শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের (‘হারানো সুর’, ১১-১) উল্লেখিত বাদ্যযন্ত্রগুলির চর্চা সত্যই ক্রমশ বিলীয়মান। আগে শাস্ত্রীয় সংগীতের আসরে শাস্ত্রীয় গানের সঙ্গে (ধ্রুপদী/খেয়াল) সারেঙ্গির সহযোগিতা এক অন্য আমেজ নিয়ে আসত। পরিবর্তে এখন হারমোনিয়াম সহযোগিতার ব্যাপক প্রচলন আর সেই অনুভূতি স্পর্শ করে না। শাস্ত্রীয় সংগীতে নামী গায়কগণ হারমোনিয়ামকে অতিরিক্ত গুত্ব দেওয়ায় তানপুরার গুরুত্ব ও ভূমিকা আসরে প্রায় অপাংক্তেয় হয়ে যায়। গায়নকালে কোন স্বরে দাঁড়িয়ে হারমোনিয়াম বাদককে যখন সেই স্বরটি জোরে বাজাতে বলেন (পড়ুন নির্দেশ দেন) তখন সন্দেহ জাগে স্বরের উপর শিল্পীর যথোচিত নিয়ন্ত্রণ আছে তো! বর্তমানে শাস্ত্রীয় গানে সারেঙ্গির সহযোগিতা প্রায় উঠেই গেছে। সারেঙ্গি কোনও কালেই বাঙালির পছন্দের যন্ত্র ছিল না। তাই বাঙালি সারেঙ্গিবাদক প্রায় নেই বললেই চলে। হয়তো বা এই কারণেই সারেঙ্গিবাদক ওস্তাদ সাগিরুদ্দিন খান শেষের দিকে গান শেখাতে শুরু করেছিলেন। বাঙালি সারেঙ্গিবাদক গুরুর অভাবও বাঙালিকে সারেঙ্গির মতো যন্ত্র শেখা থেকে বিমুখ করেছে বলে মনে হয়। সারেঙ্গির তুলনায় এসরাজ-দিলরুবার ব্যাপারটা অতটা করুণ না-হলেও খুব আশাব্যঞ্জকও নয়।
শঙ্করলালবাবুর লেখায় দুটি জায়গায়, হয়তো অনিচ্ছাকৃত, একটু ভুল থেকে গেছে। কুমারপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় হবে মুখোপাধ্যায়। আর অসাধারণ এসরাজ শিল্পী ছিলেন রণবীর নয়, রণধীর রায়। শান্তিনিকেতনের রণধীর রায়ের ছাত্র শুভায়ু সেনশর্মার এসরাজের কাজ ও শৈলী তাঁর গুরুর পরম্পরা অনুসারী। শান্তিনিকেতনের সুনীল কবিরাজ অত্যন্ত ভাল মানের এসরাজ শিল্পী। শাস্ত্রীয় সংগীতের আসরে এঁদের বাদন বিশেষ শুনতে পাই না। হিন্দুস্থানি সংগীতে বর্তমানে বীণার কথা বাদই দিলাম।
শ্যামলকুমার চক্রবর্তী। আন্দুল, হাওড়া |