দেরির ফল, ১৫ ফাঁসি মাফ বেনজির রায়ে

২১ জানুয়ারি
সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে ১৫ জনের ফাঁসি মকুব হয়ে গেল আজ। অযৌক্তিক ভাবে এদের ক্ষমাভিক্ষার আর্জি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় এই বেনজির রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ। চন্দনদস্যু বীরাপ্পনের ৪ সঙ্গী-সহ এই ১৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি রায়ে বলা হয়েছে, ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে অহেতুক দেরি হলে মৃত্যুদণ্ড মকুব হতে পারে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতেরই আগের একটি রায় খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।
এই ভাবে প্রাণদণ্ড মুকুবের এক্তিয়ার আদালতের আছে কি না, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল শুনানির সময়। তা উপেক্ষা করেই বেঞ্চ এই রায় দেওয়ায় আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আসামিদের ফাঁসি মকুবের আশা তৈরি হয়েছে। রাজীব গাঁধীর তিন খুনি ও খলিস্তানি জঙ্গি দেবেন্দ্রপাল সিংহ ভুল্লার তাদের অন্যতম। প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না জানালেও রাজনৈতিক ভাবে এটা কংগ্রেস-বিজেপি উভয় শিবিরের কাছেই কিছুটা স্বস্তির বার্তা। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট আজ এ-ও জানিয়ে দিয়েছে যে, ক্ষমাভিক্ষার আর্জি খারিজ হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ফাঁসি দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভুল্লার বা রাজীব গাঁধীর খুনিদের এখন ফাঁসি হলে পঞ্জাবি বা তামিল ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। লোকসভা ভোটের আগে তা চায় না কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে খবর, একই অবস্থা বিজেপি-রও।
সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল থাকার পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা করার সুযোগ পায় ফাঁসির আসামি। বিষয়টি পুনবির্বেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এক বার পাঠাতে পারেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু কবে এই আবেদনে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করবেন তার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ঝুলে থাকে সিদ্ধান্ত।
গত কয়েক বছরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এই ধরনের বেশ কিছু আসামি। তাদের কৌঁসুলিরা সওয়ালে জানান, দীর্ঘদিন ফাঁসির আসামির জন্য নিধার্রিত সেলে আটক থাকলে বন্দি মানসিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দীর্ঘদিন দেরি হলে ফাঁসি মকুব করা হোক। এটা এক ধরনের অত্যাচার। তা-ই এই ধরনের ক্ষেত্রে ফাঁসি মকুব করা উচিত। এই মতকে সমর্থন করে মানবাধিকার সংগঠন-সহ বেশ কিছু শিবির।
খলিস্তানি জঙ্গি দেবেন্দ্রপাল সিংহ ভুল্লারের আর্জির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে দেরি মৃত্যুদণ্ড মকুবের কারণ হতে পারে না। কিন্তু প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে পি সদাশিবম জানান, কম সংখ্যক সদস্যের বিভিন্ন বেঞ্চ এই বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রায় দিতে পারে। তা-ই শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ বা বেশি সংখ্যক সদস্যের বেঞ্চের উচিত এই বিষয়ে স্পষ্ট রায় দেওয়া। আজ এই রায় দিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চই।
শীর্ষ আদালত আজ জানিয়েছে,
• ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে দেরি হলে মৃত্যুদণ্ড মকুব হতে পারে।
• ক্ষমাভিক্ষার আর্জি খারিজ হলে তার ১৪ দিনের মধ্যে ফাঁসি দিতে হবে।
• ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে যদি দেরি হয় বা আসামি অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে সে কোর্টে ফাঁসি মকুবের আর্জি জানাতে পারে। আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে জেল কর্তৃপক্ষকে।
• আসামি মানসিক ভারসাম্য হারালে বা তার স্কিৎজোফ্রেনিয়া হলে ফাঁসি দেওয়া চলবে না।
• ফাঁসির আসামিকে একা বন্দি রাখাটা সংবিধান-বিরোধী কাজ। জেলে এই প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত।
• ক্ষমাভিক্ষার আর্জি খারিজ হলে সে কথা আসামিকে জানাতে হবে।
• তাকে তার পরিবারের সঙ্গে শেষ বার সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।
সংসদে হামলার ঘটনায় আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হবে, এই খবর তার পরিবারকে ঠিক সময়ে খবর দেওয়া হয়েছিল কি না তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। ফাঁসির আসামিকে সেলে দীর্ঘদিন একা রেখে দিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে এই অভিযোগ নিয়ে তো দীর্ঘদিন ধরেই সরব মানবাধিকার সংগঠনগুলি। আজকের রায়ে এমন অনেক অভিযোগের নিষ্পত্তির চেষ্টা স্পষ্ট। আইনজীবী মাজিদ মেমনের কথায়, “ফাঁসির আসামি দীর্ঘদিন সেলে আটক থাকলে সে একই সঙ্গে সশ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করছে। এই রায় স্বাগত।”
আজ যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড মকুব হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে বীরাপ্পনের চার সঙ্গী সাইমন, জ্ঞানপ্রকাশ, মাদাইয়া ও বিলাবেন্দ্র। ১৯৯৩ সালে ২২ জন পুলিশকে খুন করার মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়েছিল তাদের। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজীব গাঁধীর খুনিদের ফাঁসি মকুব নিয়ে দীর্ঘদিনই সরব দক্ষিণের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমডিএমকে নেতা ভাইকোর দাবি, এই রায়ে ভারতে মৃত্যুদণ্ড লোপের পথ খুলে গেল। রাজীব গাঁধীর খুনিদের আর্জির শুনানি ২৯ জানুয়ারি। ভাইকো জানিয়েছেন, তাঁদের আশা ওই তিন জনের ফাঁসিও মকুব হবে।
বিষয়টি কী ভাবে দেখছে ইউপিএ সরকার? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখার পরে ক্ষমাভিক্ষার প্রার্থনা নিয়ে সিদ্ধান্ত ও ফাঁসি দেওয়া দু’টিই প্রশাসনের এক্তিয়ারে পরে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের কৌঁসুলিরা সওয়ালের সময় এ কথা জানিয়েওছিলেন। ফলে এই রায় নতুন করে বিচার ব্যবস্থা ও সরাকারের মধ্যে এক্তিয়ারের লড়াই হয়ে ওঠে কি না সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই রায়ের পথ ধরে আর কাদের প্রাণদণ্ডের নির্দেশ যাবজ্জীবন কারদণ্ডে পরিণত হয়, সে দিকে নজর রাখবে গোটা দেশ। এবং সারা বিশ্বের প্রাণদণ্ড- বিরোধী সংগঠনগুলি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.