সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল ইউক্রেন। রবিবার রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় পুলিশ ও বিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দু’পক্ষেরই বেশ কিছু মানুষ আহত।
প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সূত্রপাত গত বছরের শেষ দিকে। ২০১৩-এর নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করার আগে হঠাৎই বেঁকে বসেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, দেশবাসীকে ঠকিয়ে এই ফাঁকে আসলে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন ইয়ানুকোভিচ। নভেম্বরের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই তখন প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছিলেন প্রায় লাখ খানেক মানুষ। কিয়েভের কেন্দ্রস্থল ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়্যারে ১৯৪৬ সালে বসেছিল রুশ বিপ্লবের নেতা লেনিনের এক সুবিশাল মূর্তি। গত ডিসেম্বরে জনরোষের কোপে বেদি থেকে উপড়ে পড়ে এগারো ফুট উঁচু সেই লেনিন-মূর্তি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছোটখাটো সংঘর্ষ চলেছে তার পরও। তবে পুলিশের দাবি, রবিবারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছাপিয়ে গিয়েছে আগের সব কিছুকে।
গত কাল পার্লামেন্ট ভবনের দিকে মিছিল করে যাচ্ছিলেন এক দল যুবক। বেশ কিছুটা দূরেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এর পরই ক্ষেপে গিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হন তাঁরা। পুলিশ ভ্যান ও আরও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ধোঁয়া বোমও ছোড়েন। প্রথমে পাল্টা পদক্ষেপ না করলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে জল কামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশও। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে প্রায় তিরিশ জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন বলে খবর। তাঁদের মধ্যে দশ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও নতুন করে কোনও অশান্তি ছড়ায়নি।
পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় তার জন্য ইউক্রেনবাসীকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেছেন বিরোধী দলের নেতারাও। তবে তাঁদের অভিযোগ, দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ নিজেই। ক’দিন আগে বিক্ষোভ-জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাঁর প্রশাসন। আইন পাশ করে বলা হয়, মুখোশ পরে কাউকে প্রতিবাদ জানাতে দেখলে তাঁকে কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হবে। গণতান্ত্রিক দেশে এমন আইন জারি করে প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্টই বিক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছেন বলে দাবি বিরোধী নেতাদের।
সোমবার প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য একটি কমিশন গঠন করেছেন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। তবে এই অশান্ত পরিস্থিতিতে তা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, সেটা এখনও অস্পষ্টই। ইউক্রেনের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকাও। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র এ দিন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পথ থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে দু’পক্ষকেই আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। |