গুটখা খেয়ে যেখানে সেখানে পিক ফেলার বদভ্যাসই ধরিয়ে দিল আন্তঃরাজ্য একটি দুষ্কৃতী দলকে। গত বছর পুজো থেকে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে। একাধিক চুরির ক্ষেত্রে গুটখার পিক নজরে পড়ে তদন্তকারীদের। সেই সূত্র ধরেই একটি চুরি চক্রকে ধরে ফেলল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ।
ধৃতেরা হল গুজরাতের বাসিন্দা ইমরান শেখ, ইসমাইল শেখ ও মুম্বইবাসী মহম্মদ শেখ। পুলিশ জানায়, প্রথমে ইমরানের খোঁজ মেলে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় গাঁজা। পরে ধৃতকে জেরা করে আরও দুই দুষ্কৃতীর খোঁজ মেলে। পূর্ব থানার একটি চুরির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে ইসমাইল ও মহম্মদ শেখ।
সূত্রের খবর, একাধিক চুরির ক্ষেত্রেই একই ভাবে গুটখার পিক দেখে তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছিল যে, মূলত কোনও একটি চক্র এই কাজ করছে। গত বছর পুজোর সময়ে উত্তর থানা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে শুধু চুরিই নয়, গৃহকর্তা ও তাঁর মেয়েকে আহত করে পালিয়েছিল দুই দুষ্কৃতী। পরে তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতে দুষ্কৃতীদের স্কেচ করা হয়। এমন একাধিক চুরির ঘটনায় এই দলটির যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সে সূত্রেই মূল পাণ্ডা ইমরান সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে পুলিস। ধৃতদের গুটখাই ছিল অন্যতম নেশা। দিনে-রাতে এরা কয়েকশো টাকার গুটখা খেত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানায়, এই দলটি চুরি, ডাকাতির ব্যাপারে সিদ্ধহস্তই শুধু নয়, উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করত। তবে রাতে নয়, দিনে দুপুরেই অপরাধ ঘটাত তারা। কোন বাড়ি ফাঁকা আছে, সে সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য জোগাড় করেই তারা অপরাধের ছক কষত বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা।
ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যেও বিভিন্ন অপরাধে এই দুষ্কৃতী দল যুক্ত বলেই তদন্তকারীরা মনে করছেন। সম্প্রতি গুজরাত ও মুম্বইয়ে তদন্তকারীদের একটি দল জানতে পারে যে, চুরি চক্রটি কলকাতাতেই রয়েছে। নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই ফাঁদ পাতা হয়।
এই চক্রেরই নতুন নিশানা হয়ে উঠেছিল বিধাননগর। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা মুম্বই, গুজরাত-সহ একাধিক জায়গায় হানা দিয়েও দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেননি। শেষে ফাঁদ পাতে পুলিশ। তাতেই পা দিয়ে রবিবার সকালে তিন দুষ্কৃতী বিধাননগরের কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন এলাকায় আসতেই তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়ে।
এক পুলিশ কর্তার দাবি, জেরায় ধৃতেরা দোষ কবুল করেছে। জেরায় ওই চক্র এবং কলকাতা, বিধাননগরে তাদের স্থানীয় সোর্সদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলবে বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। তবে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়লেও চুরি যাওয়া নগদ টাকা ও গয়না এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারীদের এক জনের কথায়, নগদ টাকা পাওয়া মুশকিল। তবে গয়না উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। |