দশ বছরে দশ জনও আইএএস বা আইপিএসের চাকরি পাননি পশ্চিমবঙ্গে। আইএএস, আইপিএস পরীক্ষায় রাজ্যের সাফল্য ক্রমশই কমতে থাকায় বাম সরকারকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকার কারণেই এই হাল বলে মনে করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বদল আনতেই সল্টলেকের প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ ভবনে সরকারের উদ্যোগে ‘সিভিল সার্ভিস স্টাডি সেন্টার’ চালু করল রাজ্য সরকার। শনিবার তার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক দিন কোনও আইএএস-আইপিএস বেরোচ্ছে না। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই তো কোথা থেকে বেরোবে?” |
হাসি মুখে। শনিবার সল্টলেকের প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রদীপ আদক। |
রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন জানানো হয়, এই স্টাডি সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য প্রথম দফায় ২৪৫ জন ছেলেমেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে তাঁরাও উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন তাঁদের সকলের সঙ্গে। মমতা বলেন, “রাজ্যে আইএএস-আইপিএস অফিসারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় সরকার চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।” তিনি জানান, রাজ্যে যেখানে ৩১৭ জন আইএএস দরকার, সেখানে আছেন ২১২ জন। ফলে এক জন আইএএস অফিসারের হাতে একাধিক দফতরের দায়িত্ব দিতে হয়েছে। এত কম অফিসার দিয়ে সরকার চলবে কী করে, প্রশ্ন মমতার।
স্টাডি সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়া অফিসাররা যাতে সকলেই সর্বভারতীয় পরীক্ষার সাফল্য পান, তার জন্য দিল্লি-সহ দেশের একাধিক শহরের নামকরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার। যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে থেকে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা সাফল্য পেয়েছেন, তাঁদেরও এ রাজ্যে আনার কথাবার্তা চলছে। সরকারি সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণের জন্য কোর্স ফি দিতে হবে ১০০০ টাকা। তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর ছেলেমেয়েদের জন্য তারও অর্ধেক। তবে যাঁরা ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বা তার প্রাক্-যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় (প্রিলিমস) পাশ করেছেন, তাঁরা প্রবেশিকা পরীক্ষা বা ফি ছাড়াই এই এই কেন্দ্রে নাম লেখাতে পারবেন।
রাজ্যে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত আইএএস-দের অনেকে মানছেন, যত দিন যাচ্ছে, সর্বভারতীয় প্রশাসনিক পরীক্ষায় (ইউপিএসসি) পশ্চিমবঙ্গের অংশগ্রহণ কমছে। ফলে, কমছে উত্তীর্ণের সংখ্যাও। আইএএস-আইপিএস হওয়ার পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও তুলনামূলক ভাবে শিক্ষকতা বা গবেষণার মতো ক্ষেত্রে কিন্তু বাংলার ছেলেমেয়েরা ঢের বেশি কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছেন। প্রশাসনিক কাজে ঢোকার পরীক্ষাতেও যাতে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা সাফল্য পান, সেই লক্ষেই সরকার এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানালেন মমতা। তাঁর কথায়, “এখানে মুখ্যসচিবও ক্লাস নেবেন। আমিও ওঁদের সাহায্য করব।” মমতার প্রস্তাব, বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে ওই প্রশিক্ষকদের হাজির করানো হলে আখেরে তাঁরাই লাভবান হবেন। এতে গ্রাম কেমন, পঞ্চায়েত বলতে কী বোঝায়, গ্রামোন্নয়ন কী ভাবে হয়, সে সব ব্যাপারে ধারণা স্বচ্ছ হবে তাঁদের। |