গত অগস্টে লাল গ্রহের মাটি ছোঁয়ার পর থেকে একের পর এক নতুন তথ্য জুগিয়েছে কিউরিওসিটি রোভার। যা অভিযানের লক্ষ্য অনেকটাই সফল করেছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। এ বার সেই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই আরও তিনটি অভিযানের পরিকল্পনা করেছে নাসা। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবার্ষিকী অধিবেশনে যোগ দিতে নাসার মঙ্গল অভিযানের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ জানান, আগামী সাত বছরে তিনটি মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।
অমিতাভবাবু জানিয়েছেন, রোভার ‘কৌতূহল: মঙ্গলের মাটিতে ঘুরে ফিরে পাথর সংক্রান্ত নানা তথ্য পাঠিয়েছে। খোঁজ দিয়েছে নদীখাতেরও। সেই সব তথ্য মাথায় রেখেই চলতি বছরেই মঙ্গলে একটি উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। তার দু’বছর পর ফের মঙ্গলে একটি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মহাকাশযানটি মঙ্গলের মাটিতে না নেমেই ওই গ্রহের মাটি সংক্রান্ত ছবি পাঠাবে। ২০২০ সালে ফের মঙ্গলে রোভার পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে অমিতাভবাবু জানিয়েছে। তাঁর কথায়, “মহাকাশ অভিযানগুলি একটির সাফল্যের উপরে পরেরটি দাঁড়িয়ে থাকে।” ফলে কোনও একটি অভিযান বাতিল হলে তার প্রভাব পরেরটির উপরে পড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
এ দিন বিজ্ঞান কংগ্রেসের বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামাঙ্কিত একটি আলোচনাচক্রে নাসার মঙ্গল অভিযান নিয়ে বক্তৃতা করেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, “মঙ্গলে অভিযান চালানো কঠিন। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন রোভারকে লাল গ্রহের মাটিতে অবতরণ করানো।” কেন?
অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে তথ্য পৌঁছতে মিনিট দশেক লাগে। তাই অবতরণের আগে যদি কোনও গণ্ডগোল হয়, তার তথ্য গবেষণাগারে পৌঁছনোর আগেই মহাকাশযান ধ্বংস হয়ে যাবে।” সেই কারনেই কিউরিওসিটি রোভারের বা ‘কৌতূহলের’ অবতরণের আগে ‘স্কাই-ক্রেন’ ব্যবহার করার মতো সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান। এই প্রথম কোনও মহাকাশযানকে এ ভাবে অবতরণ করানো হল। তা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে আচমকা বিপদের আশঙ্কায় নাসার কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞানীদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল বলে অমিতাভবাবু জানান।
নাসা কি এ বার মঙ্গলে মানুষ পাঠাবে? এ বিষয়ে এখনই কিছু ভাবছে না ওই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। মঙ্গল অভিযানের বিজ্ঞানীদলের প্রধান অমিতাভবাবু জানান, আগামী দশ বছরের মধ্যে এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। কারণ, মহাকাশ অভিযানে মানুষ পাঠানো অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। তার চেয়ে চলমান একটি গবেষণাগার (কৌতূহলের মতো) পাঠানো অনেক ভাল। তিনি বলেন, “কোনও গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে বেরোতে সব চেয়ে বেশি খরচ হয়। মানুষ পাঠালে তাঁকে ফিরিয়ে আনার খরচও বহন করতে হয়। রোভারের ক্ষেত্রে সেই খথরচ এড়ানো সম্ভব। কারণ, কাজ ফুরিয়ে গেলে রোভারটি লাল গ্রহেই পড়ে থাকবে।” এ ছাড়াও, দীর্ঘ ছ’-সাত মাস মানুষের পক্ষে ভিন্ গ্রহে থাকাটা সমস্যার। রোভারের ক্ষেত্রে সেটা নেই বলেই অমিতাভবাবুর দাবি।
শনিবারই চাঁদে রোভার পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীরা। সেখানেও প্রশ্ন উঠেছিল, মানুষ পাঠানো হচ্ছে না কেন? ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, মানুষ পাঠানোর আগে তাঁরা প্রযুক্তি ঝালিয়ে নিতে চান। এ দিন মঙ্গলে মানুষ পাঠানো নিয়ে অমিতাভবাবুর বক্তব্য ইসরোর রোভার অভিযানের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিল বলে বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন। |