পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’ধরনের ট্যাক্সি। দু’রকম রং। হলুদ এবং নীল-সাদা।
গন্তব্যে যেতে অস্বীকার করা যে অপরাধ, তা বোঝাতে নীল-সাদা ট্যাক্সির গায়ে লেখা ‘নো রিফিউজাল’। অর্থাৎ, প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। কিন্তু এই লেখাটাই যে শেষ পর্যন্ত এমন বিভ্রান্তি ছড়াবে, তা সম্ভবত পরিবহণ কর্তারা পরিকল্পনা কার্যকর করার সময়ে ভাবতে পারেননি। অভিযোগ, এই সুযোগে বহু হলুদ ট্যাক্সিচালকই ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। যাত্রীর গন্তব্য পছন্দ না হলেই তাঁরা দেখিয়ে দিচ্ছেন নীল-সাদা ট্যাক্সিকে।
যেমন, বাগুইআটির বাসিন্দা রমেশ দে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন বলে একটি হলুদ ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন। গন্তব্য উল্টোডাঙা শুনেই ওই ট্যাক্সিচালক ফের ফিরতি পথে স্টার্ট দিয়েছেন। কেন যাবেন না? রমেশবাবু জিজ্ঞাসা করায় একটু দূরে দাঁড়ানো একটি নীল-সাদা ট্যাক্সিকে দেখিয়ে দিয়েছেন ওই হলুদ ট্যাক্সির চালক। তাঁর সাফ জবাব, “ওরা নো রিফিউজাল। অর্থাৎ গন্তব্যে ওরা যেতে বাধ্য। আমরা নই।”
হাওড়ার সাঁতরাগাছির বাসিন্দা অনিমেষ বসু সপ্তাহে পাঁচ দিন রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে হাওড়া স্টেশনে আসেন ট্যাক্সি চেপে। তিনি বলেন, “একটু বেশি রাতেই হলুদ ট্যাক্সি সহজে হাওড়া স্টেশনে যেতে চায় না। ওরা নীল সাদা ট্যাক্সিকে দেখিয়ে দেয়।” তাঁর প্রশ্ন, “ট্যাক্সির কি নতুন কোনও নিয়ম হয়েছে? হলুদ ট্যাক্সি কি তা হলে যাত্রী প্রত্যাখ্যান করতে পারবে?” |
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, হলুদ হোক বা নীল-সাদা, কোনও ট্যাক্সিই যাত্রী প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। যাত্রী প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সিচালকের শাস্তি হবে।” কেন হলুদ ট্যাক্সির কিছু চালক যাত্রীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করছেন? প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়নের সম্পাদক প্রবীর দাস মহাপাত্র বলেন, “নীল-সাদা হোক বা হলুদ, কোনও ট্যাক্সিরই যাত্রী প্রত্যাখ্যান করার কথা নয়। হলুদ ট্যাক্সির পারমিট আপাতত দেওয়া হচ্ছে না। তাই নতুন করে ২০০০ নীল-সাদা ট্যাক্সি রাস্তায় নেমেছে। সরকারের নীতি অনুযায়ী, কোনও ট্যাক্সিই যাত্রী প্রত্যাখ্যান
করতে পারে না। সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই নতুন ট্যাক্সিগুলির গায়ে নো রিফিউজাল লেখা হচ্ছে।”
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা বিমল গুহ বলেন, “ট্যাক্সিচালক প্রত্যাখ্যান করলে সংশ্লিষ্ট যাত্রী যদি মোটর ভেহিকল্সে অভিযোগ দায়ের করেন, তা হলে সেই চালকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। সেই নিয়মও আছে।” কী সেই নিয়ম? মোটর ভেহিকল্স-এর লাইসেন্স বিভাগের এক কর্তা জানান, যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে ‘সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকল্স-এর ২১ নম্বর নিয়ম অনুযায়ী চালকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
কিন্তু কলকাতায় অহরহ যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত কোনও চালকের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে কি? ওই কর্তা বলেন, “এখনও পর্যন্ত কলকাতায় যাত্রী প্রত্যাখ্যানের জন্য কোনও ট্যাক্সিচালকের লাইসেন্স বাতিল হয়নি। আসলে ট্যাক্সিচালকের প্রত্যাখ্যানে জেরবার হলেও সঠিক ভাবে অভিযোগ করার রেওয়াজটাই এখানে নেই।”
ক্যালকাটা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তা তারক বাড়ুই বলেন, “ট্যাক্সির নম্বর সিটের গায়েও লেখা থাকে। সেটা মনে রেখে, কিয়স্কের কর্তব্যরত পুলিশকে জানালেও ওই অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আমাদের ইউনিয়নে জানালে আমরাই পুলিশকে খবর দেব।” পুলিশেরও দাবি, টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর ১০৭৩ (কিংবা ভোডাভোন থেকে ২০০০/২০০১)-এ জানালে তাঁরা সঙ্গে-সঙ্গে ব্যবস্থা নেন, বা সেই ট্যাক্সিকে ধরেন।
বেহালার বাসিন্দা নীল দত্ত নিয়মিত বেশি রাতে ট্যাক্সিতে ধর্মতলা থেকে ফেরেন। তাঁর প্রশ্ন, “সব ট্যাক্সির নম্বর কেন সামনের সিটের পিছনে লেখা থাকবে না?” প্রতিটি ইউনিয়নের কর্তারাই অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের ইউনিয়নের কোন কোন ট্যাক্সি সামনের সিটের পিছনে নম্বর লেখেনি, তা সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। তাঁরাও মনে করছেন, যে সব ট্যাক্সিচালক নিয়ম মানছেন না তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হলেই যাত্রী-হেনস্থার ঘটনা কমবে। |