পুলিশ ফেল, মন্ত্রীর ফোনে অবশেষে রাজি হল ট্যাক্সি
ট্যাক্সিচালক প্রত্যাখ্যান করলে বা মর্জিমতো ভাড়া হাঁকলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাহায্য নিন। ট্যাক্সিচালকদের ‘দাদাগিরি’ রুখতে এমন দাওয়াইয়ের কথাই বারংবারই বলছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু এ শহরের ট্যাক্সিচালকেরা কি সত্যিই পুলিশকে ভয় পান? নাকি তাঁদের সামনে খোদ পুলিশও কার্যত অসহায়?
দিন কয়েক আগে সন্ধ্যায় সস্ত্রীক ডানলপ থেকে ডানকুনি ফেরার সময়ে ট্যাক্সি ধরতে গিয়ে এমনই এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল। এক পুলিশ অফিসার নিজে এক ট্যাক্সিচালককে ডানকুনি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তাঁর কথাকে থোড়াই কেয়ার করে যাত্রী প্রত্যাখ্যান করে চললেন চালক। শেষে ওই চালকই বাধ্য হলেন ট্যাক্সি নিয়ে ডানকুনি যেতে। কিন্তু তার জন্য হস্তক্ষেপ করতে হল খোদ পরিবহণমন্ত্রীকে। প্রশ্ন তবু রয়েই গেল, মন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না যাঁরা, তাঁদের হয়রানি কি চলতেই থাকবে?
কী ঘটেছিল সেই সন্ধ্যায়? ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা সাতটা। বাগবাজার থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে ডানলপ এলাম। চালক মিটার থেকে ছাপানো বিল বার করে দিলেন। সকালে যে ট্যাক্সিতে ডানকুনি থেকে বাগবাজার গিয়েছি, তা থেকেও ছাপানো বিল পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, যাক্! পরিবহণমন্ত্রীর কড়া দাওয়াইয়ে তবে ট্যাক্সি-চালকদের একটু সুবুদ্ধি হয়েছে!
কিছুক্ষণেই সে ভুল ভাঙল। ফিরতি পথে আবার ডানলপ মোড়ে গিয়ে দেখলাম, বেশ কয়েকটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘ডানকুনি চণ্ডীতলা যাব। কে যাবেন?’’ প্রশ্নটা শুনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন চালকেরা। ফের একই প্রশ্ন করলাম। এক চালক বললেন, ‘‘আমার গ্যারাজ করা হয়ে গিয়েছে।’’ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে। তা সত্ত্বেও চালকের এমন জবাব শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
কিছুটা বাদানুবাদের পরে রোগাপাতলা এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘দাদা, ট্যাক্সি যাবে। তবে চণ্ডীতলার জন্য ২৭০ টাকা দিতে হবে।’’ বলে কী লোকটা? সকালেই ডানকুনি থেকে বাগবাজার গিয়েছি। ভাড়া হয়েছিল ১৮০ টাকা।
সে কথা জানাতেই তিনি এবং অন্য চালকেরা রীতিমতো সুর চড়িয়ে বলতে থাকলেন, “এক টাকাও কমবে না। যেতে হলে চলুন, না হলে সামনে যান।” স্থানীয় ডানলপ ট্রাফিক গার্ডের বড়বাবুকে ফোন করে বিষয়টি জানালাম। শোনামাত্রই তিনি উর্দি পড়া এক অফিসারকে পাঠালেন আমার কাছে। ‘‘বড়বাবুর লোক। ওঁকে নিয়ে যাও।’’ প্রথম বার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন ওই অফিসার। তখন চলল অনুরোধের পালা। তাতেও কাজ হল না।
পুলিশ অফিসারের এমন করুণ অবস্থা দেখে ভাবছিলাম, পুলিশেরই যখন এই দশা হয়, তখন সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে না জানি কী ব্যবহার করেন ট্যাক্সিচালকেরা!
স্ট্যান্ডের সেই রোগাপাতলা ভদ্রলোক তখনও তড়পাচ্ছেন, “মদনদা আমাদের নেতা।’’ মদনদা, অর্থাৎ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ফোন করলাম তাঁকে। তিনি বিষয়টা শুনে ফোনটা দিতে বললেন সামনে থাকা পুলিশ অফিসারকে। ফোনটা স্পিকারে দেওয়া থাকায় শোনা গেল, মদনবাবু নির্দেশ দিলেন, যদি চালক না যেতে চান, তবে তাঁকে যেন থানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
মন্ত্রীর হুমকিতে ম্যাজিকের মতো কাজ হল। চালক বললেন, ‘‘উঠুন, নিয়ে যাচ্ছি।’’ আমাদের সঙ্গে ট্যাক্সিতে উঠলেন ওই রোগা-পাতলা ভদ্রলোকও। কেন যেতে চাইছিলেন না? জানতে চাইলাম। যুক্তি দিলেন, চণ্ডীতলা নাকি তাঁদের রুটের বাইরে। তাই পুলিশ ধরবে। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে না চাইলে ফের আর একটা যুক্তি খাড়া করলেন ওই চালক ও তাঁর সঙ্গী। এ বার বললেন, “ওখান থেকে খালি ফিরতে হবে। ভাড়া পাব না। আপনি কিন্তু একটু বেশি দেবেন।”
ওঁদের যুক্তি যে ঠিক নয়, তা বোঝাতে এ বার ফোনে ধরলাম বেঙ্গল ট্যাক্সি সংগঠনের সভাপতি বিমল গুহকে। এ বারও ফোনটা স্পিকারে। ট্যাক্সিচালকদের সব ‘যুক্তি’ শুনে তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “এ সব কথা ঠিক নয়। ট্যাক্সির নম্বরটা দিন, তার পরে দেখছি।” এ দিকে, ফোনটা চলাকালীনই বিমলবাবুর কথা শুনে হাতজোড় করেছেন চালক ও তাঁর সঙ্গী। তাই গাড়ির নম্বর দিলাম না।
চণ্ডীতলা পৌঁছতে রাত প্রায় ন’টা বেজে গেল। ভাড়া উঠেছে ১২০ টাকা। ভাড়া মেটানোর পরে আর কথা না বাড়িয়ে ট্যাক্সি ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার সময়ে চালক শুধু বলে গেলেন, ‘‘স্যার, আর এমন ভুল করব না।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.