এই ২০১৪ সালে কি বাঙালির শিল্পচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পালে হাওয়া লাগবে? বছরের গোড়ায় পদ্ম সম্মানের তালিকায় চোখ বোলালে অন্তত এ ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারে বাঙালি।
বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণায় অবদানের জন্য এ বারের পদ্মশ্রীর তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বেশ কয়েক জন বাঙালি। যেমন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞান নিয়ে এ দেশে প্রায় ৪০ বছর কাজ করছি। একে তারই স্বীকৃতি হিসেবে দেখছি। তবে এখন আমি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাই এই সম্মান বিশ্বভারতীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।”
আছেন জয়ন্তকুমার ঘোষ। এ বারের পদ্মশ্রী প্রাপক পরিসংখ্যানবিদ জয়ন্তবাবু ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের এমেরিটাস অধ্যাপক। মুম্বইয়ে ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা শেখর বসুও বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেলেন। আমেরিকা প্রবাসী সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় পদ্মশ্রী পেয়েছেন ক্যানসার গবেষণার জন্য। ‘দ্য এম্পেরর অব অল ম্যালাডিস: আ বায়োগ্রাফি অব ক্যানসার’ বইটিতে তাঁর ভিন্ন গোত্রের ভাবনা বিশ্ব জুড়ে প্রভূত প্রশংসিত হয়েছিল। ২০১০-এর নভেম্বরে প্রকাশিত এই গ্রন্থের জন্য ‘পুলিৎজার’ পুরস্কারও পান সিদ্ধার্থ।
শিল্পকলায় পদ্মশ্রী পেলেন সুনীল দাস, পরেশ মাইতি দিল্লিবাসী ভাস্কর বিমানবিহারী দাস। ও পার বাংলার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান, টেনিস মাঠের লিয়েন্ডার পেজ পেয়েছেন পদ্মভূষণ সম্মান।
পদ্ম সম্মানের তালিকায় বাঙালির উপস্থিতি যেমন উজ্জ্বল, তেমনই এই তালিকায় রয়েছে বাঙালির প্রিয় কিছু নাম। বিনোদন, শিল্পকলা থেকে শুরু করে বহুবিধ ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁদের কাজের স্বাক্ষর। ধ্রুপদী সঙ্গীতে বেগম পারভিন সুলতানা, চলচ্চিত্রে কমলহাসন, সাহিত্যে রাস্কিন বন্ড পদ্মভূষণ সম্মানের তালিকায় রয়েছেন এমনই বেশ কয়েক জন। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে যাঁদের অবদান ও গুণে মুগ্ধ বাঙালির সংখ্যা নেহাত কম নয়।
পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকাতেও রয়েছেন এমন অনেকে। যেমন, রুপোলি পর্দার বিদ্যা বালন ও পরেশ রাওয়াল, সিনেমাটোগ্রাফার সন্তোষ শিবন, কত্থকশিল্পী রানি কর্ণা, বালুকা-ভাস্কর সুদর্শন পট্টনায়ক, ব্যাডমিন্টন কোর্টের পুল্লেলা গোপীচন্দ ও ক্যানসারকে হারিয়ে বাইশ গজে ফেরা যুবরাজ সিংহ।
তবে আম আদমির আলোচনায় সে ভাবে উঠে আসে না রঘুনাথ অনন্ত মাশলেকরের নাম। ইউরোপ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির ৬০ হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী যে বিশ্বজোটের সঙ্গে যুক্ত থেকে গবেষণা চালাচ্ছেন, সেই ‘গ্লোবাল রিসার্চ অ্যালায়েন্স’-র সভাপতি তিনি। রয়েছেন দেশের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী গবেষণা অ্যাকাডেমির শীর্ষেও।
বিভিন্ন আমলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে দেশের বিজ্ঞান গবেষণা ও সেই সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ১৯৯১-এ পেয়েছেন পদ্মশ্রী, ২০০০-এ পান পদ্মভূষণ। এ বার পদ্মবিভূষণ সম্মান পাচ্ছেন মহারাষ্ট্রের এই বিজ্ঞানী।
এ বছরের দু’জন পদ্মবিভূষণ প্রাপকের দ্বিতীয় জনও মহারাষ্ট্রের।
বি কে এস আয়েঙ্গার। এক দশক আগেই টাইম ম্যাগাজিন এই যোগ-শিক্ষককে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের অন্যতম বলে চিহ্নিত করেছিল।
মরণোত্তর পদ্মশ্রী সম্মান পেলেন অধিকার আন্দোলনের কর্মী নরেন্দ্র অচ্যুৎ দাভোলকর। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রে শুরু করা তাঁর নিরন্তর লড়াই দেশের নানা প্রান্তের আরও বহু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ২০১৩-র ২০ অগস্ট পুণেতে তাঁকে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর মৃত্যুর পরেই কুসংস্কার-বিরোধী বিল পাশ করাতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। |