মঠ-মন্দিরের শহর নবদ্বীপের প্রাচীন বিগ্রহগুলি নিরাপত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার যে কোনও সুষ্ঠু সমাধান হয়নি, তার প্রমাণ মিলল সোমবার। এই দিন সকালে জানা গেল, শহরের দু’টি শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরে চুরি হয়েছে। পাশাপাশি ওই দু’টি মন্দিরের একটি মৌনীবাবার আশ্রম। সেখান থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে অষ্টধাতুর একটি মূর্তি। পাশেই জগন্নাথ মন্দির। সেখান থেকে জগন্নাথ বিগ্রহের সোনা ও রুপোর অলঙ্কার চুরি করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে জগন্নাথ মন্দিরে মঙ্গলারতি করতে গিয়ে পুরোহিত দেখেন মন্দিরের প্রবেশ পথের কাঠের দরজাটি খোলা। মন্দিরে ঢুকে বুঝতে পারেন সবক’টি দরজাই ভাঙা হয়েছে। মন্দিরের সম্পাদক গৌরগোপাল সাহা বলেন, “দু’টি কাঠের দরজা ভারি কিছু দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। গ্রিল ও কোলাপসিবলের তিনটি দরজার তালা ভেঙে চোরেরা মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকেছিল।”
এ দিন সকালে দু’টি মন্দিরই শহরের এক প্রান্তে গঙ্গার ধার বরাবর প্রাচীন মায়াপুরে অবস্থিত। ওই এলাকায় একাধিক খুবই প্রাচীন মঠ-মন্দির রয়েছে। সেখানে রয়েছে দামি বিগ্রহ ও পুজোর বাসন থেকে শুরু করে মূল্যবান অলঙ্কার। কিন্তু তার নিরাপত্তা বলতে কেবল গ্রিল বা কোলাপসিবলের দরজা। সেই দরজায় তালা দিয়ে পুরনো মন্দিরগুলিতে থাকেন মাত্র কয়েকজন করে সাধক ও সেবক। শীতের রাতে তাঁরা বুঝতেই পারেননি, চুরি হচ্ছে।
জগন্নাথ মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, জগন্নাথ-বলরাম বিগ্রহের গা থেকে সোনা-রুপোর প্রায় ৭০ হাজার টাকার অলঙ্কার খুলে নিয়েছে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এমনকী প্রণামীর বাক্স ভেঙে নগদ টাকাও নিয়ে গিয়েছে তারা। মন্দিরের ভক্ত সমীর সরকার, বাবুরাম সাহা জানিয়েছেন, প্রতি দিনের মতো রবিবারও রাত দশটার পরে মন্দির বন্ধ করেন পুরোহিত। সোমবার সকালে মন্দির খুলতেই নজরে পড়ে চুরির বিষয়টি।
ওই মন্দিরের ঠিক পাশেই সাধক মৌনীবাবার আশ্রম। বয়সে এই মন্দির জগন্নাথ মন্দিরের থেকেও প্রাচীন। ওই মন্দিরে বিগ্রহ থাকে দোতলায়। এখানে ছাদ দিয়ে দোতলায় ঢুকে চুরি হয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের। মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বনাথ অধিকারী বলেন, “রাতের শয়নারতির পরে আশ্রমিকেরা সকলে নীচে চলে আসেন। রবিবারও তাই হয়েছিল। সোমবার ভোর চারটের সময় ওপরে মন্দির খুলতে গিয়ে দেখি তিনটি দরজার তালাই কাটা। উধাও প্রাচীন অষ্টধাতুর গোপাল বিগ্রহটি। অন্য বিগ্রহের কিছু গয়নাও চুরি হয়েছে।”
শহরের জোড়া মন্দিরে এমন চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নবদ্বীপের সনাতন সন্ত সমাজের সভাপতি অদ্বৈত দাস বাবাজি বলেন, “বছর দু’য়েক আগে নবদ্বীপের বিভিন্ন মন্দিরে চুরি শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে আমরা পুলিশকে বলে রাতে এই অঞ্চলে টহলদারির ব্যবস্থা করেছিলাম। এ দিনের ঘটনার পরে বিভিন্ন মঠমন্দিরের প্রতিনিধিরা মিলে পুলিশের কাছে ফের ওই ব্যবস্থা চালু করার আবেদন জানিয়েছি।” নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “প্রতি রাতেই শহর জুড়ে টহলদারি গাড়ি এবং মোটরবাইকে নজরদারি চালানো হয়। তবুও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” |