মালদহে সংঘর্ষ, ভোট স্থগিত হল দুই কলেজে
ব্যালট বাক্স লুঠের অভিযোগ থেকে যথেচ্ছ বোমাবাজি। কলেজের ছাত্র ভোট নিয়ে অশান্তি অব্যাহত উত্তরবঙ্গে। সোমবার ছাত্র ভোটকে কেন্দ্র করে মালদহের চাঁচল এবং কালিয়াচক কলেজে শাসক এবং বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ, বোমাবাজি-সহ সিভিক পুলিশের কর্মীদেরও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, এ দিনই উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা শ্রীঅগ্রসেন কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে, নতুন করে নির্বাচন করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
শ্রী অগ্রসেন কলেজ সূত্রে খবর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের বিরুদ্ধে কলেজে মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার সময়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এসএফআইয়ের কয়েকজন সমর্থক। ওই মামলার প্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট এ দিন ওই নির্দেশ দেয়। কলেজ সূত্রে খবর, ওই নির্দেশে কলেজের নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে নতুন করে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়িতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নির্দেশ পেয়েছি। আদালত যা নির্দেশ দেবে তা পালন করা হবে।”

চাঁচল কলেজে জখম এসএফআই।

ছাত্র পরিষদ সমর্থক।

জখম পুলিশকর্মী।
—নিজস্ব চিত্র।
ওই কলেজের ছাত্র সংসদের ২১টি আসনের মধ্যে ছাত্র পরিষদ ৯টি আসনে এবং ১২টি আসনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। এসএফআই-এর অভিযোগ, গত ১৬-১৭ জানুয়ারি মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়ার দিনে টিএমসিপি সমর্থকরা সন্ত্রাস করে তাদের মনোনয়ন তুলতে এবং জমা দিতে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে দু’দিন মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, পরবর্তীতে নোটিশ দিয়ে এক দিন জমা এবং একদিন তোলার দিন ধার্য হয়। যা নিয়ম বিরুদ্ধ বলে এসএফআই সমর্থকরা দাবি করে গত ২২ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এসএফআই এর উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকার বলেন, “আইন মেনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া হয়নি। তাই হাইকোর্টে অভিযোগ জানাই।” যদিও ছাত্র পরিষদের জেলা সদস্য নব্যেন্দু ঘোষ এবং টিএমসিপি-র ডালখোলা শহরের আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “কোথাও কোনও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলব।”
চাঁচল কলেজে অবশ্য নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় ভোট ঘিরে সংঘর্ষের জেরেই। এ দিন সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় কলেজে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ চারটি থানার আইসি কলেজে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ আচমকাই একতলার দুটি বুথে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে কয়েকজন ছাত্র। বুথের ভিতরেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ছিঁড়ে ফেলা হয় ব্যালট পত্র। তারপরে শুরু হয় সংঘর্ষ, এবং ভাঙচুর। পুলিশের লাঠির আঘাতেও দুই ছাত্রের মাথা ফেটে যায়। সে সময়ে লাগোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে ভোটার কার্ড নিতে হাজির ছিলেন বহু বাসিন্দা। সেখানেও চলে ভাঙচুর। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাহুল আমিন বলেন, “কলেজে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্যই নির্বাচন স্থগিত রাখা হল। বিষয়টি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিনের সংঘর্ষে আহত হন কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্র। জখম ৪ ছাত্রকে মালদহে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালালে, সে সময় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এক এএসআই-সহ ৩ পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। ঘটনার পর নির্বাচন বন্ধের দাবিতে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। বিকেলে থানা ঘেরাও করে ব্যালট ছিনতাইয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে ধরনায় বসে ছাত্র পরিষদ। রাতে পুলিশ গোলাম মোস্তাফা নামে কলেজের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রকে গ্রেফতার করে। তিনি কলেজের টিএমসিপির ইউনিট প্রেসিডেন্ট। তবে টিএমসিপির জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “চক্রান্ত করে আমাদের ওই প্রার্থীকে ফাঁসানো হয়েছে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অভিজিত দে-র অভিযোগ, “ব্যালট বাক্স ছিনতাই কারা করেছে তা সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।” উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের অভিযোগ, “টিএমসিপি সমর্থকরা পুলিশের সামনেই ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে বুথে ভাঙচুর চালায়। ছাত্র পরিষদ তাদের বাধা দেওয়ায় উল্টে পুলিশ ছাত্র পরিষদের কর্মীদেরই পিটিয়েছে।” জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “কংগ্রেস-সিপিএমের উস্কানিতে ওদের ছাত্ররাই ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে। এখন মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” ওই কলেজের ২৬ আসনের মধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ২১টি এবং এসএফআই ২০টিতে প্রার্থী দেয়। ৪টি আসনে ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে।

চাঁচল কলেজের বিক্ষোভে ছাত্র পরিষদ।

ছাত্রভোটকে ঘিরে দিনভরই চলে সংঘর্ষ।

এই ঘর থেকেই ব্যালট বাক্স লুঠ করে ব্যালট পেপার ছেঁড়া হয় বলে অভিযোগ।
সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন বাপি মজুমদার।
কালিয়াচক কলেজেও পুলিশের সামনেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের সঙ্গে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষ একে অপরকে লক্ষ করে যথেচ্ছ বোমা ও গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অন্তত ২০০ রাউন্ডর বেশি গুলি চলেছে। একশোরও বেশি বোমা পড়েছে। সোমবার দুপুর দেড়টার পরে সুলতানগঞ্জে কালিয়াচক কলেজে গোলমাল শুরু হয়। বোমার আঘাতে জখম হন কালিয়াচক ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান জামিল শেখ। পুলিশ গিয়ে শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়।” তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে এসএফআই ও ছাত্র পরিষদের শিবির ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “এসএফআই ও ছাত্র পরিষদ যৌথভাবে পরিকল্পনা করে আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপর প্রথম বোমা, গুলি নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমাদের সর্মথকরা প্রতিরোধ করেছে।” যদিও, ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বহিরাগত গুন্ডাদের নিয়ে পুলিশের সামনেই আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপরে যথেচ্ছ বোমা ও গুলি চালিয়েছে।” একই অভিযোগ করে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দে বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে টিএমসিপি আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.