পুরাকীর্তি হিসেবে সরকারি ঘোষণা হয়েছিল ২০১২ সালে। কিন্তু সরকারি নিয়ম মতো ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জন্মস্থান এবং জন্মভিটে সংস্কার- সংরক্ষণের কাজ এখনও শুরুই হল না। বহু বছর ধরে যে দাবি গ্রামবাসীরা তুলছিলেন, তা স্বীকৃতি পেলেও এখনও পূরণ না হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ।
‘অন্নদামঙ্গল’-এর কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জন্মস্থান হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে পেঁড়ো গ্রাম। ৬০ বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে কবির জন্মভিটে, সেই আমলের ঠাকুরদালান, শিবমন্দির। ভিটের একাংশের এখন ভগ্নদশা। অন্য অংশে তাঁর বংশধরেরা থাকেন। গবেষক মদনমোহন গোস্বামী এবং কবির বংশধরদের মতে, ভারতচন্দ্র ১৭১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যু ১৭৬০ সালে। তাঁর বহু কাব্যগ্রন্থ এখনও বাংলা কবিতার পাঠকদের আলোচনায় আসে।
কবির জন্মস্থানটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি তুলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১২ সালে উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার কাছে আবেদন জানান তাঁরা। একই দাবি জানানো হয় রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে। ওই বছরই সারা রাজ্যের পুরাকীর্তি সংস্কার এবং সংরক্ষণের জন্য ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র সরকার। রাজ্যের পুরাকীর্তিগুলির প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল ট্রাস্ট অব আর্ট অ্যান্ড কালচার’। এরপরই চার দফায় সারা রাজ্যে যে ১১৭টি পুরাকীর্তি সংস্কার ও সংরক্ষণ করার প্রকল্প ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে প্রথম দফাতেই ছিল ভারতচন্দ্রের ভিটে। |
কিন্তু এর পরে কেটে গিয়েছে দু’বছর। এখনও কবির জন্মভিটেকে ঘিরে কোনও সরকারি উদ্যোগই স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসেনি। কবির বংশধর ওঙ্কারনাথ রায় বলেন, “সরকার যদি কবির জন্মস্থান সংস্কারে উদ্যোগী না হয়, তা হলে এই ইতিহাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।” স্থানীয় বাসিন্দা ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সরকার সংরক্ষণে উদ্যোগী হলে আরও বেশি মানুষ এই জায়গায় আসতেন। পর্যটনেরও প্রসার ঘটত। কবির নামে আমরা একটি কমিউনিটি হল হলেও ভাল হত।” ওই এলাকার ভারতচন্দ্র পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক পুষ্পেন দে বলেন, “পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পরেও কবির ভিটে সংরক্ষণ বা সংস্কার কেন যে আটকে রয়েছে, তা বুঝতে পারছি না। সংরক্ষণ করা হলে এলাকায় সংস্কৃতির চর্চাও বাড়ত।”
কিন্তু কেন এখনও কবির ভিটে সংস্কার বা সংরক্ষণের কাজ শুরু হল না?
বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “গড়ভবানীপুরে রানি ভবশঙ্করীর জন্মস্থান এবং ভারতচন্দ্রের জন্মভিটে সংস্কার ও সংরক্ষণ, এই দু’টি বিষয়েই আমি পর্যটন মন্ত্রীকে জানিয়েছি।” সাংসদ সুলতান আহমেদ বলেন, “রাজ্য পর্যটন দফতর এখনও বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেয়নি বলেই কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন থেকে এখনও টাকা আসেনি। ডিপিআর জমা দিলেই টাকা মঞ্জুর হবে।” রাজ্য পর্যটন বিভাগের অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মাস পাঁচেক আগে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ের কোনও নথিপত্র এখনও আমার নজরে আসেনি। নজরে এলে নিশ্চয়ই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কবির লেখা বহু পাণ্ডুলিপিই হারিয়ে গিয়েছে সময়ের গর্ভে। কিছু পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সংগ্রহশালায়। ১৯৭৬ সাল থেকে কবির নামে এলাকায় শুরু হয় ‘ভারত মেলা’। প্রতি বছর ২ থেকে ৮ মাঘ হয় এই মেলা। স্থানীয় বাসিন্দারা তৈরি করেছেন ভারতচন্দ্রের নামে একটি স্মৃতিমন্দির। এখনও গ্রামের প্রবীণদের মুখে মুখে ফেরে কবির কথা। |