মরসুমি চাষের পাশাপাশি অসময়ের সব্জি চাষ নিয়ে উদ্যোগী হচ্ছে আরামবাগ মহকুমা উদ্যানপালন দফতর। এত দিন সব্জি চাষের বিষয়টি মূলত কৃষি দফতরই পর্যবেক্ষণ করত। এ বার সরাসরি উদ্যানপালন দফতরের তত্ত্বাবধানেই আরামবাগ মহকুমার ব্লকগুলিতে সব্জি চাষের দেখভাল হবে। নদীবেষ্টিত আরামবাগ মহকুমায় ব্যাপক সব্জি চাষের সম্ভাবনা মাথায় রেখে গত ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে মহকুমাশাসকের দফতরের নীচের তলার একটি ঘরে উদ্যানপালন দফতরের কাজকর্ম শুরু হয়েছে।
এত দিন কৃষি দফতরকে ধান-আলু-তৈলবীজ ইত্যাদি চাষাবাদের বিরাট ক্ষেত্র সামলে সব্জি চাষের তদারকিও করতে হচ্ছিল। স্বভাবতই সব্জি চাষ কৃষি বিশেষজ্ঞদের বিশেষ নজরদারি পাচ্ছিল না বলে এলাকায় কৃষকদের ক্ষোভ, অনুযোগ ছিল। বিষয়টি মেনে নিয়ে মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “কৃষি বিশেষজ্ঞ হিসাবে সব্জি চাষিরা কোনও অসুবিধা নিয়ে এলে আমরা শুধু পরামর্শটুকুই দিতে পেরেছি। এখন পুরোদমে মহকুমার ব্লকগুলিতে উদ্যানপালন দফতরের পরিকাঠামো হলে চাষিরা উপকৃত হবেন।”
মহকুমা কৃষি দফতরের হিসাবে, আরামবাগ মহকুমায় শীতকালীন সব্জি চাষের এলাকা ৪৬০১ হেক্টর। এর মধ্যে গোঘাটের দু’টি ব্লকে ২৫০০ হেক্টর এলাকায় সব্জি চাষ হয়। খানাকুলের দু’টি ব্লকে ১৬০৬ হেক্টর, আরামবাগে ২৭৫ হেক্টর এবং পুড়শুড়ায় ২২০ হেক্টর। গ্রীষ্মে বোরো চাষের জন্য এর প্রায় অর্ধেক এলাকায় সব্জি ফলান চাষিরা। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, কৃষি দফতর থেকে ১৯৯৬ সালে ফুল-ফল-সব্জিকে আলাদা করে উদ্যানপালন দফতরের জন্ম হয়। এত দিন মহকুমা এবং ব্লক স্তরে দফতরের কোনও পরিকাঠামোই ছিল না, হুগলি জেলার ক্ষেত্রে আরামবাগ মহকুমাতেই প্রথম দফতর চালু হল একজন আধিকারিক এবং একজন অস্থায়ী কর্মী দিয়ে। আরামবাগ মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক হৃষীকেশ খাঁড়া বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা। সেই কাজ চলছে। তবে কর্মী দরকার। নিজস্ব অফিসও দরকার। চন্দননগরের অফিসের পাশাপাশি এক সঙ্গে আরামবাগেরও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সপ্তাহের ক’দিন সময় দেওয়া যাবে সেটাই প্রশ্ন।”
জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক দীপককুমার ঘোষ বলেন, “এখুনি আমরা আরামবাগ মহকুমায় সব্জি চাষের এলাকা বাড়াবার কথা ভাবছি না। উন্নত গুণমানের ফলনে জোর দিচ্ছি। মরসুমি সব্জির পাশাপাশি অসময়ে সব্জি চাষের প্রযুক্তি দিচ্ছি। যেমন, শীতের ব্যতিক্রমী সব্জি ঢেঁড়স-পটল ইত্যাদি। কিংবা গ্রীষ্ম-বর্ষায় ধনেপাতা-কপি প্রভৃতি।” এই ধরনের অসময়ের চাষে ভাল দাম পাওয়া যাবে বলে আশা দীপকবাবুর। আর এই রকম চাষের ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্প-সহ আকর্ষণীয় যে সব অনুদান, তা চাষিদের কাছে পৌঁছনোর কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কর্মীর অভাব এবং কার্যালয়ের সমস্যা ক্রমশ মিটবে বলেও মন্তব্য করেছেন।”
মহকুমা ৬টি ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় উদ্যানপালন দফতর সেমিনার শুরু করেছে। কৃষি মেলাগুলিতেও ফেস্টুন-লিফলেট ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী নিয়ে স্টল করে কৃষকদের বসিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এবং দফতরের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে। গোঘাটের মান্দারন, বালি, বদনগঞ্জ, আরামবাগের সালেপুর, গৌরহাটি, রাংতাখালি, পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়া, দেউলপাড়া প্রভৃতি গ্রামের চাষিরা অসময়ের সব্জি চাষে উৎসাহ প্রকাশ করে উদ্যানপালন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে দফতরের কর্তারাই জানাচ্ছেন।
মান্দরন গ্রামের শেখ মকবুল বলেন, “শীতে পটল-ঢেঁড়স চাষের জন্য কিংবা বর্ষায় শশা চাষের জন্য গ্রিনহাউস তৈরিতে কিংবা বিন্দু জল সেচ প্রকল্পের জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সরকারি অনুদানের কথা জানতামই না। কাঠা ১০ জমি নিয়ে সারা বছর কী করব না করব ভেবে মরেছি এত দিন। এ বার সুরাহা হবে।” দফতর সূত্রের খবর, প্রকল্পগুলির মধ্যে আছে উদ্যানজাত ফসল চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও নতুন বাগান তৈরি, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে কলাচাষের এলাকা বৃদ্ধি, আদা-হলুদ চাষের এলাকা বাড়ানো, কেঁচো সার উৎপাদন প্রভৃতি।
|