মাছ হারাচ্ছে মহানন্দা।
খলিসা, চেলি চেপ্টি হারিয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। এখন ট্যাংরা, মৌরলার মতো মাছেরও দেখা নেই। অথচ বছর কয়েক আগেও মহানন্দার খাতে জাল ফেললে এ সবই উঠত অনায়াসে।
তারা গেল কোথায়?
সরল এই প্রশ্নের উত্তরটা ঈষৎ জটিল। দূষণে প্রায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে নদী। সম্প্রতি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের রিপোর্টে তারই প্রমাণ মিলেছে। পর্যদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানন্দায় দূষণের মাত্রা অস্বভাভিক বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তার ফলে শুধু বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নয়, বিভিন্ন জলজ প্রাণীরও মৃত্যু হচ্ছে অহরঙ।
কিন্তু মহানন্দার দূষণ রুখতে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান-এর কী হল?
ইতিমধ্যেই সে প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দূষণের মাত্রা হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা, যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে। হিলকার্ট রোডে মহানন্দা সেতুর নিচে এবং লাগোয়া নদীখাতে থাকা খাটালই দূষণের অন্যতম কারণ। শিলিগুড়ির অন্তত পাঁচটি ওয়ার্ডের লাগোয়া বস্তির যাবতীয় বর্জ্য এসে পড়ছে মহানন্দায়। শহরের নিকাশি বর্জ্যের অধিকাংশের ঠিকানাও ওই নদী খাত। |
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর ১০০ মিলিলিটার জলে ৫ হাজার এমপিএন (মোস্ট প্রোবব্ল নাম্বার) থাকার কথা সেখানে মহানন্দায় রয়েছে ৮০ হাজার। পচাগলা, পচনশীল বস্তু বেশি থাকায় নদীর জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এই দূষণ মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্বিদের ক্ষতি করছে। দূষণের জন্য অন্তত ২০টি প্রজাতির নদীয়ালি মাছ মহানন্দায় আর পাওয়া যায় না বলে দাবি করেছেন পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন’ (ন্যাফ)। ওই সংস্থার পক্ষে অনিমেষ বসর দাবি, “এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের সব চেয়ে দূষিত নদী মহানন্দা।”
বছরের বিভিন্ন সময় দূষণ মাত্র পরিমাপ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদ কর্তা গৌতম পাল বলেন, “বছরের বিভিন্ন সময় দূষণের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ওই রিপোর্ট পরিবেশ দফতরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডে পাঠানো হয়। তার ভিত্তিতেই মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের মতো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।” বাসিন্দাদের সচেতন করতে এ বছর উত্তরবঙ্গ উৎসবে এ নিয়ে সতেচনতা প্রচার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শহরের মধ্যে এই নদীর দূষণ ঠেকানোর বিষয়টি পুরসভার দেখা উচিত। নদী খাত থেকে খাটাল সরানো, নদীতে আবর্জনা না ফেলা এটা তারা দেখতে পারছে কই!”
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আর্থিক কারণে পুরসভার তরফে মহানন্দার দূষণ রোধে বড় প্রকল্প নেওয়া সম্ভব নয়। পুজোর সময় বিজর্সনের দিন, ছট পুজোর পরে নদী সাফ রাখতে পুরসভা ব্যবস্থা নেয়। কখনও সচেতনতা প্রচারও চালানো হয়। এসজেডিএ তরফে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া হলেও তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। রাজ্য সরকারের তরফে দূষণ রোধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”
পর্যদের তথ্য বলছে, মানুষ এবং প্রাণীর মূত্র থেকে যে ব্যাকটেরিয়া (ফিক্যাল কলিফর্ম) মহানন্দায় মিশছে প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে তার পরিমাণ ৮০ হাজার এমপিএন বা তার বেশিও থাকে। ২০১০ সালে বিভিন্ন সময় তা ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজারের মতো থাকত। ওই বছর জানুয়ারি এবং অক্টোবর মাসে সমীক্ষায় বিভিন্ন উৎসের ব্যাকটেরিয়া মিলিয়ে পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার, ৩৪ হাজার। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকা নদীর পক্ষে স্বাস্থ্যকর। মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ তা ব্যবহার করে। নদীতে পচা-গলা দেহাবশেষ বা পচনশীল কিছু থাকলে ওই অক্সিজেনের অধিকাংশ খরচ হয়ে যায় পচন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে। তাতেও নদী দূষিত হয়ে পড়ে।
|
এল না মা চিতাবাঘ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
শুক্রবারেও দুই শাবকের কাছে আসল না মা চিতাবাঘ। ডুয়ার্সের ওয়াশাবাড়ি চা বাগানের ঝোপে চিতাবাঘের দুই শাবককে দেখতে পান চা শ্রমিকরা। গত চারদিন ধরে স্কোয়াডের কর্মীরা সকালে এবং রাতে গিয়ে চিতাবাঘের শাবক দুটিকে দেখে আসলেও মা চিতাবাঘ আসেনি। মালবাজার বন্যপ্রানী স্কোয়াডের রেঞ্জার ফণীন্দ্রনাথ রায় জানান, দ্রুত মা চিতাবাঘ না আসলে চিতাবাঘের শাবকগুলির সমস্যা বাড়বে। আমরা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছি। |