খুনের কথা কবুল, নিজের ফাঁসি চায় দেবব্রত
মা-দাদা-বৌদি ও পাঁচ বছরের ভাইঝিকে খুন করার পরেও নির্বিকার কাঁথির মুকুন্দপুরের যুবক দেবব্রত দাস। কাঁথি থানা সূত্রের খবর, পুলিশ হেফাজতে দেবব্রত বেশ স্বাভাবিক আচরণ করছে এবং তার মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। নির্বিকার ভঙ্গিতেই সে পুলিশকে জানিয়েছে, বাবা-মা তাকে চাষজমি দিতে চাইলেও দাদা-বৌদি রাজি হয়নি। সে জন্যই সে তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরের ভাইঝি মৌশ্রীকে খুন করা হল কেন? দেবব্রতর যুক্তি, “বাবা-মার অবর্তমানে সে যাতে অনাথ না হয়ে পড়ে, সে জন্য তাকেও খুন করেছি।” পুলিশ জানিয়েছে, মা ঊর্মিলাদেবীকে খুনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়ছে দেবব্রত। পরক্ষণেই বলছে, “দেখবেন স্যার, চরম শাস্তি যেন পাই। যাবজ্জীবন নয়, আমার যেন ফাঁসির সাজা হয়।
একই পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ জানুয়ারি, শনিবার। সে দিনই দেবব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনা বিরল বলে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, দেবব্রত যে নৃশসংশতার পরিচয় দিয়েছে, তা সচরাচর পেশাদার খুনির মধ্যেও দেখা যায় না। জেরার মুখে দেবব্রত জানিয়েছে, সে যখন দাদা অনুকূল ও বৌদি মৌমিতাকে চপার দিয়ে কোপাচ্ছে, তখন তার পা ধরে ভাইঝি মৌশ্রী বলেছিল, “বাবা-মাকে ছেড়ে দাও কাকু।” কিন্তু তাতেও ভ্রূক্ষেপ হয়নি দেবব্রতর। পাঁচ বছরের ভাইঝিকেও রেয়াত করেনি সে। পাঁচ বছরের মৌশ্রীর মাথায় ছ’বার চপারের কোপ মেরে খুন করে সে।
খুনের নৃশংসতার শুধু পুলিশ মহল নয়, গোটা মুকুন্দপুর গ্রামের মানুষও আঁতকে উঠছেন। কাঁথি-১ ব্লকের দুলালপুর গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান অংশুমান প্রধান বলেন, “দাস পরিবারের ছোট ছেলে দেবব্রত যে ভাবে বাড়ির সকলকে খুন করেছে, তাতে গ্রামবাসী আতঙ্কিত।” মুকুন্দপুরের পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রদীপ গায়েন জানান, দাস পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। দুই ভাই অনুকূল আর দেবব্রতের বিরোধ মেটাতে পঞ্চায়েতের হস্তক্ষেপে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু মীমাংসা হয়নি। তাই বলে এমন ঘটনার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত শনিবার দুপুরে মা ঊর্মিলা দাস, দাদা অনুকূল, বৌদি মৌমিতা ও ভাইঝি মৌশ্রীকে কুপিয়ে খুন করে দেবব্রত। তারপর মোটর সাইকেলে চেপে মারিশদা থানার খড়িপুকুরিয়া গ্রামে এক দিদির বাড়িতে চলে যায় সে। তবে সে দিনই সন্ধ্যায় কাঁথি থানার পুলিশ ওই দিদির বাড়ি থেকে দেবব্রতকে গ্রেফতার করে। জেরায় সে খুনের কথা স্বীকারও করে। শনিবার ঘটনাস্থলে তদন্তে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন, ডি আই জি (পশ্চিমাঞ্চল) অজয় নন্দ। তাঁরা কাঁথি থানায় দেবব্রতকেও দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় দেবব্রত জানিয়েছে, তারা চার বোন আর দুই ভাই। সকলেই বিবাহিত। মুকুন্দপুরে স্ত্রী দুই ছেলে, দুই বৌমা আর দুই নাতি-নাতনিকে থাকতেন দেবব্রতর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী অবন্তী দাস। কয়েকবছর আগে অসুস্থতার কারণে অবন্তীবাবু স্বেচ্ছাবসর নেন। তাঁর জায়গায় চাকরি পান বড় ছেলে অনুকূল। এই পরিবারের পাকা বাড়ি ও বিঘা তিনেক জমিও রয়েছে। দেবব্রত নিজে মুদির দোকান চালাতেন। জানা গিয়েছে, বড় ছেলে চাকরি পাওয়ার পরে দেবব্রতকে চাষবাস দেখতে বলেন অবন্তীবাবু। দেবব্রতর অভিযোগ, দাদা অনুকূল তাতেও বাগড়া দেন। এই নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ শুরু হয়।২৫ তারিখ দুপুরে বাবার অনুপস্থিতিতে ফের দুই ভায়ের বচসা বাধে। প্রথমে দাদা-বৌদিকে কুপিয়ে খুন করে দেবব্রত। মা ও ভাইঝি বাধা দিতে এলে তাদেরকেও কোপায় দেবব্রত। ঘটনার সময় অবন্তীবাবু মেয়ের বাড়িতে ছিলেন।
দেবব্রতর খুনে চেহারা দেখে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। দেবব্রত পুলিশকে জানিয়েছে, সে ভেবেছিল বাবাকে গোটা ঘটনা জানানোর পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রবিবার কাঁথি আদালতে হাজির করা হয় দেবব্রতকে। তাকে ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখান নির্দেশ দেন বিচারক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.