শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আর ট্রেনে-বাসে চেপে জেলার সদর শহর কিংবা কলকাতা ছুটতে হবে না। নিজের এলাকায় থেকেই চোখের চিকিৎসায় জরুরি পরামর্শ নিতে পারবেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন। প্রযুক্তির সাহায্যে কথা বলতে পারবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে। সৌজন্যে ‘টেলি-অপথালমোলজি’। রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় শীঘ্রই এই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে জঙ্গলমহলের দুই জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার ২০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ব্যবস্থা চালু হবে। সাড়া মিললে পরে অন্য জেলাতেও ‘টেলি-অপথালমোলজি’ চালু করা হবে। রাজ্যের সহ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা (চক্ষু) সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। শীঘ্রই পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ায় এই প্রকল্প চালু হবে।” জানা গিয়েছে, প্রকল্প চালুর জন্য একটি সংস্থার সঙ্গে পিপিপি মডেলে চুক্তি হয়েছে রাজ্যের। ওই সংস্থাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে।
‘টেলি-অপথালমোলজি’ কী?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এটি ‘টেলি-মেডিসিন’-এর একটি শাখা, যেখানে ডিজিট্যাল মেডিক্যাল যন্ত্র এবং টেলি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে চোখের চিকিৎসা করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার বসবাসকারী রোগীদের সঙ্গে শহরের বড় চক্ষু চিকিৎসকদের সহজে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ডিজিট্যাল ওই যন্ত্রে একটি ক্যামেরা থাকে, যা চোখের প্রতিচ্ছবি তোলে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তা চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এই ছবি কম্পিউটারে সংরক্ষণ করেও রাখা যেতে পারে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে রোগীদের ‘আই-ফাইল’ তৈরি করা যেতে পারে। চিকিৎসকেরা রোগীদের চোখের ছবি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন, রোগটি ঠিক কী, কী ভাবে চিকিৎসা সম্ভব, তা জানাতে পারেন।
১৯৯৯ সালে আমেরিকায় এই ভাবে চক্ষু চিকিৎসা শুরু হয়। পরে বিশ্বের অনান্য দেশেও এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রকল্প চালু হলে গ্রামের মানুষকে আর শুধু পরামর্শ নেওয়ার জন্য ট্রেনে-বাসে করে জেলার সদর শহর কিংবা কলকাতায় যেতে হবে না। তাঁরা নিজের এলাকার কাছের কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (যেখানে ওই পরিকাঠামো রয়েছে) গিয়ে সেখান থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। চিকিৎসকে নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। এর ফলে চিকিৎসার খরচও কমবে।” আপাতত, পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার ২০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই প্রকল্প চালু হবে। সেই তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জঙ্গলমহল এলাকাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য। জানা গিয়েছে, প্রকল্প চালুর জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ছাতিনাশোল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গোপীবল্লভপুর ২-এর তপসিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সাঁকরাইলের রোহিণী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জামবনির চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নয়াগ্রাম উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিনপুর ১-এর (লালগড়) রামগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিনপুর ২ ব্লকের (বেলপাহাড়ি) শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শালবনির পিড়াকাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গড়বেতা ২-এর (গোয়ালতোড়) কেওয়াকোল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিশেষে দু’-একটি জায়গা বদল হতে পারে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যোগাযোগ থাকবে। আবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যোগাযোগ থাকবে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “প্রকল্প চালু হলে গ্রামের মানুষ সহজেই চোখের চিকিৎসা করানোর জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন।” |