সংঘর্ষের জেরে পাঁচ জন ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন। আহত চারশোরও বেশি মানুষ। পরিস্থিতি ফের জটিল হচ্ছে। আর তাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে দেখা করতে তৎপর হলেন প্রতিবাদীরাই। রাজধানী কিয়েভে গত দু’মাস ধরে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে চলছে।
প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে এক নয়া আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট। বলা হয়, মাথা বাঁচাতে হেলমেট পরে আন্দোলন চলবে না। জমায়েতে মাইক ব্যবহারও নিষিদ্ধ। তা ছাড়াও পুলিশের আগাম অনুমতি ছাড়া বড় কনভয় নিয়ে যাওয়া যাবে না কোথাও। এই আইন বলবৎ করার পরেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কিয়েভ। তার পরে গত কাল সংঘর্ষের বলি হন পাঁচ জন। দু’মাস ধরে বিক্ষোভ চললেও এর আগে এখানে প্রাণহানি ঘটেনি। গত কাল সেটা হওয়ার পরে আরও ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা। ঠিক হয়, পথে নেমে আন্দোলনের পাশাপাশি খোদ প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই আলোচনায় বসবেন তাঁরা। সেইমতো আজ ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। প্রতিবাদীদের মধ্যে রয়েছেন বক্সিংয়ে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভিতালি ক্লিৎস্কো। তিনি বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন না হলে সরাসরি আক্রমণের পথে হাঁটবেন তারা। আর সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন ক্লিৎস্কো নিজেই। |
বুধবার রাতে জ্বলছে কিয়েভের রাস্তা। সে দিনই হিংসার বলি হন ৫ জন। ছবি: এপি। |
বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে দেশের প্রধানমন্ত্রী মাইকোলা আজারভ জানিয়েছেন, সরকার আপসের কথা ভাবতে পারে। তবে প্রতিবাদীদেরও অনমনীয় মনোভাব ছাড়তে হবে। গত বছর নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য-চুক্তি সই করেন। তার পর থেকে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন হাজার হাজার ইউক্রেনবাসী।
এখনও অশান্ত রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রস্থল। চার দিকে আগুন। পুলিশ আর প্রতিবাদীদের সংঘর্ষে পুড়ছে টায়ার। পুরু কালো ধোঁয়ায় মুখ ঢেকেছে কিয়েভ। প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে কথা শুরু হওয়ার আগে ক্লিৎস্কো সরকার এবং প্রতিবাদী দু’পক্ষকেই বলেছেন, আপাতত সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকতে। সরকারের কাছে বিরোধীদের দাবি মূলত তিনটি: প্রথমত, দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ঠেকাতে গত সপ্তাহে সরকার যে বিতর্কিত নয়া আইন এনেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয়ত, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। গত কালই প্রতিবাদীদের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সরকার চাইলে রক্তপাত ছাড়াই এই বিক্ষোভে ইতি টানতে পারে। তা না হলে আক্রমণের কথাই ভাববে সরকার-বিরোধীরা।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের উপরে গুলি চালানো বা প্রতিবাদ করার সাধারণ অধিকার খর্ব করা হলে ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবে তারা। আমেরিকা জানিয়েছে, ইউক্রেনের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারের ব্যর্থতার জন্যই। ইউক্রেনের অবস্থা নিয়ে আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন মাথা গলাচ্ছে, তা নিয়ে বিরক্ত রাশিয়া। রুশ সরকার বলছে, বিরোধীদের মধ্যে কোনও কোনও চরমপন্থী দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। |