তাঁদের কারও বয়স ৮৫। কারও বা ৯০। কারও ভরসা হুইলচেয়ার, কারও বা লাঠি। কেউ আবার বিছানা থেকে উঠতেই পারেন না। এঁদের সকলেরই ঠিকানা ছিল কানাডার কিউবেকের লিল ভের্তের এক বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু গত রাতের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে সেই বৃদ্ধাশ্রম। স্থানীয় প্রশাসনের আশঙ্কা, অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নেই বৃদ্ধাশ্রমের প্রায় ৩০ জনের। “কাল রাত সাড়ে বারোটায় বৃদ্ধাশ্রমের ভিতর থেকে আর্তনাদ কানে আসে। বেরিয়ে এসে দেখি খড়ের গাদার মতো করে জ্বলছে গোটা বাড়িটা”, বললেন পাসকল ফিলিয়ন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। আট মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। প্রতিকূল আবহাওয়া উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে বলে জানান দমকল কর্তৃপক্ষ। কিউবেকের তাপমাত্রা এখন শূন্যের থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। তুষারপাত চলছে। সঙ্গে রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। আগুন নেভাতে সেই হাওয়াও ভীষণ ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দমকল সূত্রে খবর। তার মধ্যেই অন্তত ২০ জন আবাসিককে নিরাপদে বাইরে আনতে সক্ষম হন দমকলকর্মীরা। কিন্তু ওই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন প্রায় ৫০-৫০ জন আবাসিক। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশির খোঁজ নেই। দমকল প্রধান ইয়োভো চ্যারনের আফসোস, “রাত তখন একটা। পুরো বাড়িটাই আগুনের গ্রাসে। কিছুতেই বাড়িটার ভিতর পর্যন্ত যেতে পারলাম না। ওঁদের উদ্ধারও করতে পারলাম না।”
একই অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের বাড়ির লোকের। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন জ্যাক বেরুব। তাঁর ৯৯ বছরের মা ওই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন। “বাড়িটার যে কোণে মায়ের ঘর, সে দিকেই গিয়েছিলাম। কিন্তু পুরো বাড়িটাই জ্বলছিল। আমার মা সেখানেই পুড়ে মরলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া, আর কিছুই করতে পারলাম না,” বললেন জ্যাক।
কী ভাবে লাগল ওই আগুন? শহরের অস্থায়ী মেয়র জিনেট ক্যারন জানালেন তদন্ত রিপোর্ট না এলে এ বিষয়ে কিছু জানানো সম্ভব না। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “বাড়িটিতে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা আশা করছি যাঁরা নিখোঁজ, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো তাঁদের পরিবারের কাছে গিয়েছেন। তাই মৃতের সংখ্যা নিয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে চাই না।” তবে মেয়র মুখে যা-ই বলুন না কেন, মৃতের সংখ্যা যে বাড়তে চলেছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, আবাসিকদের বেশির ভাগের বয়স পঁচাশির উর্ধ্বে। তাঁরা অনেকেই চলৎশক্তিহীন। দমকলই যেখানে মাত্র ২০ জনকে উদ্ধার করতে পেরেছে, সেখানে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কারও সাহায্য ছাড়া আগুনের গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসবেন, এমনটা ভাবা ভুল। তবে পুলিশ প্রধানের কথায়, “আমরা আশা ছাড়ছি না।” দমকলও উদ্ধার কাজ জারি রেখেছে। |