|
|
|
|
কলকাতায় প্রার্থী বাছাই মার্কিন কেতায়
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
২১ জানুয়ারি |
লোকসভা ভোট হোক বা বিধানসভা নির্বাচন, দলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে চিরম্তন সমস্যা ও অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যে ক’দিন আগে নয়া দাওয়াইয়ের কথা বলেছিলেন রাহুল গাঁধী। জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে কংগ্রেস প্রার্থী বাছাই করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রাইমারি’-র ধাঁচে, স্থানীয় ভাবে দলীয় নেতা-সমর্থকদের ভোট নিয়ে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, এই সূত্র পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য রাহুলের গবেষণাগারে ১৫টি গিনিপিগের অন্যতম হয়ে উঠতে চলেছে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রটি।
গত শুক্রবার কংগ্রেসের অধিবেশন মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রার্থী বাছাইয়ের নয়া সূত্র ঘোষণা করেছিলেন রাহুল। জানিয়েছিলেন, দলের শীর্ষ সারির নেতারা আর সামন্তপ্রভুর মতো প্রার্থী বাছাই করতে পারবেন না। স্বজনপোষণও চলবে না। এমনকী, প্রার্থী বাছাই করা চলবে না ঠান্ডা ঘরে বসেও। কোনও নির্বাচন কেন্দ্রে কংগ্রেসের যোগ্যতম প্রার্থী কে হতে পারেন, তা স্থির করবেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-সমর্থকরাই। প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে দলের বুথ, ব্লক এবং জেলা স্তরের নেতাদের নিয়ে একটি করে পৃথক নির্বাচনী কলেজ তৈরি হবে মার্কিন ধাঁচে। তার ভিত্তিতে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে ভোটাভুটি হবে। যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পাবেন তাঁকেই সেখানে কংগ্রেস টিকিট দেবে। ১৫টি আসনে পরীক্ষা সফল হলে পরে সব নির্বাচনেই এ ভাবে প্রার্থী বাছাই করবে দল।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে কলকাতা উত্তরকে কেন বেছে নেওয়া হল? রাহুল শিবিরের এক নেতা বলেন, ১৫টি নির্বাচন কেন্দ্র বেছে নেওয়ার মধ্যে তেমন কোনও জটিল সূত্র নেই। যেখানে কংগ্রেসের বর্তমান কোনও সাংসদ নেই, সেই আসনগুলিকেই মূলত বিবেচনা রাখা হয়েছিল। সেই আসনগুলি থেকে যে কোনও ১৫টি বেছে নিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ। তাতেই উঠে এসেছে কলকাতা উত্তর আসনটি। যেমন রাজস্থানে বেছে নেওয়া হয়েছে ঝুনঝুনু কেন্দ্রটিকে। সেখানে কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন সীসরাম ওলা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই সদস্যে সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। এ ছাড়া অসমের গুয়াহাটি-সহ কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা থেকে একটি-দু’টি করে আসন এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যাতে খুবই নিরপেক্ষ ও সুসংহত ভাবে হয় সে জন্যই দলের বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবিকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাহুল। তা ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় সামিল করা হতে পারে অবসরপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কে জে রাওকে। যুব কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করানোর জন্য তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল। এ কাজে রাওয়ের সঙ্গে সামিল ছিলেন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার জে এম লিংডোও।
রাহুলের এই পরীক্ষা উস্কে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে জোট না হওয়ার সম্ভাবনা। প্রশ্ন উঠছে আগামী ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হচ্ছে না ধরে নিয়েই কি এগোচ্ছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? প্রশ্ন উঠছে, আজই পুরনো দলে ফিরে আসা সোমেন মিত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েও। আজই তিনি তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিয়েছেন। উত্তর কলকাতায় তাঁর প্রভাব দীর্ঘদিনের। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, স্থানীয় ভাবে সংগঠনে নিজের প্রভাব ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারলে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে সমস্যা হবে না তাঁর।
কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের সাংসদ এখন তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত লোকসভা ভোটে জোট থাকায় এখানে কংগ্রেসের কোনও প্রার্থী ছিল না। সিপিএমের মহম্মদ সেলিমকে হারিয়ে সাংসদ হন সুদীপ। কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত কোনও কেন্দ্র বেছে নেওয়ার বদলে এই রাজ্যের এমন একটি কেন্দ্রকে বেছে নেওয়াতেই জল্পনা বেড়েছে। কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব আগামী ভোটে ফের তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যেতে নারাজ। রাহুল থেকে এ কে অ্যান্টনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তাঁরা দফায় দফায় এ কথা জানিয়েছেন। নয়া পদ্ধতি পরীক্ষার জন্য তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুদীপের কেন্দ্রটিকে বেছে নেওয়া প্রদীপ ভট্টাচার্যদের দাবি মানার ইঙ্গিত নাকি তৃণমূলকে চাপে রাখার বার্তা উঠছে সেই প্রশ্নও।
রাহুলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানার আগে রাজ্য কংগ্রেসের অনেক নেতাই মনে করছিলেন, সোমেনবাবুকে এ বার কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করবে দল। এই এলাকায় সোমেনবাবুর রাজনৈতিক দাপট দীর্ঘদিনের। তা ছাড়া সোমেনবাবুর স্ত্রী শিখা মিত্র উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের ওই নেতাটি বলেন, ওই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিট প্রত্যাশী অন্য কেউ থাকলে, তিনি যদি সোমেন বাবুর কাছে ভোটাভুটিতে হেরে যান, তা হলে সোমেনবাবুর প্রার্থী হতে কোনও বাধা থাকবে না। এটা সোমেনবাবুর পক্ষেও ভাল। গত পাঁচ বছর তিনি তৃণমূলে ছিলেন। ভোটের আগে অন্য দল থেকে এসেই কংগ্রেসের টিকিট পেয়ে যাওয়াটা পছন্দ নয় রাহুলের। তবে সোমেনবাবু যোগ্যতম প্রার্থী বলে সংগঠনে নির্বাচিত হলে সেই সমস্যা হবে না। |
|
|
|
|
|