প্রায় দশ মাস আগে বহু লক্ষ টাকায় কেনা ডায়ালিসিস যন্ত্র পড়ে রয়েছে হাসপাতালে। কারণ, সেটি ব্যবহার করার মতো উপযুক্ত কর্মী নেই। ফলে, সরকারি হাসপাতালে এই যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও এই পরিষেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে রোগীদের। এ বার সেই সমস্যা মেটার আশা দেখাল সম্প্রতি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধি দল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, দু’জন টেকনিসিয়ান দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
পরিদর্শনে আসা কর্তারা অবশ্য দুর্গাপুর হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রুদ্রনাথবাবু জানিয়ে দেন, বিভাগটিকে দ্রুত ঢেলে সাজাতে হবে। দুঃস্থ মানুষজনেরা যেন চোখের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন। হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা জানান, এমনিতে হাসপাতাল বেশ অপরিষ্কার থাকে। তবে কমিটির পরিদর্শন উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বর ভাল করে সাফ করা হয়েছে, রোগীদের বিছানার চাদর বদলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
বিধায়ক তহবিল থেকে গত বছর দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে একাধিক মূল্যবান যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা করেন দুর্গাপুরের (পূর্ব) বিধায়ক তথা চিকিৎসক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। |
সেই সব যন্ত্রেরই একটি হল ডায়ালিসিস মেশিন। সেটি কিনতে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। কিডনির জটিল রোগে ভোগা গরিব মানুষ যাতে ডায়ালিসিসের সুযোগ পান, সে জন্যই এমন উদ্যোগী হন বিধায়ক। কিন্তু যন্ত্রটি চালুই করা যায়নি। কারণ, সেটি চালানোর জন্য এক জন টেকনিসিয়ান প্রয়োজন, যা এই হাসপাতালে নেই। যন্ত্র থাকতেও কিডনির রোগে আক্রান্তেরা আগের মতোই বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চড়া দাম দিয়ে পরিষেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। না চালালে যন্ত্রটিতে কোনও সমস্যা দেখা দেবে কি না, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। এমন একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্র এ ভাবে পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ রোগী থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকসকলেই। হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিধায়ক নিখিলবাবু জানান, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিনি ‘ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস’-এ ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছেন একাধিক বার। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। রুদ্রনাথবাবু অবশ্য জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বিধায়ক নিখিলবাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দ্রুত দু’জন টেকনিসিয়ান দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
পরিদর্শনে এসে কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী, রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিশু বিভাগে দু’বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ছিলেন করঙ্গপাড়ার পারুলি বাউড়ি। ছেলের শরীর দুর্বল, ঝিমিয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে রুদ্রনাথবাবু খুঁটিয়ে জানতে চান, কী কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে। উত্তর শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্টোর রুমে গিয়ে ওষুধ ও ভ্যাকসিনের মেয়াদও পরীক্ষা করে দেখেন তিনি। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “আগের থেকে হাসপাতালে পরিষেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে। তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে।” |