তিন মাসের জীবন দিয়ে পাঠানো হয়েছিল তাকে। কিন্তু প্রকৃতির আশীর্বাদ তার আয়ু বাড়িয়েছে। ভাল কাজের সুবাদে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য হয়েছেন জন্মদাতারাও। আজ, শনিবার সেই বাড়তি আয়ু নিয়েই মঙ্গলের মাটিতে দশ বছরে পূর্ণ করছে রোভার অপরচুনিটি ওরফে সুযোগ। শুধু তাই নয়, জন্মদিনের আগে জন্মদাতাদের জন্য এক টুকরো পাথর আবিষ্কার করে পাঠিয়েছে সে। এমন উপহার পেয়ে চমকে গিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসার বিজ্ঞানীরাও।
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলে পা রেখেছিল সুযোগ। ঠিক ছিল, ৯০ দিন লাল গ্রহের মাটিতে কাজ করবে সে। কিন্তু সেখানে মাটি-পাথর গবেষণা করতে করতে দশ বছর পেরোতে চলেছে সে। বার্ধক্যও এসেছে তার শরীরে। নাসা সূত্রের খবর, একটি চাকায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। শরীরে বসানো দু’টো যন্ত্র কাজ করছে না। একটি রোবট-হাতও শক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বুড়ো হাড়েও যে ভেল্কি দেখানো যায়, তার প্রমাণ সদ্য আবিষ্কৃত এক টুকরো পাথর। কী সেই পাথর?
কেনই বা তাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা? |
নাসা জানিয়েছে, নতুন খুঁজে পাওয়া পাথরটি প্রায় ৪০০ কোটি বছর পুরনো। তাতে শুধু বেশি পরিমাণে জল থাকার প্রমাণ মেলেনি, মিলেছে কম অম্লত্বের প্রমাণও। এই আবিষ্কার নিয়ে ‘অপরচুনিটি মিশন’-এর ডেপুটি প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর রেমন্ড আরভিডসন ‘সায়েন্স’ পত্রিকার প্রবন্ধেও এই আবিষ্কারকে নতুন দিশা বলেছেন। তাঁর কথায়, “লাল গ্রহের মাটিতে অণুজীবের অস্তিত্ব ছিল, এই আবিষ্কার সেই সম্ভাবনাকে জোরালো করেছে।” কারণ, মাটি-পাথরে অম্লত্বের পরিমাণ যত কম হবে, ততই কোনও জীবের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে এনডেভার নামে একটি গহ্বরে পাথরটিকে খুঁজে পেয়েছে সে।
এই পাথর খুঁজে পাওয়ার পিছনে একটি ছোট্ট গল্প শুনিয়েছেন নাসার মুখপাত্র ডোয়েন ব্রাউন। ২০১০ সালে নাসার মার্স রিকনিসান্স নামে মঙ্গলের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ওই গহ্বরে লৌহ মিশ্রিত স্মেকটাইট নামে একটি খনিজ পদার্থের কথা জানা যায়। তার পর ২০১১ সালে সুযোগকে ওই গহ্বরে পাঠানো হয়। লাগাতার খোঁজ চলার পর অবশেষে চলতি মাসের ৮ তারিখে ওই খনিজ মিশ্রিত পাথরটি মেলে। এত দিন সময় লাগল কেন?
নাসার এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, সুযোগের ডান দিকের চাকা আটকে যাওয়ায় সেটি নড়াচড়া করছিল না। সম্প্রতি চাকাটি সরানো গিয়েছে। তার ঘষাতেই মাটি খাবলে উঠে গিয়ে ওই পাথরটি বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্যও! এর পরিপ্রেক্ষিতেই নাসার মঙ্গল অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী মাইকেল মেয়ার বলছেন, “যত দিন যাচ্ছে, ততই মঙ্গল থেকে নতুন-নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে।”
সুযোগের দীর্ঘায়ুও চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। কী রকম? |
নাসা সূত্রের খবর, মঙ্গলে ধুলো ঝড়ের দাপটে তিন মাসের মধ্যেই সুযোগের সৌরশক্তির প্যানেল নষ্ট হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ঝড়ে সৌরশক্তির প্যানেলে ধুলো জমলেও, হাওয়ার দাপটে তা সরেও গিয়েছে। তার ফলেই সূর্যের আলো থেকে জীবনী শক্তি মিলেছে সুযোগের।
তবে সুযোগের দীর্ঘায়ু হয়ে ওঠার পথে বাধাও আসছে। এক দিকে তার ‘মেমরি’ চিপে যেমন তথ্যের ভার চেপে বসছে, টান ধরছে নাসার ডলার সংস্থানেও। একটি সূত্রের খবর, প্রতি বছরে অপরচুনিটি ওরফে সুযোগের পিছনে ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার খরচ হয়। বর্তমানে সুযোগের ‘বোন’ মঙ্গলগাড়ি, মিস কৌতূহলও কাজ করছে মঙ্গলে। তার জন্যও আলাদা খরচ রয়েছে। যদিও নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, “আমরা জানি, কোন প্রকল্প কতটা কার্যকরী। সেই হিসেবেই ডলার বরাদ্দ করা হয়।”
নাসার এই বক্তব্য থেকেই ইঙ্গিত মিলছে, আরও কিছু দিন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চান মার্কিন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কত দিন?
সেটাই দেখার।
|