|
|
|
|
মাঝরাতে আক্রান্ত হতে পারেন আপনিও |
রূপা গঙ্গোপাধ্যায়-এর ঠিক যেমন হয়েছিল। রোববার রাতে হঠাৎ করে আবিষ্কার
করেছেন তাঁর যাবতীয় মেল হ্যাক হয়ে গিয়েছে। শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
রাত তখন বারোটার কাছাকাছি।
ফোনটা চার্জে দিয়ে, ঘুমোতে যাবেন ঠিক করেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
কিন্তু নোটিফিকেশনের দিকে তাকাতে শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল অভিনেত্রীর।
তিন তিনটে মেসেজ। ‘আপনার পাসওয়ার্ড বদলে গেছে’, ‘জি-মেলের সিকিওরিটি প্রশ্ন বদলানো হল’, ‘আপনার রেজিস্টার করা ফোন নম্বর বদলানো হল’।
বুঝতে সময় লাগল না, হ্যাক করা হয়েছে তাঁর জি মেল অ্যাকাউন্ট। “মেসেজ তিনটে পেয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, কী করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না। খবরে পড়েছি লোকজনের অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়। কিন্তু নিজে যখন এমন পরিস্থিতিতে পড়লাম, ঠিক করতে পারছিলাম না পরের স্টেপটা কী নেব। মাথা পুরো ফাঁকা লাগছিল,” বলছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য ঠিক করে নেন, এরপর কী কী করতে হবে। টেলিফোনের অন্য দিকে থেকেও তা দিব্যি টের পাওয়া যায়।
আর এই মেল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চুরি হওয়ায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু একা নন। গত বছর ডিসেম্বরেই এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে কুড়ি লাখ ফেসবুক আর গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। দু’বছর আগে সাইবার আক্রমণের শিকার ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। সে তালিকায় ছিল খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে অনেক উল্টোপাল্টা মেসেজ পোস্ট করা হয়। এমনকী হ্যাকড হয় গোয়েন্দা বিভাগের ওয়েবসাইট-ও।
তা হলে সাধারণ মানুষের কী হবে? অনেকেরই তো এখন হাতের মুঠোয় স্মার্টফোন। আর তা দিয়েই চলছে ব্যাঙ্ক থেকে বাজার করা। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে তো টাকাপয়সা সব গেল। |
|
সাইবার ক্রাইমের সর্বশেষ শিকার |
গেটে দারোয়ান। দরজায় শক্তপোক্ত অ্যালয় প্যাডলক। বাড়ি তো নিরাপদ হল।
কিন্তু নেটজগতে নিরাপত্তা? সেখানে দিন-রাত পাহারা কে দেবে? অ্যান্টি-ভাইরাস সফ্টওয়্যার, আলফা-নিউমেরিক্যাল পাসওয়ার্ড বিশ্বজোড়া সাইবার জালে এ সব এখন তালপাতার সেপাই। “জি মেল হ্যাকড হওয়ার পরের দিন দেখি বাড়ির সব কম্পিউটার থেকেই রেজিস্টার্ড অ্যান্টি ম্যালওয়ার সফ্টওয়ারটাও আন-ইন্সটলড হয়ে গেছে। এখন তো সব কাজকর্মই ইন্টারনেট মারফত হয়। ব্যাঙ্কিং থেকে শুরু করে কেনাকাটা। আপাতত অনলাইনে সব কাজকর্ম বন্ধ রেখেছি। মোবাইলের ডেটা নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছি। কম্পিউটারগুলো ফরম্যাট করে তারপর আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করব। ভাবতেই পারছি না আমার অ্যাকাউন্ট কেন হ্যাকড হবে?” বলছিলেন রূপা।
কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের মতে এই ‘ভাবতেই না-পারা’ হ্যাকারদের কাজ আরও সহজ করে দিচ্ছে। ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট হ্যাক হওয়াটা খুব কমন। ফেসবুকের মূলধন তো সাধারণ জনগণ। বিজ্ঞাপন থেকেই তো আয় হয় তাদের, তা হলে সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবে না কেন? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তাই। একবার ব্যাঙ্কের তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে এলে, তারা বদলে দিতে পারবে নোটিফিকেশন পাওয়ার ফোন নম্বর। তার পর আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিলেও টের পাবেন না।
তবে কী করবেন? জি মেল-য়ে ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ চালু রাখতে হবে। এর ফলে শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড নয়, লগ ইন করতে দরকার হবে মোবাইল ফোনে পাঠানো এসএমএস মারফত পাঠানো পাসওয়ার্ড-ও। আর পাসওয়ার্ড বাছার সময় মনে রাখতে হবে, তা যেন অবশ্যই বেশ লম্বা হয়। অনলাইন গোপনীয়তার ক্ষেত্রে আরেক বাধা জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম। কিন্তু এখানেই সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। জিপিএস দিয়ে আপনার ওপরেও তো কেউ নজরদারি চালাতে পারে। ঠিক যেমন দেখানো হয়েছিল ‘ন্যাশনাল সিকিওরিটি’ বা ‘ট্রু লাইজ’ ছবিতে।
জি মেল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া মানে তো শুধু সেই অ্যাকাউন্টের তথ্য অন্যের হাতে চলে গেল তাই নয়, আপনার যাবতীয় তথ্য (ব্যাঙ্ক, ফোন, ক্রেডিট কার্ড) থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ছবি সবই চলে যাবে হ্যাকারের হাতে। সেই ছবি মর্ফ করে পোস্ট করা হতে পারে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। সেলিব্রিটি হলে তো ভয়টা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি থাকে। রূপা বলছিলেন, “সেটা ভেবেই সব থেকে ভয় লাগছিল। আমার মেল থেকে যদি উল্টো-পাল্টা কোনও মেল আমার পরিচিত কারওকে পাঠিয়ে দেয়? তারপর আমার তোলা ছবিগুলো। সেই ’৯৭ থেকে ডিজিটালিই সব কিছু জমিয়ে রাখি। হার্ড ড্রাইভ জমতে জমতে দেড় টেরাবাইট হয়ে গেছে। ওগুলোতেও যদি ম্যালওয়ার থাকে। এখন সেটা ভেবে বিরক্ত লাগছে।”
কম্পিউটারে যেমন ফায়ারওয়াল-অ্যান্টি ম্যালওয়ার দরকার তেমনই দরকার হ্যাকারকে খোঁজ করা। আর তার জন্য আক্রান্ত হওয়ার পর পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগকে জানানো একান্ত জরুরি। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও সেটাই করেছেন। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে লোক পরের দিন এসেছিলেন বাড়িতে। কোথা থেকে হ্যাক করা হয়েছে, তার জন্য তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। “পুলিশ বলে রেখেছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কম্পিউটার ফরম্যাট না করতে। পুলিশ এখনও কিছু জানায়নি। কবে যে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম করা শুরু হবে, কে জানে?” বললেন রূপা।
এখন তো আমাদের সব কিছুই নির্ভরশীল অনলাইনের ওপর। টেলিফোনের বিল দিতে লাইনে দাঁড়ানো? ধুর ধুর। অনলাইন ট্র্যানজাকশন আছে না! বাজারে গিয়ে কেনাকাটা? আরে পাগল নাকি! অনলাইন শপিং আছে না!
কিন্তু স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে বিপদও তো আছে। কী আর করা যাবে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে তো আর ত্যাগ করা যাবে না। যত দিন না বিকল্প কোনও ব্যবস্থা আসে, প্রতিষেধকের ওপরই ভরসা করতে হবে। |
বাঁচার উপায় |
• ব্রাউজারে ‘রিমেমবার মি’ অপশন বন্ধ করুন। জি মেল-এর ক্ষেত্রে ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ চালু রাখুন
• পাসওয়ার্ড যেন কম করে আট ক্যারেকটারের হয়। ডিকশনারির কোনও শব্দ পাসওয়ার্ড না হয়
• একটা পাসওয়ার্ড একটা মাত্র ক্ষেত্রেই ব্যবহার করুন। ই মেলের পাসওয়ার্ড কখনওই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নয়
• শুধু অ্যান্টি ভাইরাস না, অ্যান্টি ম্যালওয়ারও লাগবে। কি-লগার বা স্পাইওয়ারের জন্য অ্যান্টি ম্যালওয়ার চাই-ই-চাই
• ফাইন্ড মাই আই ফোন, অ্যান্ড্রয়েড লস্ট বা ব্লাকবেরি প্রোটেক্ট-এর মতো সার্ভিস অন করে রাখুন। ফোন হারালে বা চুরি হয়ে গেলেও ব্যক্তিগত তথ্য মুছে দিতে পারবেন
• সম্ভব হলে এমন কোনও কম্পিউটারে ছবি, ভিডিয়ো রাখুন যেটার সঙ্গে অনলাইনের কোনও সম্পর্ক নেই |
|
|
|
|
|
|