলো কিছু দিনের জন্য। সোনু নিগম হাজার বছরের শিল্পী। ওঁর গান হারাবে না।
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সোনু নিগমকে কত নম্বরে রাখবেন? এক নম্বরে।
আর গায়িকা হিসেবে আপনার মতে এখন এক নম্বর কে? মোনালি ঠাকুরও সোনুর মতো যে কোনও ধারার গান অনায়াসে গাইতে পারে।
বাংলায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাদের কাজ ভাল লাগছে? প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওর কাজের একটা অন্য ধারা আছে। শান্তনু মৈত্রর কাজও খুব ভাল।
আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত? ওঁর কাজ খুব একটা শুনিনি।
জাতিস্মর-য়ের গান শুনেছেন? হ্যা।ঁ ভাল লেগেছে। কবীর সুমন, নচিকেতা, এঁদের আমি ভক্ত। এঁদের গান শুনেই তো বড় হয়েছি। মনোময়ের গানও খুব ভাল লাগছে এখন।
বাংলায় প্রিয় গায়ক-গায়িকা কারা? রাশিদ খান আর অজয় চক্রবর্তী। এ ছাড়াও রূপঙ্কর, অনুপম, লোপামুদ্রা, শুভমিতা এঁদের গানও ভাল লাগে।
এত প্রিয় গায়ক-গায়িকা থাকা সত্ত্বেও নিজের ভাল গানগুলো তো আপনি নিজেই গেয়ে ফেলেন। তা হলে নিজের একক অ্যালবাম করার কথা ভাবেন না কেন? আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগটা এসেই যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে আমি সোলো অ্যালবাম করার কথা ভাবছি। কিন্তু যখনই কোনও গান তৈরি করি, জিৎ, দেব আর সোহমকে শুনিয়ে দিই। আর ওরা ওদের ছবিতে গানগুলো নিয়ে নেয়। এ বছর অবশ্যই সোলো অ্যালবাম করছি। কথা দিলাম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোনাবেন আপনার নতুন সোলো অ্যালবাম? হ্যাঁ নিশ্চয়ই। উনি নিজেও একজন শিল্পী। গান লেখেন, আমাকে খুব উৎসাহ দেন। আর সত্যি কথা বলতে দ্বিধা নেই, শিল্পীদের কী ভাবে সম্মান করতে হয়, সেটা উনি দেখিয়ে দিয়েছেন।
রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে আছে? না, ওটা হবে না আমার দ্বারা।
আপনার দশ বছরের সঙ্গীত জীবনে গায়ক না সঙ্গীত পরিচালক কোন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে আপনি এগিয়ে রাখবেন? অবশ্যই সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
এমন অনেক বার হয়েছে, নিজের গান রেকর্ড করে মুছে দিয়েছি।
কোন গান? ‘পাগলু থোড়া সা করলে রোম্যান্স’ গানটায় প্রথম মিকাকে নিয়ে এলাম। ও যে ভাবে ‘পাগলু’ বলে টান দিতে পারে, সেটা আমি পারব না। ওর ওই অ্যাকসেন্টটাই এত জনপ্রিয়তা এনে দিল। আসলে কম্পোজার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আমার মন জুড়ে আছে। |
|
|
|
|
|