হুগলির কলেজ ভোটে আধিপত্য ধরে রাখল টিএমসিপি।
আজ, মঙ্গলবার জেলার ৩০টি কলেজে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে ২৫টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী শাসকদলের ছাত্র সংগঠন। স্বভাবতই জেলা টিএমসিপি নেতাদের মুখে হাসি। যদিও এসএফআইয়ের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই টিএমসিপি-র বাধায় মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেনি তারা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে মোট ৩২টি কলেজ রয়েছে কলকাতা এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। হুগলি মহসিন কলেজের আইন বিভাগ এবং হুগলি আইআইটি-তে এখনও ভোট ঘোষণা হয়নি। বাকি কলেজগুলিতে একই দিনে ভোট নেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল। এর মধ্যে ২৫টিতেই টিএমসিপি জয়লাভ করেছে। দু’টি কলেজে ভোট স্থগিত হয়েছে। ফলে আজ হাতেগোনা তিনটি কলেজে ভোট। এই কলেজগুলি হল খন্যানের ইটাচুনা বিজয়নারায়ণ মহাবিদ্যালয়, শ্রীরামপুর কলেজ এবং রিষড়া বিধানচন্দ্র রায় কলেজ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, অশান্তি এড়াতে তিন জায়গাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবে। খন্যানের কলেজটিতে টিএমসিপি-র পাশাপাশি এসএফআই, ডিএসও, ছাত্র ব্লক, ছাত্র পরিষদ সকলেই প্রার্থী দিয়েছে। এখানে ৪২টির মধ্যে ১৫টিতে এবং শ্রীরামপুর কলেজে ৪৬টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি। বিধানচন্দ্র কলেজে টিএমসিপির সঙ্গে লড়াই ছাত্র পরিষদের। এখানে ৫টিতে টিএমসিপি এবং ৩টিতে ছাত্র পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। এখানে এক দশকেরও বেশি সময় পরে ভোট হচ্ছে। এসএফআই প্রার্থী দেয়নি।
জেলা টিএমসিপির শীর্ষ নেতাদের দাবি, পড়ুয়ারা এসএফআইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকাতেই অনায়াসে জিতেছেন তাঁরা। এসএফআই নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছেন, আরামবাগ মহকুমা এবং ধনেখালি, তারকেশ্বর জাঙ্গিপাড়ার কলেজগুলিতে তাঁরা ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূলের দৌরাত্ম্যে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই ওই সিদ্ধান্ত। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পার্থ দাসের অভিযোগ, মশাট কলেজে তাদের ছেলেদের মারধর করে বের করে দেয় তৃণমূলের বহিরাগতেরা। উত্তরপাড়া প্যারীমোহন, কোন্নগর হিরালাল পাল কলেজে এসএফআইয়ের ছেলেমেয়েদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। চন্দননগর কলেজেও ক্রমাগত সংগঠনের সমর্থকদের উপরে হামলা করা হচ্ছে বলে এসএফআই নেতাদের অভিযোগ। পার্থবাবুর বক্তব্য, “ছাত্রসমাজ ফের আমাদের সঙ্গে আসছে। গত বছর একটি কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছিলাম আমরা। এ বার তিনটিতে পেরেছি। সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে অনেক জায়গাতেই আমাদের আটকে দেওয়া হয়। না হলে শহরের কলেজগুলিতে অন্য ফল হত।”
টিএমসিপি নেতারা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভজিৎ সাউ বলেন, “এসএফআই প্রার্থী দেওয়ার মতো ছেলেমেয়ে খুঁজে না পেয়ে সন্ত্রাসের গল্প ফাঁদছে। ছাত্রসমাজ ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে। সেই দায় কি আমাদের!”
ভিন্ন কারণে শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ এবং চাঁপাডাঙা রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছে। শ্রীরামপুর গার্লসে ছাত্রী সংসদ দীর্ঘ দিন ধরেই এসএউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র দখলে রয়েছে। এ বার ডিএসও-র মেয়েরা তাদের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয় টিএমসিপি। আদালত ওই কলেজে ভোট স্থগিত রেখে পুনরায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ দিয়েছে। অন্য দিকে, চাঁপাডাঙা কলেজে তৃণমূলের দুই বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে পরিবেশ উতপ্ত হয়। অশান্তির আশঙ্কায় সেখানে ভোটের দিন বাড়তি পুলিশকর্মী চেয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ দিতে অপারগ বলে জানিয়ে দেয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই কলেজে ভোট স্থগিত করা হয়। |