মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা ১৫ মিনিট। হঠাৎ বেজে উঠেছিল মোবাইলটা। ওপ্রান্ত থেকে ছেলের গলা পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল প্রতিমাদেবীর। তিনি কিছু বলার আগেই ছেলে বলেছিল, “তোমার শরীর ভাল তো? আজ খুব ব্যস্ত। কাল সকালে তোমাকে আবার ফোন করব।” এর পরেই কেটে গিয়েছিল লাইনটা। কিন্তু সেই ফোনের বদলে যে ছেলের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে ফোন আসবে তা কে জানত। পরদিন
|
ভাস্কর। |
সকালে কাশ্মীরে সিআরপিএফ দফতর থেকে এক অফিসার ফোন করে জানিয়েছিলেন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন জওয়ান ভাস্কর পাল (২১)।
শুক্রবার সকালে কফিনবন্দি ছেলের মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে এই কথাগুলিই বার বার বলে উঠছিলেন প্রতিমাদেবী। কাঁদছিলেন প্রতিবেশীরাও। হাবরার বেড়গুম বেলতলায় এক কামরার এক চিলতে পাকা ঘর ভাস্করদের। গোটা পরিবারে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। বাবা শ্যামল পাল সামান্য জমিতে চাষবাস করেন। বোন অর্পিতা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সংসারের অভাবের জন্য গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ভাস্কর পড়তে পড়তেই সিআরপিএফে চাকরি নেয়। শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল বাড়ির সামনে ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। লোক এসেছে আশপাশের এলাকা থেকেও। |
পরিবার সূত্রে জানা গেল, কাশ্মীরের কাজিকুণ্ডে কর্মরত ছিলেন ভাস্কর। মঙ্গলবার সন্ধে সওয়া সাতটা নাগাদ মাকে ফোন করেন। তখন বলেন ব্যস্ত থাকায় পরদিন, বুধবার সকালে ফোন করবেন। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর এসে পোঁছয়। কাশ্মীরের সিআরপিএফ দফতর থেকে ফোনে এক অফিসার জানান, কাজিকুণ্ড থেকে তাঁদের ক্যাম্প সরানোর কাজ চলছিল। ভাস্কর ট্রাকে মাল নামানোর কাজ করছিলেন। সেই সময় আর একটি ট্রাক এসে ওই ট্রাকটিকে ধাক্কা মারলে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ছেলের শোকে দিনভর চুপচাপ ছিলেন শ্যামলবাবু। শেষকৃত্যর সময় হঠাৎ বলে উঠলেন, “সন্তান শোকের মতো শোক কিছুতে হয় না। তবে দেশের কাজে গিয়ে ওর মৃত্যুতে আমাদের গর্বও হচ্ছে।”
২০১২ সালের মার্চে সিআরপিএফে চাকরি পান ভাস্কর। ট্রেনিং শেষ করে সেপ্টেম্বর নাগাদ বাড়িতে এসেছিলেন ১৯ দিনের ছুটি নিয়ে। বাড়িতে সেই তাঁর শেষ আসা। ২০১৩ সালে তাঁর পোস্টিং হয় কাজিকুণ্ডে। বাবলু ঘোষ নামে তাঁর এক আত্মীয় বলেন, “গত রবিবার আমাকে ও ফোন করেছিল। তখন আমরা গোপলাগরের বিভূতিভূষণ ঘাটে পিকনিক করছিলাম। ও সব শুনে খুব খুশি হয়ে জায়গাটা সম্পর্কে খোঁজ নেয়। তার পর বলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসে সবাইকে নিয়ে আবার ওখানে পিকনিক করবে। কিন্তু তা আর হল না।” প্রতিবেশী ও বন্ধু অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “ও খুব ভাল দৌড়তো। চাকরি পাওয়ার পরে বলেছিল ঘরটা ভাল করে তৈরি করবে। মা-বাবার কথা খুব ভাবত। কে কেমন আছে ফোন করে জিজ্ঞাসা করত। শান্ত ছেলে হিসাবে সুনাম ছিল পাড়ায়। একজন ভাল বন্ধুকে আজ হারালাম।”
হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভাস্করের মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবারের শোক নয়। এ শোক গোটা গ্রামের। ওর মতো ছেলের জন্য আমরা গর্বিত।” |