সম্পাদকীয় ২...
সিরিয়ার সঙ্কট
গৃহযুদ্ধপীড়িত সিরিয়ার অমানবিক পরিস্থিতি ঘুচাইতে জেনিভায় আয়োজিত দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বড় কোনও প্রাপ্তির আশা করিতেছে না কোনও পক্ষই। গৃহযুদ্ধে এ যাবৎ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হইয়াছে, যাঁহাদের অধিকাংশই নিরীহ, নিরস্ত্র নাগরিক। প্রেসিডেন্ট আসাদের সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি যেমন তাঁহাদের উপর নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করিয়াছে, ঠিক তেমনই বিদ্রোহীদের বাহিনীর হাতেও বহু অসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হইয়াছে। বিদ্রোহী পক্ষে আসাদের উপর রুষ্ট বা ক্ষুব্ধ জেনারেলরা যোগ দেওয়ায় তাহাদের হাত যেমন শক্ত হইয়াছে, তেমনই আল-কায়দার জেহাদি গোষ্ঠী বিদ্রোহী শিবিরে অনুপ্রবেশ করায় তাহাদের অস্ত্রবল, মনোবল, উভয়ই বাড়িয়াছে। হানাহানি ও রক্তক্ষয় এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছিয়াছে যে, অগণিত মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়িয়া নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে স্থানান্তরে গমন করিয়াছেন। স্থানান্তর বলিতে তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডনের লাগোয়া উদ্বাস্তু শিবির।
একটা সময় সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সমরাভিযান চালাইয়া তাঁহাকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া গণতান্ত্রিক শাসন কায়েমের পরিকল্পনা হইয়াছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার আপত্তিতে তাহা বানচাল হয়। লিবিয়ার ইতিহাসও নিশ্চয় মার্কিন-ইউরোপীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করিয়াছে। অতঃপর রাসায়নিক অস্ত্রসম্ভারের উপর রুশ-মার্কিন নজরদারি এবং প্রাপ্ত মারণাস্ত্র নষ্ট করিয়া ফেলার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের হাতে তুলিয়া দিবার অঙ্গীকারের বিনিময়ে আসাদ যে সময়-সুযোগ পান, তাহা গৃহযুদ্ধকে আরও রক্তাক্ত করিয়া তোলে। আসাদ-বিরোধী শিবিরে আল-কায়দার শামিল হওয়া ও ক্রমে শিবিরের নেতৃত্ব হাসিল করিয়া লওয়ার ঘটনা, বিশেষত সুন্নি জেহাদিদের যে গোষ্ঠীটি ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে অগ্রসর হইতেছে, তাহার তৎপরতা আসাদকে খলনায়কের ভূমিকা হইতে অংশত মুক্তি দিয়াছে। যে-সকল পশ্চিমী রাষ্ট্র ও স্বার্থজোট আসাদের প্রাসাদে বোমা ফেলিবার জন্য সওয়াল করিতেছিল, তাহারাও এখন দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতেই জেনিভায় প্রথম বৈঠকে স্থির হইয়াছিল, সিরিয়ার শাসনপ্রণালীর গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য একটি নিয়ামক সংস্থা তৈয়ার হইবে, যুযুধান দুই পক্ষের আলোচনা শুরু হইবে, সংবিধান ও আইনকানুন সংক্রান্ত বিষয়গুলির পর্যালোচনা হইবে, অবাধ নির্বাচন মারফত প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থার অভিমুখে যাত্রার আয়োজন হইবে।
সে সবই দূর অস্ত্। কেবল প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতিনিধি হোম্স নগরীতে আটক অসামরিক পরিবারগুলিকে নিরাপদে বাহিরে আসিতে দিবার আশ্বাস দিয়াছেন। কিন্তু সেই আশ্বাসে মানুষ কতটা ভরসা রাখিবে, বলা কঠিন। মূল যে সমস্যা, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতা হইতে সরিয়া দাঁড়াইয়া সিরীয় গণতন্ত্রকে পথ করিয়া দেওয়া, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি হয় নাই। বিদ্রোহীরা এখনও ওই দাবিতে অবিচল। অন্য দিকে আসাদ সরকার আল-কায়দা সন্ত্রাসের অবসান দাবি করিতেছে। ইহরই মধ্যে জেনিভা বৈঠকে ইরানের অংশগ্রহণের দাবি লইয়া দ্বন্দ্ব দেখা দিয়াছে। শিয়াপ্রধান ইরান শিয়া প্রেসিডেন্ট আসাদের পাশে দাঁড়াইতে উদ্গ্রীব। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ ইরানকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়টিতে জড়াইতে চাহে না। দড়ি-টানাটানি চলিতেছে। তবে প্রেসিডেন্ট আসাদ স্বেচ্ছায় গদি ছাড়িয়া বিদ্রোহীদের হাতে শাসনক্ষমতা তুলিয়া দিবেন, এমন ধারণা না করাই শ্রেয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.