ঝাড়গ্রামে পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শুরু
গেল সেপ্টেম্বরে মৌ চুক্তি হয়েছিল। সেই মতো ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স গড়ার কাজ শুরু হয়ে গেল। আগামী ন’মাসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে পূর্ত দফতরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিভিশন। দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র বীরেন্দ্রনাথ দে বলেন, “ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের কাজ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।” অরণ্য-শহরে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স গড়ে উঠলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে বলেই আশা। ঝাড়গ্রাম রাজ-পরিবারের উত্তরসূরী তথা ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স তৈরি হলে পর্যটকেরা উপকৃত হবেন। জঙ্গলমহলে পর্যটন-শিল্পের প্রসার হবে।”
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সামনে এখানেই হবে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই টাকায় আপাতত পর্যটকদের থাকার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। মোট ৯টি সিঙ্গল এবং ৩টি ডবল বেডরুম তৈরি হবে। আর হবে অফিস কাম রিসেপশন সেন্টার। দীর্ঘ অশান্তি পর্বে ঝাড়গ্রাম-সহ গোটা জঙ্গলমহলেই পর্যটকদের আনাগোনা কমে যায়। শীতের মরসুমেও হোটেলগুলো ফাঁকা পড়ে থাকত। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে পর্যটন শিল্প। অথচ, দীর্ঘ দিন ধরে শাল-জঙ্গল ঘেরা নিসর্গের জন্য বাঙালির ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা ছিল ঝাড়গ্রাম। প্রচুর মানুষ ঝাড়গ্রাম শহর ও তার আশপাশে আসতেন। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ বা সপরিবার। শীতের রোদ্দুর গায়ে মেখে সুবজের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই ছিল আলাদা। পর্যটকদের যথেষ্ট আনাগোনা থাকায় হোটেল ব্যবসায়ীরাও যথেষ্ট লাভ করতেন।
পর্যটনের এই রং ফিকে হতে শুরু করে মাওবাদী আন্দোলন পর্বে। জঙ্গলমহলে নাশকতার শুরু ২০০৪ সালে। ওই বছর ডিসেম্বরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বেলপাহাড়ির কাঁকরাঝোড়। বন-বাংলো ধ্বংস হয়। ২০০৮ থেকে শুরু হয় মাওবাদী এবং জনসাধারণের কমিটির লাগাতার আন্দোলন। একের পর এক খুন-সন্ত্রাসে অরণ্য- শহরের চেনা ছবিটা বদলে যায়। নিসর্গ জুড়ে তখন শুধু আতঙ্ক-উদ্বেগ-হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ঝাঁপ বন্ধ হয় হোটেলগুলোর।
পরিস্থিতি বদলায় রাজ্যে পালাবদলের পর। শীর্ষ নেতা কিষেনজির মৃত্যুর পরে মাওবাদীদের শক্তিক্ষয় হয়। থিতিয়ে আসে নাশকতা-সন্ত্রাস। মন্দা কাটিয়ে পর্যটন-শিল্পও ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করে। সুদিন ফিরছে দেখে রাজ্য সরকারও জঙ্গলমহলে পর্যটন প্রসারে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেয়। তাদেরই অন্যতম ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স তৈরি। গত সেপ্টেম্বরে ঝাড়গ্রাম এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজবাড়ির তরফে দুর্গেশ মল্লদেবদের মৌ সাক্ষর হয়। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে পর্যটন প্রসারের লক্ষ্যেই এই চুক্তি।
ঝাড়গ্রামে এলে মুখ্যমন্ত্রীও রাজবাড়িতে ওঠেন, রাত্রিবাস করেন। এখন পর্যটকের আনাগোনাও বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে অরণ্য-শহরে প্রচুর পর্যটক এসেছিলেন। হোটেল ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছিল। ঝাড়গ্রাম শহর ও তার আশপাশে সব মিলিয়ে ২০টি হোটেল রয়েছে। কোনও হোটেলের ঘরই খালি ছিল না। অনেকে অগ্রিম বুকিং করে ছুটি কাটাতে আসেন। এই পরিস্থিতিতে অরণ্য-শহরে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স গড়ে উঠলে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশবাবুর বক্তব্য, “সত্যিই সুদিন ফিরছে। কয়েক বছর আগে শহরের এই পরিবেশ কল্পনাও করা যেত না। মুখ্যমন্ত্রী নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন। তাই অশান্ত জঙ্গলমহল শান্ত হয়েছে। মা- মাটি- মানুষের সরকারই জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছে। এই পরিবেশ আমাদের রক্ষা করতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.