|
|
|
|
অমেঠি-কাঁটা অসমে সরালেন সনিয়া
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি
২৭ জানুয়ারি |
লক্ষ্য অমেঠিতে রাহুল গাঁধীর পথে সম্ভাব্য কাঁটা সরানো। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কংগ্রেসের অসম শাখায় অশান্তি ডেকে আনলেন সনিয়া গাঁধী। অসমে রাজ্যসভার প্রার্থী চূড়ান্ত করার দিনে আজ অপ্রত্যাশিত ভাবেই সঞ্জয় সিংহের নাম প্রদেশ কংগ্রেসের উপরে ‘চাপানো’ হল এআইসিসির তরফে।
সঞ্জয় সিংহ সুলতানপুরের বর্তমান লোকসভা সদস্য। কিন্তু পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্রে এলাকায় অমেঠির রাজা হিসেবেই তিনি পরিচিত। তাঁর ‘অমেঠি বাঁচাও আন্দোলন’-ই দলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলে তেমন গুরুত্ব বা মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন, এমন একটা আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জল্পনা বাড়িয়েছে তাঁর রাজনৈতিক অতীত ও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক মেলামেশা। এই বিদ্রোহী সাংসদ আগামী নির্বাচনে বিজেপি বা অন্য দলের হয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলে, সমস্যা হতে পারে। তাই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে দিয়ে অমেঠিতে রাহুলের পথ মসৃণ রাখতে চান কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তারই জেরে মনমোহনের পরে আমেঠির রাজা সঞ্জয় সিংহকেও এ বার গুয়াহাটিতে আস্তানা খুঁজতে হবে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে আচমকা অসম সম্পর্কে অজ্ঞ, উত্তরপ্রদেশের বিতর্কিত নেতাকে রাজ্যের ঘাড়ে চাপানোয় প্রদেশ কংগ্রেসে অশান্তি চরমে উঠেছে। প্রতিবাদে মুখর আসু ও রাজ্যের অন্য বিরোধী দলগুলিও। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে অসম থেকে সঞ্জয় সিংহকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করেনি। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে তা প্রদেশ নেতৃত্বকে জানানোর পরেই রাজ্য স্তরে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। যা নিয়ে কিছুটা বিচলিত হয়ে ওঠে ১০ জনপথ। তবে সূত্রের খবর, কাল মনোনয়ন পত্র পেশ করার জন্য আজই সঞ্জয় সিংহ গুয়াহাটি পৌঁছে গিয়েছেন।
আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য আজ ৭ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ ও গুজরাত থেকে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ ও বর্তমানে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মধুসূদন মিস্ত্রি তাঁদের অন্যতম। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এই দুই নেতাই লোকসভা ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। বাদ সাধেন স্বয়ং রাহুল। কংগ্রেসের সহসভাপতি তাঁদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার কাজে লাগাতে চান। বাকি ছ’জনকে নিয়ে সমস্যা না হলেও বিতর্ক বেধেছে সঞ্জয় সিংহকে নিয়ে।
অমেঠিতে রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন আম আদমি পার্টির কুমার বিশ্বাস। কিন্তু শোনা যাচ্ছিল, বিজেপি-র টিকিটে অমেঠি না হলেও সুলতানপুরে লড়বেন সঞ্জয়। এর পরেই, অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে তলব করেন সনিয়া। অসম থেকে রাজ্যসভার তিন সদস্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কলিতা, বিপিএফ-এর দৈমারি ও অগপ-র বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্যের কার্যকাল ৯ এপ্রিল শেষ। সাংসদ ও বিধায়ক সংখ্যার হিসেবে ৩টি আসনেই কংগ্রেস ও বিপিএফ প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা। এই অবস্থায় বাইরের প্রার্থী চাপিয়ে দিলে রাজ্যে বিক্ষোভ হবে জেনেও হাইকম্যান্ডের দাবি মানতে বাধ্য হন গগৈ।
অসমে সমস্যা হবে জেনেও সনিয়ার এই পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে সঞ্জয়ের রাজনৈতিক অতীত। সঞ্জয়ের সঙ্গে রাজীব ও সঞ্জয় গাঁধীর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সূত্রে, রাহুল তাঁকে ‘আঙ্কল’ বলেন। কিন্তু, ১৯৮৮-তে কংগ্রেস ছেড়ে তিনি জনতা দলে যান। তাঁর আগের স্ত্রী গরিমার কাকা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের আমলে হন কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী। ১৯৯৮-এ সঞ্জয় যান বিজেপি-তে। সে বার, অমেঠি থেকে তিনি কংগ্রেসের সতীশ শর্মাকে হারিয়ে দেন। কিন্তু, পরের বছরই, প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়া সনিয়ার কাছে হেরে যান। পরে প্রায় নিঃশব্দে কংগ্রেসে ফিরে ২০০৯-এ হন সাংসদও। কিন্তু, গাঁধী পরিবার তাঁর বিশ্বাসঘাতকতা ভোলেনি। কমেনি দূরত্বও। গত বছর অমেঠিতে প্রচারে গিয়ে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা, কেউই ডাকেননি তাঁকে।
টেরেটরিয়াল আর্মির প্রাক্তন মেজর, প্রশিক্ষিত বিমানচালক সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে তাঁর বর্তমান পত্নী অমিতা সিংহের আগের স্বামী খ্যাতনামা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সৈয়দ মোদীকে হত্যা করানোর অভিযোগ উঠেছিল। প্রমাণের অভাবে রেহাই পান সুপ্রিম কোর্টে। গোটা দেশে আলোড়ন ফেলা হত্যা মামলায় নাম জড়িয়েছিল, এমন এক এক নেতাকে লোকসভা ভোটের মুখে অসমের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার কুফল নিয়ে চিন্তিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। গগৈ অবশ্য বলছেন, “হাইকম্যান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বহিরাগত প্রার্থী যদি আন্তরিক ভাবে রাজ্যের জন্য কাজ করেন, তবে তিনি যোগ্য সাংসদ হতেই পারেন।” অসমের সমস্যা সম্পর্কে সঞ্জয়ের বক্তব্য, “দেশের যা প্রয়োজন, অসমেরও নিশ্চয়ই তা প্রয়োজন। তা নিয়ে সচেতন থাকব।” কিন্তু, অসমের তো নিজস্ব কিছু চাহিদাও থাকতে পারে? দৃশ্যতই বিরক্ত সঞ্জয় বলেন, “স্থানীয় নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন।” |
|
|
|
|
|