জ্ঞান ফেরার পরে ডিকি কোনও রকমে অস্ফুটে জিজ্ঞেস করলেন, “এলভিস কেমন আছে?” এলভিসের একটি কিডনি তাঁর শরীরে বসানোর জন্যই অস্ত্রোপচার করার আগে অজ্ঞান করা হয়েছিল ডিকিকে।
কলকাতার এক হাসপাতালে পাশাপাশি দু’টি অপারেশন থিয়েটারে একই সময়ে, একই সঙ্গে অস্ত্রোপচার হল দু’জনের। এলভিস অ্যারনের ডান দিকের কিডনি নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল দ্বিতীয় ওটি-তে। সেখানে অচেতন ডিকি শেরপার শরীরের বাঁ দিকে প্রতিস্থাপিত হল সেই কিডনি।
চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের শেষে শুরু হল এলভিস আর ডিকির নতুন প্রেমকাহিনি। প্রকৃত অর্থেই অর্ধ অঙ্গ দিয়ে ডিকিকে অর্ধাঙ্গিনী করে নিলেন এলভিস। এমন প্রেমের জোরেই নতুন জীবনের দিশা দেখছেন ডিকি। এলভিস দিশারির ভূমিকা না-নিলে যাঁর বাঁচার কোনও আশাই ছিল না বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
সিকিমের মেয়ে ডিকির কিডনির সমস্যা কুড়ি বছর বয়স থেকেই। পাঁচ বছর আগে কলকাতায় এসে টাকা জোগাড় করে তাঁর মায়ের দেহ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ডিকির শরীরে। কিন্তু তার পরে যে-ওষুধ নিয়মিত খেয়ে যেতে হয়, তা জুগিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ ছিল না পাহাড়ি মেয়েটির। ফলে প্রতিস্থাপিত সেই কিডনিও এক সময় অকেজো হয়ে যায়। বেশি রোজগারের আশায় বেঙ্গালুরু চলে যান ডিকি। আর সেখানেই দেখা এলভিসের সঙ্গে।
এলভিস সিকিমেরই ছেলে। বেঙ্গালুরুর এক হোটেলে ম্যানেজারের কাজ করতেন। নিজের কিডনি দিতে চান ডিকিকে। কিন্তু বাধা হয় আইন পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কেউ কিডনি দান করতে পারেন না। ডিকিকে বিয়ে করেন এলভিস। তার পরে কলকাতার এক হাসপাতালে এসে রক্ত পরীক্ষা করান তাঁরা। জানা যায়, ওই দম্পতি কিডনি দেওয়া-নেওয়া করলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু এলভিস কিডনি দিতে চাইলেও অস্ত্রোপচার এবং তার পরবর্তী চিকিৎসার খরচ জোগাতে প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। আবার শুরু হয় লড়াই!
এলভিস-ডিকির কাহিনি শুনে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন অনেকেই। তবু সন্দেহ ছিল ডাক্তারদের। সন্দেহ, স্রেফ কিডনি পাওয়ার জন্য কেউ বিয়ে করতে পারেন। কিডনি পাওয়ার পরেই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। যে-চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সোমবার ডিকি-এলভিসের অস্ত্রোপচার হল, সেই দীপকশঙ্কর রায় এ দিন বলেন, “ওঁরা নিয়মিত আসতেন আমাদের কাছে। একটা সময়ের পরে ডিকির প্রতি এলভিসের ভালবাসা নিয়ে সন্দেহ কেটে যায়।” পাঁচ বছর আগে দীপকশঙ্করবাবুই ডিকির শরীরে তাঁর মায়ের কিডনি বসিয়েছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন দু’জনে। এ দিন সকালে পাশাপাশি ওটি-তে অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসক জানান, আরও অন্তত ১০ দিন ডিকি-কে হাসপাতালে রাখা হবে। এলভিসকে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হবে তার আগেই। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে ডিকির রক্ত নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। দীপকশঙ্করবাবু বলেন, “চাইলে তিন মাস পরে ফের কাজ শুরু করতে পারবেন ডিকি।”
দু’জনের কারও হাতেই চাকরি নেই এখন। আপাতত দু’জনেরই সুস্থ হয়ে ওঠার প্রতীক্ষা। তার পরে আর এক লড়াই! |