নির্দল মালিহাবাদি, রাজ্যসভায় অঙ্কের যুদ্ধ
শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হচ্ছেন আহমেদ সৈয়দ মালিহাবাদি। একক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষে তাঁকে জিতিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান সাংসদ মালিহাবাদিকে তাদের উদ্বৃ্ত্ত ভোট দিয়ে সমর্থন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছে বামেরা। আবার তৃণমূলও রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যসভার এ বারের নির্বাচনেই আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য
আহমেদ সৈয়দ মালিহাবাদি
রাজনীতির সমীকরণের পরীক্ষা হতে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ বার রাজ্যসভায় পাঁচটি আসন শূন্য হচ্ছে। কিন্তু প্রার্থী হচ্ছেন ৬ জন। যার ফলে ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে উঠেছে। যা গত দু’বার হয়নি। প্রার্থীদের মধ্যে বাকি পাঁচ জন সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দিলেও মালিহাবাদি অবশ্য এখনও দেননি। তাঁর আজ, মঙ্গলবার বিধানসভা ভবনে মনোনয়ন পেশ করার কথা।
বস্তুত, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখতে চেয়েছিলেন, পঞ্চম আসনটিতে প্রার্থী না-দিয়ে তৃণমূল কোনও বার্তা দেয় কি না। কিন্তু তৃণমূল মোট চার জন প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ায় কংগ্রেসও নির্দল প্রার্থী দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে। এই ঘটনাকে লোকসভা ভোটের আগে জোট-রাজনীতির প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
বিধানসভার সচিব তথা রাজ্যসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে গিয়ে এ দিন মনোনয়ন পেশ করেছেন তৃণমূলের চার প্রার্থী চিত্রকর যোগেন চৌধুরী, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, ব্যবসায়ী তথা দলীয় সাংসদ কে ডি সিংহ এবং সাংবাদিক আহমেদ হাসান (ইমরান)।
মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বামেদের একমাত্র প্রার্থী, পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক মুখ’ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজ্যসভায় এক জন প্রার্থীকে জেতাতে এ বার ৪৯টি ভোট লাগবে। সেই নিরিখে তৃণমূল তাদের তিন জন এবং বামেরা এক জন প্রার্থীকে সরাসরি জেতাতে পারবে। প্রথম পছন্দের ভোট হিসাব করে ব্যবহার করে কী ভাবে পঞ্চম আসনের প্রার্থীকে জেতানো যায়, তা নিয়েই যাবতীয় অঙ্ক কষা চলছে।
পা কাঁপছে! মনোনয়নপত্র পেশ করতে এসে সরস মন্তব্য মিঠুন চক্রবর্তীর। সঙ্গে আরও
দুই তৃণমূল প্রার্থী যোগেন চৌধুরী এবং কে ডি সিংহ। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন উপলক্ষে এ দিন বিধানসভায় এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্যসভার দলীয় সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন। চতুর্থ প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারেও তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। হিসাবমতো, তিন জন প্রার্থীকে জেতানোর পরে চতুর্থ জনের জয়ের জন্য যে ভোট দরকার, তার চেয়ে গোটাচারেক কম পড়ছে তৃণমূলের। তা হলে বিরোধী শিবির থেকে সমর্থন আদায় হবে? স্পষ্ট কিছু না বললেও এ দিন মুকুলবাবুর মন্তব্য, “কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক আর যা-ই হোক, সিপিএমকে ভোট দেবেন না!” কংগ্রেসের কিছু বিধায়কের ভোটে তৃণমূলের চতুর্থ প্রার্থীকে যে জেতানোর চেষ্টা চলছে, মুকুলবাবুর এই মন্তব্যে তারই ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রস ভোটিংয়ের এমন সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়েও কংগ্রেস শিবির অবশ্য এখনও বিশেষ তৎপর নয়! রাজ্যসভায় যদিও দলীয় পর্যবেক্ষককে দেখিয়ে ভোট দিতে হয়, তবু চাইলে বিদ্রোহ করা যায়। তার জন্য অবশ্য ‘চিহ্নিত’ হয়ে যেতে হবে। এই অবস্থায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বা পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব কেউই এখনও দলের বিধায়কদের তলব করেননি, আলোচনায় বসেননি! মালিহাবাদি এ দিন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের ঘরে গিয়ে বিশেষ সাড়াও পাননি। বরং, কাগজপত্র নিয়ে বেশি সাহায্য মিলেছে বামেদের তরফে! তৃণমূল কিন্তু তাদের সব বিধায়ককে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যে কলকাতায় চলে আসার সমন জারি করে দিয়েছে। ভোট ৭ তারিখ।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্বে এ দিন মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন তারকা মিঠুনই। যিনি জানিয়েছেন, বাংলার মানুষের জন্য রাজ্যসভায় সরব হওয়ার ইচ্ছা নিয়েই নতুন ভূমিকায় এসেছেন। রাজনীতির আঙিনায় এসে মিঠুনের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে শু্যটিংয়ের প্রথম দিনের প্রথম শট দেওয়ার মুহূর্ত। ধূসর-নীল জিন্স, হুডেড শার্ট, নীল মাফলারে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে মিঠুন বলেন, “প্রথম শট দেওয়ার মতোই আজও এখানে এসে পা কাঁপছে! বুঝতে পারছি, খুব সহজ কাজ নয় এটা। যিনি আমায় মনোনীত করছেন, জানি না তাঁর ভরসা কতটা রাখতে পারব!” রাজনীতিতে তাঁর আগমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছার পরিণতি বলেই জানিয়েছেন তিনি। এক সময় মিঠুন ছিলেন প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর খুবই ঘনিষ্ঠ। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই তৃণমূল প্রার্থী মিঠুনের মন্তব্য, “সুভাষদা’র সঙ্গে রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। জ্যোতি আঙ্কলকেও (বসু) সম্মান করি। ওঁদের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক ছিল, তেমনই থাকবে।” তাঁর এই অতীত জেনে-বুঝেও তাঁকে রাজ্যসভায় দলের প্রার্থী করে মমতা মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন বলেই মিঠুন মনে করেন।
মনোনয়ন পেশ করছেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
চিত্রকর যোগেন বলেছেন, “মানুষের জগৎ থেকে আলাদা ভাবে কোনও উঁচু চূড়ায় বসে থাকতে পারি না! শিল্পী, সাহিত্যিকদের রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব দরকার।” পুনর্মনোনীত কে ডি বা নবাগত ইমরানও তাঁদের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। মনোনয়ন পেশের পরে মুকুলবাবু ও ডেরেক নবান্ন-য় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান মিঠুন, কে ডি-কে।
অন্য দিকে, মনোনয়ন পেশের পরে বাম প্রার্থী ঋতব্রত বলেছেন, “বামফ্রন্টের নীতিসমূহ রাজ্যসভায় তুলে ধরাই আমার কাজ হবে। এখন রাজ্য জুড়ে মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা, সারদা-সহ লগ্নিসংস্থার কেলেঙ্কারি এবং সাম্প্রতিক টেট-দুর্নীতির কথা বলতে চাই। আমি ছাত্র রাজনীতি করি। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যে অভিযোগ সামনে এসেছে, তাতে ছাত্র-সহ অগণিত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভায় শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি হওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে মুকুলবাবু বলেছেন, “ভালই হয়েছে। লোকসভার আগে লড়াই করে আমরা মোট চারটি আসন জিতলাম, মানুষের কাছে এই বার্তা তৃণমূলের পক্ষেই যাবে।”
একই সঙ্গে মালিহাবাদীকে জেতাতে কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ সমর্থনকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। মুকুলবাবুর বক্তব্য, “কংগ্রেস-সিপিএম যে একজোট হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল!” সিপিএমের তরফে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, সমর্থন দেওয়া হচ্ছে নির্দল প্রার্থীকে। গত বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিল তৃণমূল, সিপিএম দু’দলই। তাতে কিছু প্রমাণিত হয় না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.