সম্পাদকীয় ২...
আতিথেয়তা
য়াদিল্লি রেল স্টেশনের নিকট ডেনমার্কের এক মহিলার উপর গণধর্ষণ বিশ্বের দরবারে ভারতকে ‘অতিথি দেবো ভব’ মন্ত্রের মহিমায় উদ্ভাসিত করে নাই। বিদেশি মহিলা পর্যটকদের উপর একের পর এক যে আক্রমণ ও অসম্মান ঘটিয়া চলিয়াছে, যে ভাবে তাঁহাদের যৌন হেনস্থা, শ্লীলতাহানি ও গণধর্ষণের শিকার হইতে হইতেছে, তাহাতে বিদেশে ভারত সম্পর্কে, ভারতীয় পুরুষ প্রজাতি সম্পর্কে যে কলঙ্কময় ধারণা ক্রমে জনপ্রিয় হইতেছে, তাহা অমূলক নয়। কেহ কেহ বলার চেষ্টা করিতেছেন, গণমাধ্যমে এই সব ঘটনার প্রচারই এমন ‘ভ্রান্ত ও একপেশে ধারণা’র জন্য দায়ী। যেন এই সব অনাচারের ঘটনাগুলি গোপন ও অপ্রকাশিত রাখার পবিত্র দায়িত্ব পালন করাই গণমাধ্যমের কাজ! অথচ যে-দেশে প্রতি ২১ মিনিটে একটি করিয়া ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হইতেছে, সেখানে বিদেশি মহিলা পর্যটকরা ধর্ষকদের হাত হইতে রক্ষা পাইবেন, ইহা আশা করাও ঠিক নয়।
এই সব কিছুর পরিণামে ভারতে মহিলা পর্যটকদের সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে হ্রাস পাইয়াছে। বিশেষত ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনার পর এ-দেশে মহিলা পর্যটকদের আগমন ৩৫ শতাংশ হ্রাস পায়। গত এক বছরে আগরায়, মানালিতে, মথুরায়, মধ্যপ্রদেশে এবং দিল্লিতে বিদেশিনিদের উপর গণধর্ষণের একের পর এক ঘটনায় এই পর্যটন-হার আরও কমিয়া যাইবার আশঙ্কা প্রবল। পশ্চিমের বিভিন্ন রাষ্ট্র ভারত-পর্যটনে ইচ্ছুক মহিলাদের পুরুষসঙ্গী-সহ ভ্রমণ করার সরকারি পরামর্শ লিখিতভাবে জারি করিতেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মহিলা কর্মীদের এ দেশে যথেষ্ট ‘নিরাপদ’ পোশাক পরিবার পরামর্শ দিতেছে। ইহা ভারতের ভাবমূর্তির পক্ষে শ্লাঘনীয় নয়। মেয়েদের অমর্যাদার জন্য কেবল ধর্ষক বা আক্রমণকারীরাই দায়ী নয়। এখানে খাপ পঞ্চায়েতের মাতব্বর হইতে শুরু করিয়া রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা-বিধায়করাও ধর্ষিতা নারীর দিকেই সচরাচর অভিযোগের আঙুল তুলিতে অভ্যস্ত। ভারতীয় পিতৃতন্ত্র তাঁহাদের ধর্ষিতার পোশাক লইয়া প্রশ্ন তুলিতে শেখায়। ফলে মহিলাদের জন্য পথঘাট নিরাপদ করিয়া তোলা কিংবা মহিলাদের সম্ভ্রমহানিতে উদ্যত দুষ্কৃতীদের শাস্তি দিবার অবশ্যকর্তব্যটি বিস্মৃতই থাকে। ধর্ষকদের শাস্তি অপেক্ষা ধর্ষিতার পোশাক ও আচরণের শালীনতা সম্পর্কে নিজেদের প্রমাদকে গুরুত্ব দিতে অভ্যস্ত এই পরাক্রমী পুরুষরাই দেশের মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ, পঞ্চায়েতপ্রধান। এই দুঃশাসনদের হাতে নারীর সম্ভ্রমরক্ষার ভার থাকিলে পাঞ্চালীরা তো জনাকীর্ণ রাজসভায় সমবেত ধিক্কার ও অপমানের শিকার হইবেনই। উপরন্তু তাঁহারা যদি হন বিদেশিনি এবং পর্যটক, হাতেনাতে অনাচারের প্রতিকার করিতে অপারগ, তবে তো দুষ্কৃতীদের পোয়াবারো। ভারতীয় সমাজ এখনও যে আদিম পিতৃতন্ত্র অনুশীলন করে, যে প্রতিক্রিয়াশীল, বৈষম্যনির্ভর মূল্যবোধ তাহার আধুনিকতার অন্তরাল হইতে নিয়ত উঁকি দেয়, নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের ভবঘুরেরাও তাহার বাহিরে নয়। তাই তাহারা অনায়াসে ডেনমার্কের মহিলা পর্যটককে এ ভাবে ধর্ষণ করিতে পারে। আর মনু-পরাশরের ভারত কেবল মহিলাদের জন্য রকমারি বিধিনিষেধ প্রণয়ন করিতে পারে, যাহাতে তাঁহারা অসূর্যম্পশ্যা থাকিয়া যান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.