হাসপাতালে বহিরাগতদের উপদ্রব ঠেকাতে উদ্যোগ এসএসকেএমে
রাতের এসএসকেএম দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। দালালচক্রের পাশাপাশি মদ, গাঁজার ঠেকের মতো অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপেরও ঘাঁটি হয়ে ওঠার অভিযোগ এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ বার তা রুখতেই হাসপাতাল চত্বরে বহিরাগত ঠেকাতে উদ্যোগী হলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্থির হয়েছে, রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে কোনও অনধিকারীকে হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাফেরা করতে দেখলে তাকে বার করে দেবে পুলিশ। তার পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাসপাতালে ঢুকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর পদক্ষেপ। কিছু দিন আগে হাসপাতালে এসে ভিড়ে থিকথিক অবস্থা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। রাতের হাসপাতাল সম্পর্কেও তখনই তাঁর কাছে একাধিক অভিযোগ আসে। যাঁদের প্রয়োজন রয়েছে তাঁরা ছাড়া যেন কেউ হাসপাতালে রাত না কাটান, তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশের জেরেই হাসপাতাল জুড়ে ৪০টি বোর্ড লাগিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টার পরে কেউ হাসপাতালে থাকতে পারবেন না।
প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘প্রয়োজন’টা স্থির করবে কে? হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, ওয়ার্ডের ভিতরে রোগীর সঙ্গে থাকার জন্য বাড়ির লোককে সবুজ কার্ড দেওয়া হয়। তেমনই হাসপাতাল চত্বরে রাতে থাকার জন্য দেওয়া হয় লাল কার্ড। ওই লাল কার্ড দেখিয়েই প্রমাণ করা যাবে কে হাসপাতাল চত্বরে থাকার অধিকারী, আর কে নন।
এসএসকেএম চত্বর জুড়ে এ ভাবেই লাগানো হয়েছে জরুরি নির্দেশ লেখা বোর্ড। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কী ভাবে পাওয়া যাবে ওই কার্ড? কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগী ভর্তি হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে পরিবারের লোকেরা ওই কার্ডের জন্য আবেদন করবেন। যদি চিকিৎসক মনে করেন যে রোগীর বাড়ির লোকের রাতে থাকা প্রয়োজন, তা হলে তাঁর অনুমতি অনুযায়ী পুলিশ লাল কার্ড ইস্যু করবে। ৭২ ঘণ্টার জন্য কার্ড ইস্যু করা হবে। তার পরেও যদি থাকার প্রয়োজন পড়ে, তা হলে ফের আবেদন করতে হবে। প্রদীপবাবু বলেন, “রাতে হাসপাতালে দালালরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে আমাদের কাছে খবর। বহু রোগীকেই হাসপাতালে শয্যা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ সব বন্ধ করার জন্য রাতে বহিরাগতদের থাকাটা বন্ধ করতে হবে।”
ইতিমধ্যেই বহু রোগীর পরিবারের তরফে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় খয়রুল আলম বলেন, “ডাক্তারবাবু মুখে বলেন, রাতে কারও থাকার দরকার নেই। অথচ রাতবিরেতে কোনও ওষুধ দরকার হলে আমাদের হাতে তো স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখন যদি আমাদেরই থাকতে দেওয়া না হয়, তবে রাতে প্রয়োজন হলেও রোগী ওষুধ পাবে না।” পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি এক শিশুর বাবা তুষার হালদার বলেন, “আমাদের বাড়ি বর্ধমানে। আমি আর আমার স্ত্রী ছেলের চিকিৎসার জন্য এসেছি। স্ত্রী ছেলের সঙ্গে ওয়ার্ডে থাকেন, কিন্তু এই শহরে থাকার জায়গা নেই বলে আমাকে হাসপাতালেই পড়ে থাকতে হয়। এখন রাত আটটার পরে আমাকে বার করে দেওয়া হলে আমি থাকব কোথায়?”
এসএসকেএমের পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, প্রতি রাতেই একাধিক বার হাসপাতালে এই অভিযান চলবে। প্রথম দু’তিন দিন সতর্ক করা হবে। তাতে কাজ না হলে জোর করেই বহিরাগতদের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা চলবে।
এসএসকেএমের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অন্য হাসপাতালগুলিও। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার পার্থ প্রধান বলেন, “দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পদক্ষেপটা জরুরি, সন্দেহ নেই। কিন্তু এত দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসেন, আর তাঁরা অনেকেই এত গরিব যে, সকলকে চলে যেতে বলাটা মানবিক কারণে সম্ভব হয় না। তা ছাড়া কার্ড ইস্যু করা এবং তা ফেরত আসছে কি না, নজরদারির জন্য লোকবল প্রয়োজন। সেটা আমাদের এই মুহূর্তে নেই।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাঁরও বক্তব্য, কড়া নজরদারির মতো লোকবল না থাকলে এর প্রয়োগ খুব কঠিন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.