একটি মেয়েকে জোর করে গাড়িতে তুলে চম্পট দিয়েছে এক যুবক। গাড়ির নম্বর ডব্লিউবি ৫৪৮৩… (অসম্পূর্ণ)।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জনবহুল কড়েয়া এলাকা থেকে ১০০ ডায়ালে ফোনটা পেয়েই চমকে উঠেছিলেন লালবাজারের কর্মীরা। খিদিরপুর এলাকায় এক তরুণীকে লরিতে তুলে গণধর্ষণের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই মহানগরে ফের অপহরণের খবর তাঁদের চিন্তা বাড়িয়ে দেয়।
ফোনটা পেয়েই লালবাজারের ব্যস্ত কন্ট্রোল রুম থেকে মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সর্বত্র। বড় কর্তা থেকে ছোট কর্তা, বার্তা পৌঁছে যায় সকলের কাছেই। সতর্ক করে দেওয়া হয় মহানগরীর প্রতিটি থানাকে। ডেপুটি কমিশনার থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মী-অফিসারেরা রাস্তায় নেমে পড়েন। শহরের সব প্রান্তে যানবাহনের উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়। কিন্তু রাত পর্যন্ত এমন কোনও ঘটনার প্রমাণ মেলেনি বলেই লালবাজারের কর্তাদের দাবি। এই ঘটনার জেরে পুলিশকে দিনভর অনর্থক নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বহু পুলিশকর্মী।
এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, সকাল ১০ নাগাদ এক মহিলা লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে (১০০ ডায়াল) ফোন করে জানান, কিছু আগে তিনি কড়েয়া থানা এলাকার বীরেশ গুহ রোডে শিশু হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক তরুণী। দেখে মনে হয়েছিল, তিনি কোনও কলসেন্টারের কর্মী। একটি টাটা সুমো তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভিতর থেকে এক যুবক ওই তরুণীকে লিফট দিতে চান। তরুণী রাজি না-হওয়ায় আচমকাই দরজা খুলে তাঁকে হাত ধরে জোর করে টেনে গাড়িতে তুলে নেয় ওই যুবক। তার পরেই গাড়িটি দ্রুত উধাও হয়ে যায় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই মহিলা। তবে তিনি গাড়ির যে-নম্বর দেন, তা অসম্পূর্ণ (ডব্লিউবি ৫৪৮৩)। ডব্লিউবি-র পরে শুধু চারটি সংখ্যা দিয়ে কোনও নম্বর প্লেট হয় না বলেই জানায় পুলিশ।
মহিলা গাড়িটির অসম্পূর্ণ নম্বর দিলেও পুলিশ মাঠে নামতে দেরি করেনি। রবিবার রাতেই খিদিরপুরে লরিতে তুলে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এমনিতেই তটস্থ ছিল পুলিশ। তাই মহিলার ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানার পরেই ঘটনাস্থলে যান কড়েয়া থানার কর্মীরা। কিন্তু সেখানে তাঁরা ওই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পাননি। জনবহুল বীরেশ গুহ রোড দিনের বেলা এ-হেন অপহরণের কথা |
শুনে নড়েচড়ে বসেন পুলিশের বড়কর্তারাও। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সাউথ-ইস্ট ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার দেবব্রত দাসও।
পুলিশ জানায়, ওই সময় শিশু হাসপাতালের সামনের রাস্তায় অনেক লোকজন থাকে। দোকানপাটও খুলে যায়। সেখান থেকে জোর করে কোনও তরুণীকে গাড়িতে তোলা হলে লোকজনের নজরে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ সকালের ওই ঘটনার কথা জানেন না বলেই পুলিশের কাছে দাবি করেন।
অগত্যা যিনি লালবাজারে ফোন করেছিলেন, সেই মহিলার মোবাইলে ফের যোগাযোগ করা হয়। পুলিশের দাবি, তিনি তখন জানান, ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে গাড়িটির পুরো নম্বর তিনি জানেন না। এর পরে পুলিশ ওই মহিলার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে জানতে পারে, সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি বীরেশ গুহ রোডে ছিলেনই না। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ওই মহিলা ট্যাংরা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে দু’তিন বার কথা হয়েছে। পরে আর তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরছেন না।” রাত পর্যন্ত ওই গাড়ির নম্বরটিরও কোনও হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। |