কখনও বালি উড়ে গিয়ে পড়ছে পিছনে আসা গাড়ির চালকের চোখে। কোথাও আবার ইটের গুড়োয় হাঁসফাঁস অবস্থা পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দাদের। জাতীয় সড়কে লরিতে বালি ও ইট বোঝাই করে ঢাকা ছাড়াই পরিবহণের জেরে এই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন মানুষজন। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের তরফে এই সব লরির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক বলে দাবি তাঁদের। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।
দুর্গাপুর শহর ও লাগোয়া কাঁকসা-পানাগড় এলাকায় গত কয়েক বছর ধরেই নির্মাণকাজ বাড়ছে। সে কারণে প্রতিদিনই ইট-বালি-পাথরের বহু লরি, ডাম্পার, ট্রাক্টর আসা-যাওয়া করে এই সব এলাকায়। শুধু জাতীয় সড়ক নয়, রাজ্য সড়ক থেকে শহরের নানা রাস্তাতেও যাতায়াত এই সব গাড়ির। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ইট বা বালি ঢাকা দেওয়া হয় না। ফলে, চলন্ত গাড়ি থেকে সে সব উড়ে পড়তে থাকে রাস্তায়। বাতাসে গুঁড়ো ওড়ায় সমস্যায় পড়েন অন্য গাড়ির চালক ও আরোহীরা। মোটরবাইক আরোদীদের অভিযোগ, চোখে-মুখে গুঁড়ো পড়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। এর জেরে দুর্ঘটনাও ঘটে।
কাঁকসার বাসিন্দা শুভদীপ সাহা জানান, কিছু দিন আগে তিনি মোটরবাইক চালিয়ে দুর্গাপুরে আসছিলেন। একটি ইট বোঝাই ট্রাক্টর পাশ দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল। কোনও ঢাকা না থাকায় ইটের গুঁড়ো গোটা রাস্তা জুড়ে উড়ছিল। |
শুভদীপবাবু বলেন, “ইটের গুঁড়ো হঠাৎ আমার চোখে ঢুকে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের এক মোটরবাইকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় পড়ে যাই। হাত-পায়ে চোট লাগে।” সেই সময়ে পিছন থেকে কোনও গাড়ি না আসায় সে যাত্রায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান বলে জানান তিনি।
শুধু শুভদীপবাবু নন, এ রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকের। দুর্গাপুর থেকে শিবপুরের রাস্তা ধরে রোজই মোটরবাইকে করে যাতায়াত করেন কিংশুক ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন, অজয় থেকে বালি তুলে বহু ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বালির উপরে কোনও ঢাকা ব্যবহার করে না। ফলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, “প্রশাসনের উচিত এগুলি নজরদারি করে ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।” শুধু বালি বা ইট নয়। দুর্গাপুর স্টেশন রোডের উপর দিয়ে সারা দিনই প্রচুর ডাম্পার, ট্রাক বিভিন্ন কারখানার ছাই বোঝাই করে নিয়ে যায়। তার মধ্যে অনেকগুলিই আঢাকা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফলে, গোটা রাস্তা জুড়ে ছাই উড়তে থাকে। দুর্গাপুর স্টেশন রোডের বাসিন্দা সাহেব সাহার কথায়, “এই সব গাড়ি রাস্তা দিয়ে পেরোলেই চোখে-মুখে ছাই ঢুকে যায়। প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করুক।”
পুলিশ জানায়, আঢাকা বালি, ইট পরিবহণ বন্ধ করতে আগেও নজরদারি চালানো হয়েছে। তাতে এই সমস্যা কিছুটা কমেওছিল। ফের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে আশ্বাস পুলিশের। দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “অতীতে শহরে ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে একটি সমস্যা ছিল। নজরদারি বাড়ানোর ফলে তা কিছুটা মিটেছে। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |