কলেজে মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাধল রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে। মনোনয়ন তুলে বেরোনো ছাত্রদের কাছ থেকে নথিপত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এই কলেজ ছাড়া আসানসোল-দুর্গাপুরের অন্যত্র অবশ্য মনোনয়ন তোলা নিয়ে বিশেষ গোলমাল বাধেনি। তবে রানিগঞ্জ মহিলা কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও মনোনয়ন তোলেনি এসএফআই।
আসানসোলের আটটি কলেজকে প্রশাসনের তরফে কলেজগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছিল, ছাত্র সংঘর্ষ বন্ধ করতে ও মনোনয়ন পত্র তোলা-জমা দেওয়ার সময়ে বহিরাগতদের আনাগোনা ঠেকাতে কলেজ চত্বরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা হোক। সেক্ষেত্রে কোনও ঘটনা ঘটলে ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নিতে পারবে পুলিশ-প্রশাসন। প্রশাসনের এই অনুরোধ মেনে দু’টি কলেজ, আসানসোল বিবি ও কুলটি কলেজে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এ দিন কুলটি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের চার দিকে একাধিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে। |
অধ্যক্ষের চেম্বারে টেলিভিশনের পর্দায় কলেজ চত্বর ও যেখানে মনোনয়ন তোলার কাজ হচ্ছে, সেখানকার ছবি ফুটে উঠছে। তা দেখছেন পুলিশ অফিসার ও কলেজের অধ্যক্ষ। অসঙ্গতি কিছু নজরে এলেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা। কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষ্মীনারায়ণ নিয়োগী বলেন, “আমরা কোনও রকম গোলমাল ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে চেয়েছি। তাই এই ব্যবস্থা।” তিনি আরও জানান, এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর নির্দেশেই এই ব্যবস্থা হয়েছে। আসানসোলের বিবি কলেজেও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অমরেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে এই ব্যবস্থা।” রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে অবশ্য এ সব ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে গেটের সামনে অশান্তির আবহ তৈরি হয়। এই কলেজে ছাত্র সংসদের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের সঙ্গে সংগঠনের জেলা কার্যকরী সভাপতি আলেয়া বেগম ও সুকান্ত চৌধুরীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। অভিযোগ, এ দিন সৌমিত্রর অনুগামীরা মনোনয়ন তুলে বেরোনো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নথিপত্র কেড়ে ছিঁড়ে দেন। কলেজ গেটের সামনে হাজির ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডল। তাঁর অবশ্য দাবি, অশান্তি যাতে না হয়, তা দেখতেই তিনি গিয়েছিলেন। |
আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, তাঁদের সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এক ছাত্রকে মারধর করা হয় বলেও দাবি। যদিও এ ব্যাপারে তাঁরা কোথাও কোনও অভিযোগ করেননি বলে জানান আলেয়া। এসএফআই নেতা সুব্রত সিদ্ধান্ত অভিযোগ করেন, তাঁদের মনোনয়ন পত্র তুলতেই দেননি টিএমসিপি-র ডেকে আনা বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের তরফে অভিযোগ, তাঁদের কিছু সমর্থককে মারধর করেছে টিএমসিপি-র ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। সৌমিত্রবাবু অবশ্য কোনও রকম গোলমাল বা মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি।
একটি কলেজ ছাড়া কোথাও মনোনয়ন তুলতে না পারার কারণ প্রসঙ্গে এসএফআইয়ের আসানসোলের দায়িত্বে থাকা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আদিত্য মাজি বলেন, “মঙ্গলবার সকাল থেকে আমরা দেখলাম, কলেজগুলির দখল নিয়েছে টিএমসিপি আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। পুলিশ কার্যত নির্বাক। আমরা চাইনি, কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হোক, নৈরাজ্য বাড়ুক। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
দুর্গাপুর শহরের তিনটি কলেজের কোনওটিতেও মনোনয়ন পত্র তোলেনি এসএফআই। সকাল থেকে এই তিন কলেজে পুলিশি প্রহরা ছিল। মাঝে মাঝেই টহল দিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। কিন্তু এসএফআইয়ের তরফে কেউ মনোনয়ন তুলতে আসেননি। সংগঠনের লোকাল কমিটির সদস্য শুভজিৎ রায়ের দাবি, এর আগে দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের নির্বাচিত ছাত্র সংসদকে কাজ করতে দেয়নি টিএমসিপি। কাজেই ঝুঁকি নিয়ে মনোনয়ন তুলে প্রার্থী ও তাঁদের অনুগামীদের অহেতুক বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চান না তাঁরা। তিনি বলেন, “অশান্তি এড়াতেই আমরা মনোনয়ন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
টিএমসিপি অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চায়নি। সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “সব কলেজেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে এসএফআইয়ের। সংগঠন বলতে এখন আর কিছু নেই ওদের। তাই কোথাও মনোনয়ন তুলতে পারেনি।” মনোনয়ন তোলার সময়ে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেনি পুলিশ। |