রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৪...
পারস্য দেশে ‘কম’ আর ‘আব’ মানে হল কম জল। সেখান থেকেই নাকি কাবাব পদের উত্‌পত্তি। কারণ কাবাব রান্নায় জল প্রায় দেওয়াই হয় না। কাবাব শব্দটার মালিকানা নাহয় মধ্যপ্রাচ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া গেল (যদিও সংস্কৃত প্রাচীন রন্ধনশৈলীর পঁুথি ‘ক্ষেমকুতূহলম্’-এ কাবাবের উল্লেখ রয়েছে), কিন্তু কাবাবের ভারতে প্রবেশ মুসলিম শাসকদের হাত ধরে এই মতবাদে বিস্তর গরমিল। মুঘলদের আগেই কাবাব ভারতে এসেছে, তার প্রমাণ ইব্‌ন বতুতার ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কেতাব। আদপে কাবাবের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও অনেক পুরনো। রাজপুত রাজাদের শিকারের নেশা ছিল প্রবল। মাঝেমাঝে বন্ধুরাজ্যের রাজাকেও ডেকে নিতেন একসঙ্গে শিকার করার ফাঁকে কূট পরামর্শ সেরে ফেলার জন্যে (এখনকার গল্‌ফ খেলা মনে পড়ে যাচ্ছে কি?) সেই শিকারে পাওয়া মাংস খোলা কাঠের আগুনে ঝলসিয়ে নুন আর লেবু ঘষে খাওয়া হত। উদ্বৃত্ত মাংস আচার মাখিয়ে রেখে দেওয়া হত পরের দিনের খাবার হিসাবে। সেই ঝলসানো মাংস পরে কাবাব নাম পেয়েছে। গপ্পে বলে, মহারাজ পুরু আলেকজান্ডারকে আপ্যায়ন করেছিলেন এই রকম এক পদ দিয়ে।
এক এক কাবাবের পিছনে এক এক গল্প। ইরানের জাতীয় খাবার চেলো কাবাব সে দেশে ‘চেলো’ শব্দের মানে ‘সেদ্ধ ফেন ঝরা ভাত’। চেলোর সঙ্গের কাবাবটা এসেছিল প্রতিবেশী ককেশীয়দের কাবাব কুবিদেহ্ থেকে। কথিত আছে কাজার সাম্রাজ্যের নবাব নাসির-আল-দিন শাহ প্রায় শুক্রবার ‘সপরিবারে’, মানে তিনি, তাঁর চার স্ত্রী, ৮৭ উপপত্নী, ২০০ ক্রীতদাসী ছাড়াও ভৃত্যের দলসব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক লোক নিয়ে হজরত আব্দুল আজিমের দরগায় যেতেন। বিবিসাহেবারা ওখানকার কুবিদেহ্‌ খেতে পছন্দ করতেন বলে বাদশা স্থানীয় ককেশীয়দের কাছ থেকে এক বিশেষ কুবিদেহ্‌ বানানোর কৌশল আদায় করেছিলেন আর সেই কৌশলে প্রথম আজকের চেলো কাবাব তৈরি হয়।
কাকোরি কাবাবের নাম এসেছে লখনউয়ের পাশে এক ছোট্ট শহরতলি কাকোরি থেকে। সেখানে হজরত শাহ আবি আহ্দের দরগায় মাথা ঠেকাতে আসা লক্ষ ভক্তদের খাওয়ানোর জন্যে স্থানীয় পাচকরা এক ‘তবাররুখ পরশাদ’ বানায় যা পরে কাকোরি কাবাব হয়ে দাঁড়ায়।
গলৌতি কাবাব বানানো হয়েছিল বর্ষীয়ান নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্‌-র জন্যে। প্রথমে রাজ্য, তার পর দাঁত একের পর এক প্রিয় জিনিস হারিয়ে নবাব শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন। মাংসের প্রতি তাঁর ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। কচি পেঁপের ক্বাথ, কিছু নির্দিষ্ট শেকড় আর মশলা মিহি করে বেটে মাংসে মাখিয়ে তাকে নরম করে গাওয়া ঘিয়ে ভেজে ‘গলৌতি’ কাবাব প্রথম তৈরি হয়। যার অর্থ ‘মুখে গলে যাওয়া’।
তুন্ডা কাবাবও তৈরি হয়েছিল এক কাবাব- প্রেমিক দন্তহীন নবাবের জন্যে যিনি ঘোষণা করেন, যে তাঁকে সবচেয়ে নরম মাংস খাওয়াতে পারবে, পুরস্কার পাবে। এক-হাতহীন হাজি মুরাদ আলি, যিনি তুন্ডা মিয়া নামে খ্যাত ছিলেন (তুন্ডা-র অর্থ নুলো), এই বাজি জেতেন। এই কাবাব বানাতে তুন্ডা মিয়া ১৬০ রকমের শেকড় আর মশলা নাকি ব্যবহার করেন যার মধ্যে চন্দনকাঠও ছিল। তাঁর নামেই এই কাবাবের নাম তুন্ডা কাবাব। এই কাবাবের উপকরণ আজও গোপনীয় শুধু তুন্ডা মিয়ার পরিবারের মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.