আঠারো পেরিয়েই বিয়ে করবে ভাগ্য
বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য পাত্রের যখন তর সইছে না, পাত্রী তাকিয়ে ক্যালেন্ডারের দিকে। তার সাফ কথা, আঠারো বছর না হলে সে বিয়েই করবে না।
পুরুলিয়ার চাকোলতোড় গ্রামের বছর ষোলোর কিশোরী ভাগ্য সহিস বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে গত বছর মার্চ থেকে। যে ছেলেটির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই তার। কিন্তু এ বার তার মাধ্যমিক। আঠারোও হয়নি। মেয়ের ইচ্ছে, মাধ্যমিকের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। রেখা কালিন্দী-আফসানা খাতুনদের পরে ফের নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তাদেরই জেলার মেয়ে।
শ্যামলা ছোটখাটো চেহারার ভাগ্যকে দেখে এমনিতে তার জেদের বহর বোঝার উপায় নেই। কিন্তু মুখ খুললেই তা দিব্যি ঠাহর হয়। শুক্রবার কলকাতার রবীন্দ্রসদন মুক্তমঞ্চে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সে জানিয়ে দেয়, কী ভাবে নিজের বিয়ে রুখেছে। সংস্থাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪৭টি গ্রামে নাবালিকাদের বিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। সংস্থার তরফে দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যা প্রচার করছি, তা হাতে-কলমে করে দেখাচ্ছে ভাগ্য। তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শোনার জন্যই এই আমন্ত্রণ।”
ভাগ্যের সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন তার পাড়াতুতো দাদা ঘাসিরাম রেওয়ানি এবং মামা বিকাশ সহিস। মেয়েটি জানায়, তারা ছয় বোন এক ভাই। বাবা তুলসী সহিস দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালান। সব বোনই পড়াশোনা করে। সে বড়। ভাই সব থেকে ছোট। বয়স মাত্র এক বছর। নবম শ্রেণিতে ওঠা ইস্তক তাকে বিয়ের পিঁড়িতে তোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে বাড়িতে। তার মামার কথায়, “কী আর করা যাবে? গ্রামে তো এটাই রীতি। তা ছাড়া, বড় মেয়ের বিয়ে তাড়াতাড়ি না-দিলে বাকিদের বিয়ে কী ভাবে দেবেন জামাইবাবু? সেই কারণে তিনি বিয়ের তোড়জোড় করছিলেন।”
কয়েক মাসের চেষ্টায় পাত্রও যোগাড় হয়ে যায়। পাত্রের বাড়ি একই গ্রামে। ঠিক হয়, ২০১৩-র মার্চে বিয়ে হবে। বিকাশবাবু জানান, ভাগ্যের বাবা পাত্রপক্ষকে পণের টাকার অধিকাংশ মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ঠিক ছিল, বিয়ের সময়ে বাকিটা দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বেঁকে বসল ভাগ্য নিজেই। চাকলতোড় হাইস্কুল সূত্রের খবর, নাবালিকাদের যাতে বিয়ে না দেওয়া হয় তার জন্য সেখানে পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনের তরফে প্রচার চলে। ছাত্রীদের স্কুল থেকে চাইল্ড লাইনের ফোন নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়। ভাগ্য সেই নম্বরেই ফোন করে। সেখান থেকে স্বেচ্ছাসেবকেরা এসে বাড়ির লোককে বোঝাতে শুরু করেন।
ভাগ্যর কথায়, “বাবা-মাকে বলেছিলাম, ১৮ বছর না-হলে বিয়ে করব না। সেটা বেআইনি। পড়াশোনা করে বেআইনি কাজ আমি করতে পারব না। চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে বাবা-মাকে, পাত্রকেও বোঝানো হয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, বিয়ে আপাতত বন্ধ থাকবে।” এর পরেও অবশ্য পাত্রপক্ষ চাপ দিচ্ছে। ভাগ্যের অভিযোগ, “ওদের দাবি, এই মাসেই বিয়ে করতে হবে। না-হলে ওরা পণ বাবদ যে টাকা নিয়েছিল তা ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু আমার পক্ষে এখন বিয়ে করা অসম্ভব। আঠারো তো হয়ইনি, সামনেই মাধ্যমিক।”
মেয়ের জেদের কাছে অবশ্য নতি স্বীকার করেছে তার পরিবার। ভাগ্যের দাদা ও মামা বলেন, “গ্রামে-গঞ্জে পাত্রপক্ষ পণের টাকা ফেরত দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলে অসুবিধা হয় বইকি। কিন্তু মেয়ে নিজেই যখন চাইছে না, আমরা বেআইনি কাজে মদত দিই কী করে?” ভাগ্যের অবশ্য আশা, পাত্র শেষ পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করবে। লাজুক মুখে সে বলে, “তার বয়সও তো মোটে কুড়ি। সে যদি আমার জন্য অপেক্ষা করে, আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই।”
আর? ভাগ্য বলে, “মাধ্যমিকে ভাল ফল করতে চাই। বিয়ের পরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.