ট্রাক্টর মাটি ভরছে ১০০ দিন প্রকল্পে
কাজের অভাবে পেট চালানো দায় এলাকার খেটে খাওয়া মজুরদের। অথচ ট্রাক্টর ও যন্ত্র দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ হচ্ছে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে!
অভিযোগ, ওই প্রকল্পে জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের দু’টি ট্রাক্টর মাটি ভরাটের কাজ করছে। ঘটনাস্থল ময়ূরেশ্বরের মনোহরপুর গ্রাম। জেলার খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য এমন অভিযোগ মানতেই চাননি। এমন অভিযোগের কথা শুনে ১০০ দিন কাজের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বিশ্বজিৎ মোদকের প্রতিক্রিয়া, “১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কোনও ভাবেই যন্ত্র দিয়ে কাজ করানো যায় না। অভিযোগের প্রমাণ পেলে যিনি-ই জড়িত থাকুন না কেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি মহাত্মা গাঁধী জাতীয় কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ তথা একশো দিন কাজের প্রকল্পে স্থানীয় ষাটপলসা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মনোহরপুর গ্রাম লাগোয়া মাঠ থেকে প্রাইমারি স্কুল এবং ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রায় ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এমনতি একোশে দিন কাজের প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই, কর্মহীন মজুরদের কাজ জোগানো। নিয়মানুযায়ী ওই প্রকল্পে যন্ত্র দিয়ে কাজ করানো সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু এলাকায় গিয়ে ধরা পড়ল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রটাই।
সোমবার ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
সোমবার সকাল ১০টা। ওই গ্রামে পৌঁছে গিয়ে দেখা গেল একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দেওয়ালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একশো দিন কাজের প্রকল্পে মজুরদের কাজ দেওয়ার সদম্ভ বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু ওই সেই বিজ্ঞপ্তির অদূরেই গ্রামের ভল্লা পাড়ায় কর্মহীন দুই জবকার্ডধারীর মুখে শোনা গেল ভিন্ন কথা। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় কেউ নিজেদের নাম প্রকাশে রাজি হলেন না। দু’জনেই বললেন, “আমরা বছরে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটা দিন কাজ পাই। অথচ কয়েক দিন ধরেই আমাদের গ্রামের রাস্তায় ট্রাক্টর এবং মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে একশো দিনের কাজ করানো হচ্ছে!” তাঁদের দাবি, মারখাওয়ার ভয়ে কেউ কোথাও এর প্রতিবাদে অভিযোগ জানাতে পারেন না। ফোনে আতঙ্কের সুরে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা সিপিএমের ষাটপলসা লোকাল কমটি সদস্য অতুল ঘোষ বলেন, “গত কয়েক দিন ধরেই ট্রাক্টরে মাটি ফেলা হচ্ছে। একশো দিন কাজের প্রকল্পেই ওই রাস্তা হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এর বেশি বলা যাবে না।”
অথচ গ্রাম থেকে অদূরেই একটি পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেল যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বোঝাই করা হচ্ছে। গোটা পাঁচেক ট্রাক্টরে ওই মাটি নিয়ে এসে ফেলা হচ্ছে স্কুল লাগোয়া পুকুর পাড়ের রাস্তায়। ট্রাক্টরগুলির মধ্যে একটির নম্বর ডব্লিউবি-৫৩ ৭৭১১। অন্য একটি ট্রাক্টর দেখা গেল আবার নম্বর বিহীন! ট্রাক্টর দু’টির চালক ষাটপলসার সুরেশ বাগদী ও পান্নালাল মুদি গর্বের সঙ্গেই জানান, ট্রাক্টর দু’টির মালিক জেলাপরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল। তাঁরা বলেন, “নির্দেশ মতো এ দিন সকাল থেকে পুকুড় পাড়ের রাস্তায় যথাক্রমে ছয় ও নয় ট্রাক্টর মাটি ফেলা হয়েছে।”
এ দিনের দৃশ্যের কথা ওই কাজের সুপার ভাইজার বাপ্পাদিত্য মণ্ডলের কাছে তুলে ধরতেই তিনি আবার দাবি করলেন, “একশো দিন কাজের প্রকল্পে ওই রাস্তা নির্মাণের কাজ আগেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ দিন ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সেখানে ট্রাক্টর লাগিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে।” ট্রাক্টর দু’টি তাঁরই স্বীকার করে নিলেও একই দাবি করেছেন অভিযুক্ত খাদ্য কর্মাধ্যক্ষও। যদিও অন্য কথা শোনা গিয়েছে ট্রাক্টরগুলির কাজের হিসেব নথিভুক্ত করা প্রিয়তোষ মণ্ডলের মুখে। ক্যামেরায় ছবি করতে দেখে হিসেবের খাতা লুকোনোর চেষ্টার সময় ধরা পড়ে গিয়ে তিনি স্বীকার করে নেন, এ দিন তিনি বাপ্পাদিত্যবাবুর নির্দেশেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫টি ট্রাক্টরে ২৮টি মাটি ফেলার হিসেব নথিভুক্ত করেছেন! ওই গ্রামে যে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ চলার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ষাটপলসা পঞ্চায়েতের প্রধান নন্দদুলাল দাস এবং ময়ূরেশ্বর ২ বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান। সেই কাজ যে এখনও শেষ হয়নি তাও তাঁরা জানিয়েছেন। তবে, দু’জনেরই দাবি, “কই এমন হয়েছে, জানা নেই তো! ওই গ্রামের একশো দিন কাজের প্রকল্পে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
সিপিএমের অভিযোগ, জেলা পরিষদে ক্ষমতায় আসার পরে শুধু ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটাই নয়, জেলার সর্বত্রই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে নানা আইন বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চলছে। সিপিএমের ময়ূরেশ্বর জোনাল সম্পাদক অরূপ বাগের দাবি, “প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। তবুও এলাকার মজুরদের স্বার্থের কথা ভেবে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের ওই বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাব।” অন্য দিকে, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “যন্ত্র দিয়ে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করানো বেআইনি। ঘটনার খোঁজ নিয়ে দেখছি।” অন্য দিকে, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও বলেন, “খুবই গুরুতর অভিযোগ। আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। লিখিত অভিযোগ আসলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.