সম্পাদকীয় ২...
মিশর: গণতন্ত্রের সঙ্কট
মিশরের নূতন সংবিধান গণভোটে গৃহীত হইয়াছে। সংবিধানটি দেশের বর্তমান সামরিক শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা পরিমার্জিত একটি খসড়া, যাহা আদতে গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সির সরকার রচনা করিয়াছিল। খসড়াটি এমন ভাবেই সংশোধিত, যাহাতে সামরিক জেনারেলদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম হয়। সেই হিসাবে এই সংবিধানকে মিশরে রাজনৈতিক স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তনের দলিলই বলা যায়, দেশের সমগ্র ইতিহাসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টকে সামরিক অভ্যুত্থানে অপসারিত করিয়াই যাহা গণভোটের জন্য পেশ হয়। আপাতদৃষ্টিতে ‘বিপুল গরিষ্ঠতা’য় সংবিধানের খসড়াটি অনুমোদিত, যাঁহারা গণভোটে অংশ লন, তাঁহাদের ৯৮ শতাংশই সংবিধানের অনুকূলে ‘হ্যাঁ-ভোট’ দিয়াছেন। কিন্তু এই অংশগ্রহণকারীরা মোট ভোটারের কত শতাংশ? মাত্রই ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ ইহাকে গরিষ্ঠ জনাদেশে পুষ্ট সংবিধান বলা যায় না। বিশেষত, ১৮ হইতে ৩০ বছর বয়স্ক যুব সম্প্রদায়ের মাত্র ১৬ শতাংশ গণভোটে যোগ দেন। এই সম্প্রদায়ই কিন্তু আরব বসন্তের মূল চালিকাশক্তি।
মিশরের জেনারেলরা এবং তাঁহাদের সমর্থক মধ্যশ্রেণি তবু আবিশ্ব প্রচার করিতেছে, দেশবাসী জেনারেলদের দ্বারাই শাসিত হইতে আগ্রহী, নির্বাচিত গণতন্ত্রীদের দ্বারা নয়। প্রচার করিতেছে এমনকী দেশের সবচেয়ে কট্টর মৌলবাদী শক্তি সালাফি’রাও, সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তা ও সুন্নি মৌলবাদের গোঁড়া মতাদর্শে পরিপুষ্ট যে-শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুডের অপেক্ষাকৃত নমনীয় গোঁড়ামিকে কখনও যথেষ্ট জেহাদি বলিয়া গণ্য করে নাই, অথচ সামরিক বাহিনীর স্বৈরতন্ত্রকে আলিঙ্গন করিতে যাহাদের অসুবিধা হয় নাই। এই সালাফিরা ব্রাদারহুড-বিরোধী তাহরির স্কোয়ার জমায়েতে মুখ্য ভূমিকা লইয়া ফৌজি একনায়কত্বের পথ প্রশস্ত করার সংবিধান অনুমোদন করিতে প্রকাশ্যে সওয়াল করে। প্রাক্তন সেনানায়ক হোসনি মুবারককে গণ-আন্দোলনে উৎখাত করার তিন বছর পরে এবং দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সেনা-অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত করার ছয় মাস পরে অতএব মিশর আবার ফারাওয়ের শাসনেই ফিরিতে উদ্গ্রীব। বৃত্তটি এমন পরিহাসের মধ্য দিয়া সম্পূর্ণ হইবে, কে জানিত?
করুণতম দশা সেই মধ্যশ্রেণির, বুদ্ধিজীবীদের, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও দীক্ষায় আচ্ছন্ন গণতন্ত্রীদের (যাঁহাদের মধ্যে এল-বারাদেই-এর মতো বিশিষ্টজনরাও আছেন)। তাঁহাদের ঘাড়ে বন্দুক রাখিয়াই জেনারেল আব্দেল ফাতাহ্ আল্-সিসি-র মতো একনায়করা মিশরে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের যাবতীয় সম্ভাবনা নিঃশেষ করিয়া দিয়াছেন। মুসলিম ব্রাদারহুড নিশ্চয় সব কাজ ঠিকঠাক করিতেছিল না। তাহার নেতা হিসাবে প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সিও নিজের হাতে প্রভূত ক্ষমতা কুক্ষিগত করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। কিন্তু সেনা-অভ্যুত্থানে তাঁহাকে অপসারিত করার কোনও বিকল্প কি ছিল না? গণতান্ত্রিক নৈরাজ্যের বিকল্প কি উপর হইতে চাপাইয়া দেওয়া একনায়কত্ব? মহম্মদ মুর্সির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে চারটি অভিযোগে মামলা করিয়াছে, সব কয়টির ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ধার্য। যে ভাবে উর্দিধারীরা ব্রাদারহুড-এর উপর দমনপীড়ন নামাইয়াছে, হাজার-হাজার দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করিতেছে, আন্দোলন করিলে হত্যা করিতেছে, মুবারকের মিশর হইতে তাহা কোথায় আলাদা?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.