পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে সরকারি ছুটির প্রস্তাব উঠতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। গত কয়েক দিন ধরে উত্তরবঙ্গের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পর পঞ্চানন বর্মাকে ঘিরে গোটা বছরের অনুষ্ঠানের জন্য নানা পরিকল্পনা হয়। সোমবার সেই সমস্ত পরিকল্পনাই প্রস্তাবের আকারে নিয়ে কলকাতা গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। এর অন্যতম হল ছুটির প্রস্তাব। গৌতমবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সব দেখার পর পরিকল্পনাগুলি এক এক করে বাস্তবায়িত করা হবে।”
সাত দিন ব্যাপী উত্তরবঙ্গ উৎসবের সমাপ্তির শেষেই পঞ্চানন বর্মার জন্ম সার্ধশতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। ২০ জানুয়ারি সরকারের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে আগামী এক বছর ধরে পঞ্চানন বর্মাকে সামনে রেখে নানা অনুষ্ঠান করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ জুড়ে চলতে থাকা কামতাপুরি আন্দোলনকে ‘নরমে গরমে’ মোকাবিলার জন্যই রাজবংশী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মসূচির ঘোষাণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কেএলও-র মত জঙ্গি সংগঠনকে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতির বিষয়টি গুরুত্ব-সহ বিবেচনার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পঞ্চানন বর্মার জন্মসার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে রাজবংশী সম্প্রদায়কে আরও কাছে পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। এতে উন্নয়নের সঙ্গে কামতাপুরি আন্দোলনও মোকাবিলা করা যাবে। গৌতমবাবু বলেছেন, “পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও কাজ করছে সরকার। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আগামী এক বছরে তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষে নানা অনুষ্ঠান হবে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, ১০টি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। ১ ফাল্গুন ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিন। ইংরেজি হিসাবে তা ১৩ বা ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ওই দিন পঞ্চাননজয়ন্তী পালনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা সংস্কৃতি সামনে রেখে ‘পঞ্চানন বর্মা স্মারক’ পুরস্কার ঘোষণা, স্কুল পর্যায়ে উত্তরবঙ্গের সব জেলা থেকে প্রতি বছর চার জনকে বেছে ‘পঞ্চানন বর্মা মেধা’ পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় প্রতি বছর একটি করে গ্রামকে বাছাই করে ‘মডেল ভিলেজ’ গড়া করে। নাম দেওয়া হবে পঞ্চানন বর্মা গ্রাম। তার পরে রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুতের পরিকাঠামোর কাজ করা হবে।
শিলিগুড়ি শহরে নৌকাঘাটে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার মূর্তি রয়েছে। এই এলাকাটিকে পঞ্চানন স্কোয়্যার ঘোষণা করে এবং সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ মোড় অবধি রাস্তা পঞ্চানন বর্মা সরণি করার কথাও বলা হয়েছে। কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা সংগ্রহশালা সংস্কার করে বাসিন্দাদের জন্য তা খুলে দেওয়া, বাংলাদেশের রংপুরে পঞ্চানন বমার্র স্মৃতি বিজড়িত বাড়িগুলিকে ঐতিহাসিক মর্যাদা দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মালদহে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বছরভর রাজবংশী ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি-সহ নানা বিষয় সামনে রেখে বছরভর আলোচনাসভা, সেমিনারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, কোচবিহারের রাসমেলা মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে। তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন যাতে থাকেন সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে। এক বছরে নানা অনুষ্ঠানের জন্য আপাতত ৬৯ লক্ষ টাকার বাজেট হয়েছে। আগামী বছর শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িকে সামনে রেখে আরও বড় করে উত্তরবঙ্গ উৎসব হবে। কয়েক মাসের মধ্যে সেই আয়োজন শুরু হবে বলেও এ দিন গৌতমবাবু জানান। |