ডাকাতির ছক ভেস্তে গেল মদের খোঁয়াড়িতে
দু’পাত্তর বেশি খাওয়াটাই কাল হল কুণালের। না হলে চোরাই মালপত্র নিয়ে তার দুই সঙ্গী পগার পার হলেও কেন ধরা পড়তে হবে তাকে? কেনই বা বছর আঠাশের তাগড়াই শরীরটা বছর চল্লিশের ছা-পোষা বাড়ির বউয়ের হাত থেকে ছাড়াতে পারবে না সে?
পুলিশ জানিয়েছে, কুণাল আর তার দুই সঙ্গী সোমবার রাতে হানা দিয়েছিল গোঘাটের কুমুড়শায় তরুণ মালদের দোতলা বাড়িতে। তিন ভাই সপরিবার থাকেন সেখানে। রাত তখন প্রায় ১টা। শীতের রাতে গভীর ঘুমে সকলে। হঠাৎই একতলার দরজায় ঠক ঠক শুনে উঠে আসেন তরুণবাবু। বন্ধ দরজার ও-পাশ থেকে ভারী গলা ভেসে আসে, “গোঘাট থানা থেকে আসছি। দরজা খুলুন।”
রাতবিরেতে থানা-পুলিশ শুনলে ঘাবড়ে যাবেন না, এমন কলজের জোর কার আছে! তরুণবাবু দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে দুই দুষ্কৃতী। মুখে রুমাল বাঁধা। ঢুকেই তরুণবাবুকে পেটাতে থাকে তারা। স্ত্রী অঞ্জলির দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বলে, আলমারি খুলতে। গা থেকেও গয়না খুলে ফেলারও হুকুম হয়। থতমত খেয়ে অঞ্জলি গয়না খুলে দেন। খোলেন আলমারিও। কিন্তু প্রাথমিক ভিরমিটুকু কাটিয়ে উঠে তত ক্ষণে তাঁর মাথা মাঘ মাসের হিম পড়ার মতোই ঠান্ডা। স্টিলের আলমারির চাবি বেশ কয়েক বার কড়াং কড়াং শব্দে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খোলাপড়া করেন। পরে বলেন, “ওই শব্দ করেই বাড়ির বাকিদের ঘুম ভাঙাব ঠিক করেছিলাম। সত্যি সত্যি তাতে কাজও হয়েছে।” মাল পরিবার পুলিশকে জানিয়েছেন, নিশুত রাতে আলমারি খোলার শব্দে বাকিদের ঘুমের চটকা কেটে গিয়েছিল। বড় ভাই উত্তম মালের ছেলে পলাশ বলেন, “ডাকাত পড়েছে বুঝতে পেরে আমরা ফোনে পাড়া-প্রতিবেশীদের খবর দিই। পুলিশকেও ফোন করি।” মিনিট দশেকের মধ্যে পাড়ার লোক এসে বাড়ি ঘিরে ফেলে। তত ক্ষণে বাড়ির বাইরে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক দুষ্কৃতী মোটরবাইক ফেলেই পালায় (যে বাইকে পরে ভাঙচুর করবে জনতা)। আরও এক দুষ্কৃতী পিঠটান দেয়। ঘরে একা পড়ে কুণাল।
পালানোর চেষ্টা করেছিল সে-ও। কিন্তু তার তো পা টলোমলো। চোখে ধোঁয়াশা। মেজো ভাই তপনের স্ত্রী তনুশ্রী খপাত করে ধরে ফেলেন তার হাত। বাকিরাও এসে পড়ে। কুণালকে ধরে শুরু হয় পিটুনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে পরে ভর্তি করা হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে।
তনুশ্রী বলেন, “চোরটা তখন দিশেহারা। কোথা দিয়ে পালাবে, তা-ই ঠাহর করতে পারছিল না।” একগাল হেসে বাড়ির মেজোবউ বলেন, “ছোটবেলায় গ্রামের মাঠে ছুটন্ত ছাগল ছানার ঠ্যাং ধরে কত আটকেছি। সেই কায়দাতেই ধরে ফেললাম ছেলেটার হাত। ছাড়াতেই পারল না।”
পুলিশ জানিয়েছে, কুণালের দুই সঙ্গীর নাম বাপ্পা ও গোলাম। বাড়ি আরামবাগে। খোঁজ চলছে তাদের। মাল পরিবারের অভিযোগ, রাত সওয়া ১টা নাগাদ থানায় খবর দেওয়া হলেও পুলিশ এসেছে ৩টের পরে। সে কথা মানেননি পুলিশ কর্তারা।
তরুণবাবুর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে গোঘাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। হাসপাতালের বিছানায় শুনে কাতরাচ্ছে কুণাল। হাওড়ার মনোহরপুরের বাসিন্দা ওই যুবক জানায়, সেলুনে কাজ করার ফাঁকে ডাকাতির ফন্দি এঁটেছিল। দুই সঙ্গী জুটে যায়। তার আক্ষেপ, “অ্যাকশনে আসার আগে মদ খেয়েছিলাম সবাই। ঠান্ডাটাও পড়েছিল জাঁকিয়ে। কী যে হল, দু’পেগ বেশিই খেয়ে ফেললাম। ওই জন্যই তো ধরা পড়তে হল। তা-ও আবার বাড়ির বউয়ের হাতে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.