ও ভাবে যাওয়া ঠিক হয়নি, কবুল ভারতীর

২৫ জানুয়ারি
তিনি ঠিক ছিলেন, ভুল ছিল তাঁর পন্থা। বিদেশিনি নিগ্রহ কাণ্ডে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে এই যুক্তি দিলেন করলেন দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী। আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের অভিযোগ পেয়েই সে দিন গিয়েছিলাম। কিন্তু পদ্ধতি জানতাম না। সেখানে ভুল হয়ে গিয়েছে।”
ফলে নতুন দিনে। নতুন বিড়ম্বনা। মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম দিকের দিনগুলো বাদ দিলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রোজকার রাজনৈতিক রুটিন যেন এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আজ ঘোষণা করেন, ফেব্রুয়ারিতে রামলীলা ময়দানে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে জন লোকপাল বিল পাশ করাবেন তিনি। পত্রপাঠ আপত্তি জানিয়ে দিল্লি পুলিশ বলেছে, এতে নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছে তারা। কাজেই ধর্না-পর্বের পর দিল্লি বনাম নয়াদিল্লি চাপানউতোরের নতুন ক্ষেত্র আজ তৈরি হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের ধারা বজায় রেখেছেন। মেজাজ হারিয়ে আজ এক সাংবাদিককে তিনি বলে বসেন, “এই প্রশ্নটা করার জন্য মোদী আপনাকে কত টাকা দিয়েছেন?” পরে অবশ্য ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান সোমনাথ। কেজরিওয়াল নিজেও সতীর্থের ওই মন্তব্যকে ‘অনুচিত’ বলেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর দলের লাগাতার সমালোচনার জন্য সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রীও। এর পরেও বিড়ম্বনার বাকি ছিল। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় নাম না করে আপ-এর রাজনীতির সমালোচনা করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বলেন, “প্রশাসন চালাতে বসে জনপ্রিয়তার জন্য নৈরাজ্য তৈরি করা যায় না।”
বস্তুত, কেজরিওয়ালের রামলীলা ময়দানে বিধানসভা বসানোর তোড়জোড়কে জনমোহিনী চটক-ই বলছেন বিরোধীদের কেউ কেউ। জন লোকপাল বিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে উত্থান কেজরিওয়াল ও তাঁর দলের। তাই যে রামলীলা ময়দান থেকেই ওই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেখানেই ‘জনতার মাঝে’ বিলটি পাশ করানো হবে বলে আজ ঘোষণা করেন কেজরিওয়াল। দিল্লি পুলিশের আপত্তি সত্ত্বেও আপ নেতৃত্ব এখনও সেই অবস্থানে অনড়। তাদের পাল্টা যুক্তি, এই রামলীলাতেই ক’দিন আগে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছে। সেখানে শুধু নরেন্দ্র মোদীই নন, বিজেপির তাবড় নেতারা উপস্থিতি ছিলেন। তখন নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপত্তি জানায়নি পুলিশ। এখন স্রেফ সঙ্কীর্ণ রাজনীতির জন্যই কেন্দ্রের নির্দেশে পুলিশ ওই আপত্তি জানাচ্ছে। কেজরিওয়ালরা যখন বিজেপির অধিবেশনের যুক্তি দেখাচ্ছেন, তখন রামলীলা-প্রসঙ্গে তাঁদের বিঁধেছেন দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, “কেজরিওয়াল পুলিশকে মুচলেকা দিন, রামলীলায় জান-মালের ক্ষতি হলে দায় তাঁর। কেজরিওয়ালদের ব্যাপারটা হল এ রকমই। কোনও কিছু পছন্দ না হলেই বলবেন সংবাদমাধ্যম বিকিয়ে গিয়েছে।”
সোমনাথ ভারতী তথা অরবিন্দের সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ নিয়েই আজ দিনভর সরগরম ছিল রাজধানীর রাজনীতি। এমনিতেই দিল্লিতে ধর্না ও দলীয় নেতা সোমনাথ ভারতীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে আপ নেতৃত্বের সমালোচনায় বিড়ম্বনায় দল। গত এক সপ্তাহে প্রতি দিনই কোনও না কোনও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন দিল্লির আইনমন্ত্রী। বিদেশিনি নিগ্রহ, পুলিশকে কটূক্তি, সমন সত্ত্বেও মহিলা কমিশনে অনুপস্থিতি একের পর এক ঘটনায় সোমনাথের নাম জড়ানোর পর আজ সংবাদমাধ্যম বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করে চলতি বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেন তিনি। বিদেশি মহিলা নিগ্রহের ঘটনায় বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি তাঁর ইস্তফার দাবি তুলেছে মহিলা কমিশনও। আজ সকালে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খেপে ওঠেন দিল্লির আইনমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্নে তিনি জানতে চান, এই প্রশ্ন করার জন্য মোদী (নরেন্দ্র মোদী) কত টাকা দিয়েছেন? ওই মন্তব্য ঘিরে ফের একপ্রস্থ সমালোচনা শুরু হওয়ায় দু’ঘণ্টার মধ্যেই নিজের অবস্থান বদলান সোমনাথ। ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, “ভুল করে বলে ফেলেছি। ওই কথা বলা উচিত হয়নি। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।”
সোমনাথের মতোই আজ সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণে পিছিয়ে ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালও। সতীর্থের ওই মন্তব্য অনুচিত বলে ব্যাখ্যা করেও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনায় সরব হন তিনি। খোদ সাংবাদিকেরা আমায় বলছেন আপের বিরুদ্ধে খবর করার জন্য তাঁদের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।” পাশাপাশি সোমনাথের সমর্থনে তিনি বলেন, “সোমনাথের ওই কথা বলা উচিত হয়নি। তবে সংবাদমাধ্যমের তাঁর পিছু নেওয়া বন্ধ করা উচিত।” এই মন্তব্যের পর আজ আপের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতার অভিযোগ তোলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের মতে, ক্ষমতার অলিন্দে থাকলে সমালোচনাও যে সহ্য করতে হয়, সেই সত্যিটাই এখনও বুঝে উঠতে পারেনি আপ শিবির। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “এত দিন সংবাদমাধ্যম যখন আপের পক্ষ বলছিল তখন কোনও অসুবিধা ছিল না। এখন বিপক্ষে বলতেই সমস্যা।”
আজ কেবল সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করাই নয়, একই সঙ্গে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডনেও তৎপর হন কেজরিওয়াল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ধর্নায় বসায় আজ নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে নৈরাজ্যের অভিযোগ আনেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি। এমনকী ওই ধর্নাকে মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি সুপ্রিম কোর্টও। সব মহল থেকে সমালোচনা শুরু হওয়ায় আজ প্রাক্ প্রজাতন্ত্র দিবসের এক অনুষ্ঠানকেই জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন আমি ধর্নায় বসে সংবিধান বিরোধী কাজ করেছি। কিন্তু আমি ফের এক বার সংবিধান পড়লাম। কিন্তু সেখানে কোথাও লেখা নেই যে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসতে পারবেন না। বরং আমার ধর্নায় ১৪৪ ধারা জারি করা সংবিধান বিরোধী।” জেটলি আজ অভিযোগ করেন, “দিল্লির মন্ত্রীরা সচিবালয় ছেড়ে রাস্তায় ধর্নায় নেমে আইন ভেঙেছেন।” জবাবে কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, “সচিবালয় থেকে যে কাজ হয়, রাস্তা থেকেও তা হতে পারে। প্রয়োজনে আমি আবার পথে নামব।” একই সঙ্গে তিনি আজ দাবি করেছেন, তাঁর এক মাসের সরকারে দিল্লিতে দুর্নীতি অনেক কমে গিয়েছে। অটোচালক, চা বিক্রেতারা তাঁকে জানিয়েছেন পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দুর্নীতি একেবারে মুছে দিতে আগামী মাসে জন লোকপাল বিল নিয়ে আসবে সরকার।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.