চব্বিশ ঘণ্টা আগেই বরিস বেকার কলাম-এ লিখেছিলেন, সেরেনার ফর্ম দেখে মনে হচ্ছে মেলবোর্নের অসহ্য গরমও তাঁকে থামানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। নিশ্চয়ই জকোভিচের সেলিব্রিটি কোচের মতো টেনিসদুনিয়ারও জানা ছিল না, অস্ট্রেলীয় ওপেনের অসহনীয় গরমের চেয়েও ভয়ঙ্কর পিঠের ব্যথা নিয়ে খেলছিলেন সেরেনা। প্রচণ্ড চড়া পেনকিলার খেয়ে সামাল দিচ্ছিলেন। তা-ও আগের রাউন্ডেই হান্টুকোভাকে আর একটু হলে ওয়াকওভার দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোর্টের বাইরে নয়, কোর্টের ভেতরে থেকেই মেয়েদের শীর্ষ বাছাই বিদায় নিলেন অস্ট্রেলীয় ওপেন থেকে। দ্বিতীয় সেট থেকে মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীর মন্থর নড়াচড়া আর অসংখ্য আনফোর্সড এরর-এর সুযোগ নিয়ে প্রাক্তন বিশ্বসেরা আনা ইভানোভিচ চতুর্থ রাউন্ডে সেরেনাকে ৪-৬, ৬-৩, ৬-৩ হারিয়ে টুর্নামেন্টের বৃহত্তম অঘটন ঘটালেন। “আমার মতো চিরলড়াকুও হান্টুকোভাকে আগের রাউন্ডে আর একটু হলেই ওয়াকওভার দিয়ে ফেলেছিলাম! আজও কড়া-কড়া পেনকিলার খেয়ে খেলেছি। কিন্তু এত ভুলভাল খেলেছি! আশি সাল থেকে এত আনফোসর্ড এরর বোধহয় আমি করিনি!” বলেন সেরেনা। যাঁর জন্মই ১৯৮০-তে। |
হতাশ সেরেনা। রবিবার মেলবোর্নে। ছবি: এএফপি।
|
টেনিসমহলের অন্যতম ‘ফ্যাশন ডিভা’ ইভানোভিচের থেকে এই জয়ের কৃতিত্ব এতটুকু কাড়েননি স্বয়ং সেরেনাও। কিন্তু ২০০৮-এর ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন রবিবারের আগে সেরেনার বিরুদ্ধে কোনও ম্যাচ জেতা তো দূর অস্ত, একটা সেটও কখনও জেতেননি। গত ছ’বছরে আজকেরটাই সাকুল্যে দ্বিতীয় বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা! তবে অস্ট্রেলীয় ওপেনের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট ব্রিসবেন ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইভানোভিচ ফর্মে ফেরার একটা ইঙ্গিত অবশ্য দিয়েছিলেন। আর সেরেনা পূর্বসুরি দুই মার্কিন কিংবদন্তি টেনিস-কন্যা এভার্ট এবং নাভ্রাতিলোভার ১৮ গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব স্পর্শ করার দৌড়ে মেলবোর্নে বড় ধাক্কা তো খেলেনই, তার চেয়েও তাৎপর্যের বারো মাসের মধ্যে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অসাধারণ নজির গড়তেও একটুর জন্য পারলেন না। যা স্টেফি গ্রাফ ২৬ বছর আগে শেষ করে দেখিয়েছিলেন।
আসলে মরসুমের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামটাই সেরেনার পক্ষে ইদানীং অপয়া। মেলবোর্নে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হলেও গত বার এ রকম চোটেই (গোড়ালি) শেষ আটে হেরেছিলেন। তার আগের বার শেষ ষোলোয় অপ্রত্যাশিত হার। আর ২০১১-এ তো চোট সমস্যায় নামতেই পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইভানোভিচের সামনে ৩০ নম্বর বাছাই বোচার্ড। আরেকটি কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি না লি এবং পেনেত্তা। পুরুষদের দু’টো কোয়ার্টার ফাইনাল লাইনআপ এ দিন চূড়ান্ত হল। জকোভিচ বনাম ওয়ারিঙ্কা। ফেরার বনাম বার্ডিচ। গত তিন বারের চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ ৬-৩, ৬-০, ৬-২ সার্কিটে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফগনিনিকে শুধু হারানইনি, ইভানোভিচের দেশের আরেক সার্বিয়ান টেনিস সুপারস্টার প্রতিপক্ষকে নকল করে গ্যালারিকে হাসিয়েছেনও। ম্যাচ শেষে টিভি ইন্টারভিউয়ে প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন জিম কুরিয়ারের একের পর এক প্রশ্নের উত্তরে বলে দেন, “আরে, আপনি তো এত প্রশ্নের সামনে আমাকে ফেলছেন, যা ম্যাচে ফগনিনিও আমাকে ফেলেনি!” |