হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঠিক ছিল, আলিপুর আদালতে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে কোনও সরকারি হোমে। কিন্তু শনিবার দুপুরে আদালতে বিচারকের ঘরে যাওয়ার ঠিক পরেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়লেন খিদিরপুর-কাণ্ডের নির্যাতিতা তরুণী। সে জন্য তাঁকে আবার ভর্তি করানো হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার সেই বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে ওই তরুণী গত সোমবার থেকে ভর্তি ছিলেন।
পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসার পর ২১ বছরের ওই তরুণীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং তাঁর তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা নেইএ কথা জানিয়ে শনিবার দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই তরুণীকে ছাড়া হয়। এর পর লালবাজারের গোয়েন্দারা তাঁকে আলিপুর আদালতে নিয়ে যান। আদালত সূত্রের খবর, বিচারকের সামনে ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আর্জি জানায় পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই তরুণীকে সরকারি হোমে রাখার অনুমতি পেতে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ ওই তরুণীকে আলিপুর আদালতে ৯ নম্বর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত সূত্রের খবর, বিচারক তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করার আগেই ফের অসুস্থ বোধ করেন ওই তরুণী। এতটাই যে, তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বের করে আনা হয়।
বেলা তখন প্রায় তিনটে। আদালত চত্বরেই পুলিশের একটি গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন ওই তরুণীর মা। হঠাৎই ভিতর থেকে একটি খবর পেয়ে তিনি দৌড়ে আদালতের ভিতরে ঢুকে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন তিনি। তার পর উঠে যান পুলিশের ওই গাড়িতে। তাঁর পিছু পিছু নিয়ে আসা হয় ওই তরুণীকেও। দেখা যায়, শরীরের অর্ধেকই মোড়া রয়েছে মোটা শালে। তার মধ্যে এক রকম নেতিয়ে পড়েছেন ওই তরুণী। শালের ভিতর থেকে অস্পষ্ট আওয়াজও শোনা যাচ্ছিল। আদালত চত্বর থেকে প্রায় পাঁজাকোলা করে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেন পুলিশকর্মীরা। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি হাসপাতালে।
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ওই তরুণীর বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হল, তিনি এখনও রুগ্ণ ও দুর্বল। মনে হয়, সে জন্য আদালতে গিয়ে সমস্যা হয়।”
পুলিশি সূত্রের খবর, খিদিরপুর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মহম্মদ হামিদ ওরফে রাজ ধরা পড়লেও ওই তরুণীর সঙ্গে এখনও ঠিক মতো কথা বলতে পারেননি তদন্তকারীরা। ফলে, জেরায় রাজ যা জানিয়েছে, তার ভিত্তিতেই এখনও পর্যন্ত তদন্তে এগোতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। এক পুলিশকর্তার কথায়, “রাজ জেরায় সত্যি কথা বলছে কি না, তা জানার জন্য তরুণীর সঙ্গে কথা বলা জরুরি। তা হলে আরও অনেক তথ্য মিলতে পারে।”
হাসপাতাল থেকে ওই তরুণীকে ছাড়ার খবর পেয়ে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন তদন্তকারীরা। এমনকী, হাসপাতাল সূত্রে তাঁরা খবর পান, শুক্রবার রাতে ওই তরুণী নানা রকম খাদ্য, পানীয়, এমনকী পানমশলারও আবদার করেন। পানীয় ও পানমশলা সঙ্গত কারণে তাঁকে হাসপাতালে না দেওয়া হলেও ওই তরুণীকে তাঁর পছন্দসই খাবার দেওয়া হয়। মিলিয়ে গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, শনিবার হোমে পাঠানোর আগে এক প্রস্থ কথা বলা যাবে ওই তরুণীর সঙ্গে। কিন্তু আদালতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে সব কিছুই হল না। |