|
|
|
|
গোষ্ঠী সংঘর্ষে তপ্ত কেশিয়াড়ি-কেশপুর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পঞ্চায়েত-পুরভোট পেরিয়ে লোকসভা ভোটের প্রাক লগ্নেও তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল অব্যাহত রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ও কেশপুরে।
একশো দিনের কাজ নিয়ে সোমবার কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েতের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল তৃণমূল ব্লক সভাপতি জগদীশ দাস ও জেলা তৃণমূল নেতা বিষ্ণুপদ দে-র গোষ্ঠী। দু’পক্ষের ৮ জন জখমও হন। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে কেশিয়াড়ি মোড় ও বিডিও অফিসের সামনের রাস্তা। সোমবার রাতে ওই দ্বন্দ্বের জেরেই তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের জেলা নেতার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জগদীশ অনুগামীদের অভিযোগ, বিষ্ণুপদবাবুই দাঁড়িয়ে থেকে ওই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সোমবার বিকেলে পঞ্চায়েত অফিসে উপ-প্রধান শেফালি পাহাড়ির জখম হওয়ায় পাল্টা হিসাবে কেশিয়াড়ি হাটের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কল্পনা শিটের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে সূত্রের খবর।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই কেশিয়াড়ি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা অশান্ত হয়ে রয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই উঠে এসেছে জগদীশ ও বিষ্ণুপদ গোষ্ঠীর বিবাদের কথা। বচসা থেকে হাতাহাতি, বা বন্যার ত্রাণ নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। গত ২৩ ডিসেম্বর সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জখম হন ৮ জন। তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই জগদীশ অনুগামী কল্পনা শিটকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করার পরিকল্পনা থাকলেও বিষ্ণুপদ অনুগামীদের আপত্তি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। |
|
কেশিয়াড়িতে ভাঙচুর হওয়া দোকান। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
তবে কিছু দিন ধরেই ওই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ডে অনাস্থা এনে নতুন করে কল্পনা শিটকে সভাপতি করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে আকচাআকচি বাড়ছে দু’পক্ষের। অভিযোগ, জেলা নেতাদের সব জানানোর পরেও কোন্দল মেটেনি।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কল্পনা শিট অভিযোগ করেন, “বিষ্ণুপদ দে ও ফটিক পাহাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের দোকানে ভাঙচুরের পর লুঠপাট করিয়েছে। এমনকী বাবা-মা ও দাদার ছোট দু’টি সন্তানকেও ওঁরা মারধর করেছে।” জেলা তৃণমূল নেতা বিষ্ণুপদ দে অবশ্য ভাঙচুর, মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “এলাকায় ওঁরা বোমাবাজি করছে। মানুষ এ সব মেনে নিতে না পেরে বাড়ি ভাঙচুর করতে পারেন।” যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগদীশ দাস বলেন, “যাবতীয় ঘটনা বিষ্ণুপদ দে-র নেতৃত্বেই হচ্ছে। ওঁরা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের বাড়ি ভাঙচুর, এলাকায় বোমাবাজি করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। দল এ সব বরদাস্ত করবে না।” বিবাদমান দু’পক্ষই থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগ পেয়ে এ দিনই কেশিয়াড়ি পুলিশ জগদীশ অনুগামী অজিত করণ ও বিষ্ণুপদ অনুগামী জয়দেব গিরিকে গ্রেফতার করে।
অন্য দিকে, তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ঘিরে মঙ্গলবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায় কেশপুরের সরিষাকোলার পিতাম্বরচকে। কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয়। প্রতিটি অঞ্চলে একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যা সুরতন্নেসা বিবির অভিযোগ, “আমার অনুপস্থিতিতে একদল লোক বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর-লুঠপাট করে। পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।” পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্যার বক্তব্য, “আমাদের দলের কিছু লোকই হামলা করেছে। ওরা দলেরই দুষ্কৃতী!”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এটা গোষ্ঠী কোন্দলের কোনও ব্যাপার নয়, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে কিছু হয়ে থাকতে পারে। দলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “এটা রাজনৈতিক গোলমাল নয়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি। ওখানে সম্পত্তি নিয়ে শরিকি বিবাদ রয়েছে। সেই বিবাদ থেকে কিছু হয়ে থাকতে পারে।” একই বক্তব্য পুলিশের। পুলিশ জানিয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ওই এলাকায় সামান্য উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল। পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। মৌখিক অভিযোগ ছাড়া এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। |
|
|
|
|
|