পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে জলের সংযোগ না নিয়ে উলুবেড়িয়ার বেশির ভাগ নার্সিংহোমেই চলছে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার। আর তা নিয়ে উলুবেড়িয়া পুরসভার সঙ্গে ওই সব নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের চাপান-উতোরও সামনে এসেছে।
বেআইনি ভাবে গভীর নলকূপ বসিয়ে নার্সিংহোমগুলি ভূগর্ভস্থ জল তুলছে বলে অভিযোগ উলুবেড়িয়া পুরসভার। এ জন্য পুর কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সব নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আবার পুরসভার বিরুদ্ধেই জলের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছে সোচ্চার হয়েছেন।
এ বিষয়ে পুরসভার জল সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ আকবর শেখ বলেন, “জলপ্রকল্প চালুর পর থেকেই সংযোগ নেওয়ার জন্য নার্সিংহোমগুলিকে বারবার চিঠি দিয়েছি।
পুরসভা এলাকায় ভূগর্ভস্থ জল তোলা যে বেআইনি সে কথাও জানিয়েছি। কিন্তু কয়েকটি বড় নার্সিংহোম বেপরোয়া ভাবে জল তুলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের সভাপতি শেখ এনামুর রহমান বলেন, “সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা প্রত্যেক নার্সিংহোমের কাছে আবেদন করি, তারা যেন বৈধ ভাবে পুরসভার থেকে জলের সংযোগ নেন। তবে, পুরসভার তরফেও তৎপরতার অভাব রয়েছে।” বেশ কিছু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই সংযোগ নেওয়ার জন্য কিছু প্রশ্নের সদুত্তর তাঁরা পুরসভার থেকে পাচ্ছেন না।
রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও জানিয়েছেন, পুরসভার অনুমতি ছাড়া নার্সিংহোম ভূগর্ভস্থ জল তুললে এবং তা নিয়ে দফতরে অভিযোগ জানানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|
উলুবেড়িয়া |
“জলপ্রকল্প চালুর পর থেকেই সংযোগ নেওয়ার জন্য নার্সিংহোমগুলিকে বারবার চিঠি দিয়েছি। পুরসভা এলাকায় ভূগর্ভস্থ জল তোলা যে বেআইনি সে কথাও জানিয়েছি।” — আকবর শেখ। |
“প্রত্যেক নার্সিংহোমের কাছে আবেদন করি, তারা যেন বৈধ ভাবে পুরসভার থেকে জলের সংযোগ নেন। পুরসভার তরফেও তৎপরতার অভাব আছে।” —শেখ এনামুর রহমান। |
|
উলুবেড়িয়া পুর এলাকায় মোট নার্সিংহোমের সংখ্যা ৪১। পুরসভার হিসেবে, তার মধ্যে ৩০টি দৈনিক গড়ে অন্তত ১০ হাজার লিটার করে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করছে। ফলে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আর্থিক ক্ষতি এড়ানোও তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য।
জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে বছর দুয়েক আগে উলুবেড়িয়ার জগদীশপুরে প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করে পরিস্রুত পানীয় জলের প্রকল্পটি চালু করে কলকাতা মেট্রোপলিটান ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি। পরে তা হস্তান্তর করা হয় উলুবেড়িয়া পুরসভাকে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গার জল তুলে তা শোধন করে পুর এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে তৈরি হওয়া কোনও জলপ্রকল্পে আবশ্যিক শর্ত হল, এটি চালানোর জন্য মাসিক যে টাকা খরচ হয়, তা তুলতে হবে জল-করের ভিত্তিতে। রাজ্য সরকার গৃহস্থ বাড়িতে জল-কর নেওয়ার অনুমতি না দিলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জল-কর নেওয়াতে বাধা নেই। ওই প্রকল্পটি চালাতে মাসিক ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এক হাজার লিটারের জন্য ১৮ টাকা ধার্য করে জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য একটি নীতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৩০টি নার্সিংহোম-সহ বেশ কিছু সংস্থা এখনও জলের সংযোগ না নেওয়ায় খরচের পুরো টাকা তোলা যাচ্ছে না। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। নার্সিংহোমগুলি জলের সংযোগ নিলে সেই ঘাটতি অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক বছরে শহরের ও টি রোডের দু’দিকে একের পর এক নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। কয়েকটি ৪০-৫০ শয্যারও রয়েছে। স্টেশন রোডের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি নার্সিংহোমে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলই। কেন তাঁরা জলপ্রকল্পের সংযোগ নেননি, তা নিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে দুলাল দাস বলেন, “পুরসভা একবার আমাদের জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য বলেছিল। ওই সংযোগ নিতে গেলে জলাধার তৈরি-সহ অনেক ঝামেলা রয়েছে। পুরসভাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আর যোগাযোগ করেনি।”
একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “গভীর নলকূপ বসাতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। এই ব্যবস্থা আমরা রদ করব কেন?” ও টি রোডের আর একটি নার্সিংহোমের মালিক সুশান্ত মাইতি বলেন, “পুরসভা জলের সংযোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। জল কতটা পরিস্রুত, নিয়মিত তা মিলবে কি না, এ সব জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর আসেনি। আমরা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করেছি।”
কিছু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আবার জলপ্রকল্পের সংযোগ নিয়েও পুরসভার বিরুদ্ধে মিটার না বসানো, জল-কর না নেওয়া বা সমন্বয়ের অভিযোগও তুলেছে। আবার কোনও কোনও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, পুরসভাই তাদের নলকূপ বসানোর অনুমতি দিয়েছে।
এ নিয়ে উলুবেড়িয়ার পুরপ্রধান দেবদাস ঘোষের দাবি, “আগের পুরবোর্ডের আমলে কী হয়েছে জানি না। আমরা ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসার পরে কোনও নার্সিংহোমকে নলকূপ বসানোর অনুমতি দিইনি। মিটার আসতে শুরু করেছে। নার্সিংহোমগুলিতে তা বসানো হবে। হিসাব করে জল-করও নেওয়া হবে। সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসব।”
যদিও পুর কর্তাদের একাংশই স্বীকার করেন, আইন করা হলেও পিছনের দরজা দিয়ে নার্সিংহোমগুলিকে আইন ভাঙায় মদত দিচ্ছেন পুরসভারই এক শ্রেণির কর্মী ও কর্তারা। |