সম্পাদকীয় ১...
নূতন রেলপথ
ভারতীয় রেলের ইতিহাসে একটি নূতন যাত্রাপথের সূচনা হইল, যাহার অন্তিম স্টেশনের নাম সংস্কার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রেল ট্যারিফ অথরিটি-কে যাত্রা শুরু করিবার অনুমতি দিয়াছে। গত ১৬১ বৎসরে যাহা কখনও হয় নাই, এই বার হইবে— রেলের ভাড়া স্থির করিয়া দিবে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। জনমোহনের খেলার তাগিদে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকরা এই সংস্থার ডানা ছাঁটিতে উদ্যোগী হন কি না, বা ঘুরপথে নিয়ন্ত্রণের বিচিত্র কোনও পন্থা বাহির করেন কি না, তাহা ভবিষ্যৎ বলিবে। কিন্তু, যে ভাবনা লইয়া এই সংস্থা গঠিত হইতেছে, তাহাকেই সত্য জ্ঞান করিলে বলিতে হয়, ভাড়া না বাড়াইবার সস্তার রাজনীতির দিন অবশেষে ফুরাইল। এই খেলাটি যে ইউপিএ-র কর্তাদের নিকটও কিঞ্চিৎ ক্লান্তিকর ঠেকিতেছিল, গত বৎসর পবনকুমার বনশলের সিদ্ধান্তে সেই ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু, সেই ভাড়া বৃদ্ধির সহিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে ভাড়া স্থির করিবার দায়িত্ব তুলিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে চরিত্রগত ফারাক বিপুল। প্রথমটি পুরাতন মডেল, রাজনীতির মর্জিনির্ভর। দ্বিতীয়টি নূতন, বাজার-ভিত্তিক, (এবং তাত্ত্বিক ভাবে) রাজনীতিরহিত। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে কোনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বর্ধিত রেলভাড়া ফের কমাইয়া দেওয়ার ক্ষমতা থাকিবে না। এবং, রেলমন্ত্রীর নাম লালুপ্রসাদ যাদব নাকি দীনেশ ত্রিবেদী, তাহার উপরও রেলের আর্থিক নাভিশ্বাস উঠা না-উঠা নির্ভর করিবে না।
তবে, স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে ভাড়া স্থির করিবার অধিকার তুলিয়া দেওয়া একটি সম্ভাবনার সূচনালগ্নমাত্র। সংস্থাটি কোন পথে হাঁটে, তাহাই প্রধান বিচার্য। সংস্থা পূর্বতন প্রথা বজায় রাখিয়া ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে এক বার ভাড়া লইয়া মাথা ঘামাইবে, এমন আশঙ্কা অমূলক নহে। তেমনটি হইলে এই ‘বিপ্লবের’ সলিলসমাধি হইবে। কী ভাবে রেলের ভাড়া স্থির করা বিধেয়, তাহার একটি চমৎকার উদাহরণ একেবারে সম্মুখেই রহিয়াছে। গোটা দুনিয়ায়, ভারতেও, যে ভাবে বিমানভাড়া নির্ধারিত হয়। রেল চালাইতে যে খরচ, তাহা ভাড়ার অপরিবর্তনীয় অংশ হইবে। বাকিটা নির্ভরশীল হইবে চাহিদা-জোগানের উপর। দূরত্ব মাপিয়া সব টিকিটের ভাড়া সমহারে রাখিতে হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। চাহিদা কমিলে ভাড়াও কমিবে। যাত্রার তিন মাস পূর্বে টিকিট কাটিলে যে ভাড়া পড়িবে, যাত্রার দিন কাটিলে সেই ভাড়াই আদায় করিবার কারণ নাই। বাজার এই ভাবেই চলে। রেলের ভাড়াও এই পদ্ধতি স্থির করাই বিধেয়। গরিব মানুষের জন্য ভাবনা হইলে তাঁহাদের না হয় প্রত্যক্ষ ভর্তুকি দেওয়া হউক।
বাজারের নাম শুনিলেই রাজনীতিকদের কিঞ্চিৎ অস্বস্তি হয়। তাহার প্রধান কারণ, অভ্যাসের দাসত্ব। এক দিকে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস, এবং অন্য দিকে বাজার হইতে চোখ ফিরাইয়া রাখিবার অভ্যাস। বাস্তবের দিকে নজর ফিরাইলে তাঁহারা বুঝিবেন, নিয়ন্ত্রণের ফাঁস শিথিল হইয়া বহু ক্ষেত্রেই বাজার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ডলারের দাম বাঁধিয়া রাখিবার নিয়মটি বহু পূর্বেই গিয়াছে। সাম্প্রতিক কালে পেট্রোলের দামও বাজারই স্থির করিয়া দেয়। তাহাতে হিমালয় পর্বত স্থানচ্যুত হয় নাই, ভারত মহাসাগরে তুফান উঠে নাই, এমনকী পেট্রোলের দামও ধরাছোঁওয়ার বাহিরে চলিয়া যায় নাই, বরং দুই-এক বার দাম কমিয়াছে। মানুষ বাজারের নিয়মে অভ্যস্ত। সরকার কাতলা মাছের দাম বাঁধিয়া দিক, এমন দাবি ইদানীং ঘোর বামপন্থীরাও আর করেন না। কাজেই, রেলের ভাড়াও বাজারে নির্ধারিত হইলে মানুষের সমস্যা হইবে না। এবং, মানুষ ভর্তুকি অপেক্ষা সুষ্ঠু পরিষেবা অধিক পছন্দ করে। বাজারের নিয়মে ভাড়া নির্ধারণের মাধ্যমে রেলের কোষাগার পূর্ণ করিয়া সেই টাকায় পরিষেবার উন্নতিসাধনে মন দিলেই বরং যাত্রীরা সন্তুষ্ট হইবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.